আশরাফুল আলম, সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ)

  ০৫ মার্চ, ২০১৮

সোনারগাঁয় কোটি টাকার সড়ক কাজে আসছে না মানুষের

সড়কের নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ঘেঁষে ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরে গ্রামীণ অবকাঠামো সংস্কার (কাবিখা) প্রকল্পের অধীনে ১ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়কটি ব্যবহার করছে না। সড়কটি বর্ষাকালে থাকে পানির নিচে, শুষ্ক মৌসুমে পরিত্যক্ত। এলাকাবাসীর অভিযোগ, অপরিকল্পিতভাবে সড়ক নির্মাণ করে সরকারের অর্থের অপচয় ও লুটপাট করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। সরেজমিনে গতকাল রোববার দেখা যায়, সড়কটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। স্থানীয় কেউ এ সড়ক ব্যবহার করছে না। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লাঙ্গলবন্দ সেতুর উপর থেকে তাকালে মনে হবে যেন নদের মাঝখান দিয়ে এ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দ বাজারের ঘাটে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে প্রতি বছর চৈত্রের শুল্ক তিথিতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা স্নান করতে আসে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ব্রহ্মপুত্র নদের যে স্থানে ¯স্নান করে তার উল্টো দিকে নদের পূর্ব পাশে সোনারগাঁ উপজেলা। ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে স্থানীয় প্রশাসন উপজেলার লাঙ্গলবন্দ সেতু থেকে ভায়া কালিগঞ্জ হয়ে নয়াগাঁও পর্যন্ত নদীর তীরে একটি সড়ক নির্মাণ করার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরে একটি আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০১৫ সালের ১২ নভেম্বর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ওই সড়কে ৩০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়।

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ওই সময়ে প্রতি টন চালের সরকারি মূল্য ছিল ৩৬ হাজার ৩৩৫ টাকা ৫০ পয়সা। সে হিসেবে ৩০০ মেট্রিক টন চালের দাম হয় ১ কোটি ৯ লাখ ৬৫০ টাকা। বরাদ্দ পাওয়ার পর বিগত ২০১৬ সালের ১০ জানুয়ারি সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু করে। একই বছরের ১৯ মার্চ কাজটি শেষ হয়। ৭৩০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৬ দশমিক ৫ মিটার প্রস্থের এ সড়কটিতে দুটি ভাগে ভাগ করে দুজন প্রকল্প কমিটির সভাপতি নির্বাচন করা হয়। এর মধ্যে স্থানীয় সনমান্দি ইউনিয়ন (ইউপি) সদস্য জয়নাল আবেদীন ও মোগরাপাড়া ইউনিয়ন ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেনকে সভাপতি করে দুটি কমিটির মাধ্যমে সড়কটি নির্মাণ করা হয়। সড়কটি ব্রহ্মপুত্র নদের একাংশ দখল করে নেওয়া হয়। এছাড়া মাত্র ৭৩০ মিটার দৈর্ঘ্যরে এ সড়কে বিপুল পরিমাণ টাকার ব্যয় নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসীরা।

স্থানীয় নয়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আবুল বাসারের অভিযোগ, এ সড়কের যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করেছে সরকার তার অর্ধেকও ব্যয় করা হয়নি। সরকারি অর্থ লুটপাট করার জন্যই এ সড়কটি নির্মাণ করেছে প্রশাসন। এত টাকা কোথায় ব্যয় হলো তদন্ত করা দরকার। এ সড়ক আমাদের কোনো কাজেই আসছে না। স্বাভাবিক বর্ষা ছাড়াও শুষ্ক মৌসুমেও এ সড়ক ব্যবহার করা যাচ্ছে না। কারণ এ সড়কটি সুবিধাজনক জায়গায় হয়নি।

সড়কের দুটি অংশের দুজন সভাপতি সাবেক ইউপি সদস্য জয়নাল আবেদীন ও আনোয়ার হোসেন এ ব্যাপারে জানান, আমরা ছিলাম নামে মাত্র সভাপতি আমাদের হাত দিয়ে কোনো অর্থ ব্যয় হয়নি। উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা আমাদের স্বাক্ষর নিয়ে তারাই কাজটি বাস্তবায়ন করেছিল। এখানে অর্থ লুটপাট হয়ে থাকলে তারাই করেছে আমরা এর সঙ্গে জড়িত নই।

পরিবেশবাদী সংগঠন (নির্ভীক) এর প্রধান সমন্বয়ক এটিএম কামাল জানান, প্রশাসনঅপরিকল্পিতভাবে সরকারি অর্থ লুটপাট করে ব্রহ্মপুত্র নদকে গলাটিপে হত্যা করেছে। বিষয়টির তদন্ত হওয়া উচিত। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নূর নবী জানান, এ সড়কের নির্মাণ কাজে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি। উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অনুমোদন নিয়েই সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছিল। এ সড়কটি সচল করার জন্য আরো উঁচু করা প্রয়োজন। আমরা শুষ্ক মৌসুমে এ সড়কে আরো অর্থ বরাদ্দ করার জন্য জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলাম কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে কোনো অর্থ বরাদ্দের অনুমোদন দেওয়া হয়নি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীনুর ইসলাম জানান, আমি এ উপজেলায় যোগদানের আগে সড়কটি নির্মাণ করা হয়েছিল। সড়কটি যদি অপরিকল্পিতভাবে ব্রহ্মপুত্র নদ দখল করে নির্মাণ করা হয়ে থাকে তবে সরেজমিন দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist