হবিগঞ্জ প্রতিনিধি
নির্ধারিত সময়ে শেষ হয়নি হাওর প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজ
শঙ্কায় কৃষক, অনিয়মের অভিযোগ
গত বছরের চৈত্রের বন্যা এখনো তাড়িয়ে বেড়ায় হবিগঞ্জের কৃষকদের। অকাল বন্যার কথা স্মরণ হলেই আঁতকে উঠেন তারা। বাঁধ নির্মাণ ও মোরামতের জন্য নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলে ও হবিগঞ্জের হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ এখন শেষ হয়নি। তবে বাধ নির্মাণের ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে বলে দাবী করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। অপরদিকে এলাকাবাসি দাবী, এখন পর্যন্ত শেষে হয়েছে ৫০ ভাগ বাঁধ মেরামত ও নির্মাণের কাজ। এছাড়াও কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় অনেক কৃষক। নির্ধাতির সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় শংকায় রয়েছেন বিভিন্ন উপজেলার কৃষকরা।
গত বছরের চৈত্রের অকাল বন্যায় ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে হবিগঞ্জের বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ, লাখাই উপজেলাসহ কয়েকটি উপজেলায় প্রায় ৯০ ভাগের বেশি পাকা ও আধা পাকা ফসলি জমি তলিয়ে যায়। এর প্রতিকার হিসেবে গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়ে পরবর্তী আড়াই মাসের মধ্যে ৮০ কিলোমিটার বাঁধ মেরামতের জন্য কাবিটা প্রকল্প গ্রহণ করে পাউবো। তবে তাদের দাবি ১০ কোটি টাকা হলেও বরাদ্দ মিলেছে মাত্র পৌনে তিন কোটির কিছু বেশি। এদিকে কাবিটা অনুযায়ী ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ গত বছরে ১৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়ে চলতি বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি কাজ সমাপ্ত হওয়ার কথা থাকলেও এখনো শেষ হয়নি বলে জানায় পাউবো।
হবিগঞ্জ কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলায় প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার ৭০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষাবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যমাত্রা বানিয়াচং উপজেলায়। এ উপজেলায় বোরো চাষ করা হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে। বোরো আবাদের সঙ্গে জেলায় যুক্ত আছে ২ লাখ ৮০ হাজারেরও অধিক কৃষক।
এদিকে, শহরতলীর চানপুর গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান জানান, বাঁধ নির্মাণে নিয়ম নীতিমানা হচ্ছে না। অনেক জায়গায় বাঁধ দুর্বল রয়েছে। দুর্বল স্থানে অল্প মাটি দিয়েই কাজ সম্পন্ন করা হচ্ছে। তাই এবারও তারা ফসলহানির আশংকা করছেন।
যশেরআব্দা গ্রামের শাহজাহান মিয়া অভিযোগ করে জানান, ‘বাঁধ নির্মাণে ড্রয়িং (নকশা) অনুযায়ী কাজ করা হয়নি। কাজে অনেক স্থানেই ত্রুটি রয়েছে। যেভাবে কাজ করা হচ্ছে খোয়াই নদীতে বন্যা আসলে আবার বাঁধ ভাঙ্গার আশংকা থেকেই যায়।’ তাই একটি মজবুত ও শক্তিশালী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান তিনি।
বানিয়াচং উপজেলার মুরাদপুর গ্রামের কৃষক মোস্তফা মিয়া জানান, বাঁধ মেরামতের জন্য নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও এখনও কাজ শেষ না হওয়া আমাদের স্বস্তি নেই। এখন থেকে যদি বৃষ্টি শুরু হয় তা হলে ফসলহানির শংকা রয়েছে। সদর উপজেলার চানপুর কাশিপুর এলাকায় বাঁধ মেরামতের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার ফরুক আহমেদ জানান, তিনি ১০ লাখ টাকা প্রকল্পের একটি বাঁধ মেরাতমতের কাজ করছেন। আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
জেলার পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী তাওহীদুল ইসলাম জানান, এবার হবিগঞ্জে বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য ২ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পের কাজ চলছে। ৮০ কিলোমিটার কাজের জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হলে বরাদ্ধ এসেছে ২ কোটি ৮১ লক্ষ টাকা। যা দিয়ে বাধ মেরামত ও সংস্কার করা হচ্ছে। চলতি মাসের মধ্যে কাজ সমাপ্ত হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। এছাড়াও বাঁধ নির্মাণের অনিয়মের অভিযোগ পেলে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেও জানান এই প্রকৌশলী।
"