মহসীন শেখ, কক্সবাজার

  ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

দুদকে কক্সবাজার ডিসির প্রতিবেদন পেশ

কক্সবাজারের আবাসন প্রকল্প উত্তরণের দখলে ৪৭ একর সরকারি জমি

কক্সবাজার শহরে গড়ে উঠা জেলার বৃহৎ আবাসন প্রকল্প ‘উত্তরণ’র দখলে রয়েছে ৪৭ একর সরকারি খাস জমি। শুধু তাই নয়, এ আবাসন প্রকল্পটি বন ও নির্বিচারে পাহাড় কেটে গড়ে তোলা হয়েছে। গত ১১ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানো প্রতিবেদনে এসব উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে: সরকারি জমি দখল করে কিভাবে বিভিন্ন লোকজনকে বিক্রি করা হচ্ছে এ বিষয়ে আরো বেশি অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। উত্তরণ আবাসন প্রকল্পে দখলকৃত সরকারি জমি বিভিন্ন লোকজনকে বিক্রির বিষয়ে প্রতিবেদন চেয়ে দুর্ণীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে একটি চিঠি দেওয়া হয় কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে। ইয়ুথ এনভায়রণমেন্ট সোসাইটি (ইয়েস) কক্সবাজারের প্রধান নির্বাহী এম. ইব্রাহিম খলিল মামুনের আবেদনের প্রেক্ষিতে কমিশনের পক্ষ থেকে গত ১৫ নভেম্বর এ চিঠিটি পাঠায় পরিচালক এ কে এম জায়েদ হোসেন খান। ওই চিঠির প্রেক্ষিতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়।

প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, উত্তরণ গৃহায়ণ সমবায় সমিতি ‘উত্তরণ আবাসন প্রকল্প’ নামের একটি হাউজিং গড়ে তোলে। এ আবাসন প্রকল্পের দখলে বর্তমানে ৯৮ একর জমি রয়েছে। তার মধ্যে ৩৫ একর জমি ১৯৮৯ সালে ভূমি মন্ত্রণালয় শর্তসাপেক্ষে ৩০ বছরের জন্য সমিতিকে ইজারা প্রদান করা হয়ে ছিল। পরের বছরই ইজারার শর্ত ভঙ্গের দায়ে ভূমি মন্ত্রণালয় ওই ইজারা বন্দোবস্তি বাতিল করে। কিন্তু এ বাতিল আদেশের বিরুদ্ধে সমিতির পক্ষ থেকে উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়ে আসে। এদিকে এর ১৬ একর জমি একাধিক লোকজনের কাছ থেকে ক্রয় করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। বাকী ৪৭ একর সরকারী খাস জমি তারা অবৈধ ভাবে দখল করে রেখেছে।

প্রতিবেদনে উঠে আসে আরো ভায়ংকর তথ্যা। তাতে বলা হয়, উত্তর আবাসন প্রকল্পের পুরো এলাকাটি পাহাড়ী এলাকা। এক সময় এ পাহাড়ী এলাকাতে শিয়াল, বন্য হরিণ হাতি ও মেছো বাঘসহ বিভিন্ন বিরল প্রজাতির প্রাণীর বিচরণ ছিল। কিন্তু এ পাহাড়ী এলাকায় আবাসন প্রকল্প গড়ে তোলার নামে ২০০৫ সাল থেকে পাহাড় কাটা শুরু করে কক্সবাজার উত্তরণ গৃহায়ণ সমবায় সমিতি। দীর্ঘদিন ধরে ১০০ থেকে ১৫০ ফুট উঁচু পাহাড় কেটে ধ্বংস করা হয় ৫২,৫০০ বর্গফুট পাহাড়ী এলাকা। ফলে ওই এলাকা থেকে হারিয়ে যায় বিভিন্ন বিরল প্রজাতির প্রাণীর পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষতি হয় প্রাকৃতিক পরিবেশ ও প্রতিবেশের।

এ প্রসঙ্গে দুর্ণীতি দমন কমিশনের পরিচালক এ কে এম জায়েদ হোসেন খান বলেন, ‘কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদনটি হাতে পাওয়া গেছে, পর্যালোচনা করে পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।’

প্রতিবেদন পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) কাজী আব্দুর রহমান বলেন, ‘ প্রতিবেদনে উত্তরণ আবাসন প্রকল্প নিয়ে সব কিছু তোলে আনা হয়েছে। তবে সরকারী জমি বিক্রির বিষয়টি আরো অনুসন্ধান করা প্রয়োজন।’

জেলা প্রশাসনের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘ওই আবাসন প্রকল্পের দখলে থাকা সরকারী খাস জমিগুলো উদ্ধার করতে প্রশাসন ইতিমধ্যে কাজ শুরু করেছে।’

উত্তরণ গৃহায়ণ সমবায় সমিতির সম্পাদক ফরিদুল আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা সরকারি নিয়ম মেনে উত্তরণ আবাসন প্রকল্পটি করেছি, এখানে যে সরকারী খাস জমি দখলে রয়েছে তা লিজ পাওয়ার জন্য সরকারের কাছে আবেদন দেওয়া আছে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist