রেজওয়ান শরিফ, টাঙ্গাইল

  ০২ মার্চ, ২০১৮

বনের ভেতর ‘আলোর ভুবন’

চারদিকে গভীর অরণ্য। মাঝে মাঝে গারো-বাঙালীদের সম্মিলিত বসবাস। পার্শ্ববর্তী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টির দূরত্ব প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। এমতাবস্থায় এখানকার শিশুদের পড়াশোনার বিষয়টি অনুধাবন করে ২০০৮ সালে স্থানীয় কয়েকজন যুবকের প্রচেষ্টায় টাঙ্গাইলের মধুপুরের অরণখোলা ইউপির জাঙ্গালিয়া গ্রামের আনন্দ বাজার এলাকায় গড়ে তোলা হয় ‘আলোর ভুবন’ আদর্শ প্রাথমিক বিদ্যালয়টি।

সরেজমিনে ‘আলোর ভুবন’ বিদ্যালয় ঘুরে দেখা গেছে, বিদ্যালয়ের তিনদিকে ঘন জঙ্গল। এক পাশে কিছু বসতি। সেখানে একটি দুইচালা টিনের ঘরে দুই শিক্ষিকা পাঠদান করছেন। অপর একটি শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা সামনের মাঠে দুরন্তপণায় ব্যস্ত ছোট্ট একটি দু’চালা টিনের ঘরে একই সাথে তিনটি শ্রেণীর পাঠদান সম্ভব না হওয়ায় অন্য একটি শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মাঠের মধ্যে গাছের নিচে পাঠদান করতে হয়। ঘরের চারপাশের নিরাপত্তা বেষ্টনি বাঁশের চাটাই দিয়ে আটকানো হলেও অনেকাংশে তাও নেই। ফলে সামান্য ঝড় কিংবা বৃষ্টি হলেই চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় শিক্ষক ও শিশু শিক্ষার্থীদের।

পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রুকসানা বলে, তাদের যে শ্রেণী কক্ষটি রয়েছে সেটি ভেঙে গেছে। তাই একটু বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে। অনেক সময় বৃষ্টিতে ভিজে ক্লাস করতে হয়।

বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতাদের প্রধান উদ্যোক্তা জাহাঙ্গীর কবির বলেন, এখানে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করার সময় আশেপাশের অন্তত পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে কোন বিদ্যালয় ছিলো না। এখানকার গারো, বাঙালী শিশুদের পড়ালেখা প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়ে। কয়েকজন মিলে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেই। বনবিভাগ থেকে পাওয়া চুক্তি ভিত্তিক জমির কিছু অংশ বিদ্যালয়ের জন্য প্রদান করেন আব্দুস ছাত্তার নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি। বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ১০০/২০০ করে টাকা সাহায্য নিয়ে এই বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মশি চাম্বুগং বলেন, এই বিদ্যালয়ে প্রায় ১০০ শিশু শিক্ষার্থী রয়েছে। চারজন শিক্ষক মিলে পর্যায়ক্রমে সকাল শিফটে শিশু শ্রেণী, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর এবং দ্বিতীয় শিফটে তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণীর পাঠদান করে থাকি। এর জন্য আমাদেরকে ১৫শ’ থেকে ২ হাজার টাকা মাসিক সম্মানী দেওয়া হয়। শিশুদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে আমরা বেতনের কথা ভাবিনা। বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও মধুপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান যষ্ঠিনা নকরেক বলেন, বিদ্যালয়টি সরকারিকরণের জন্য চেষ্টা করছি। কিন্তু কোন অগ্রগতি হচ্ছে না। মধুপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু রেজাউল করিম বলেন, ইতিমধ্যে কয়েকটি বিদ্যালয়কে সরকারিকরণের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। তবে সেখানে ‘আলোর ভুবন’ বিদ্যালয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বিদ্যালয়টি সরকারিকরণের যোগ্যতা সম্পন্ন হলে আমরা যাচাই বাছাই করে সংশ্লিষ্ট দফতরে অনুমোদনের জন্য আবেদন করবো।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist