মামুন আহমেদ, বাগেরহাট

  ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

খুলনার মহিলা কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট

সংকটের বেড়াজাল : এখনো চালু হয়নি কয়েকটি ট্রেড

বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলার নানা সংকটে ভুগছে খুলনা বিভাগের একমাত্র মহিলা কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট। পিছিয়ে পড়া গ্রামীন জনপদের নারীদের আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষে ২০০০ সালে বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে তুলাতলা এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় মহিলা কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট। যা খুলনা বিভাগের একমাত্র মহিলা কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট হিসাবে পরিচিত। সম্পূর্ণ আবাসিক এ প্রতিষ্ঠানটির ২১টি পদের মধ্যে ১৪টি পদ শূন্য রয়েছে গত ১৪ বছর ধরে। ১৪টি পদের মধ্যে প্রশিক্ষক, হোস্টেল সুপার, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার মত গুরুত্বপূর্ণ পদও রয়েছে।

কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সকল প্রক্রিয়া শেষে এ ইনস্টিটিউটে ২০০৫ সালে কৃষি, পশুপালন, পোল্টি ও মৎস্য চাষ এ চারটি ট্রেড নিয়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০৬ সালের জুলাই মাসে প্রতিষ্ঠানটির প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পাঁচ বছর বন্ধ থাকার পর ২০১০ সালে জুলাইতে মৌ চাষ বিষয়ে সাতক্ষীরার ২০ জন উপজাতি নিয়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়। নতুন করে ২০১১ সাল থেকে কম্পিউটার, বিউটিফিকেশন, ড্রেস মেকিং অ্যান্ড টেইলারিং প্রশিক্ষণ শুরু হয়। যা এখনও চলছে। শুরুর চারটি ট্রেড ও মৌচাষ কোনটিই এখন চালু নাই। এসব ট্রেডের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো থাকা স্বত্ত্বে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম নাই। যে চারটি ট্রেডে প্রশিক্ষণ চালু আছে সেগুলোতেও প্রয়োজনীয় জনবল ও যন্ত্রপাতি নাই। হোস্টেলে নিম্নমানের খাবার, ল্যাবে কম্পিউটার না থাকা, বিদ্যুৎ ও বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে প্রতিষ্ঠানটিতে। বিদ্যুৎতের সমস্যায় সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ নিতে পারেন না প্রশিক্ষণার্থীরা।

প্রতিষ্ঠানটির কম্পিউটার প্রশিক্ষাণার্থী সুমাইয়া আক্তার বলেন, অনেক স্বপ্ন নিয়ে কম্পিউটার শিখতে এসেছি। এখানে এসে বেশ কিছু সমস্যা আছে। ত্রিশজন প্রশিক্ষণার্থী, মাত্র ছয়টি কম্পিউটারে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। এরমধ্যে দু-একটি কম্পিউটার প্রায়ই নষ্ট থাকে। যার কারণে আমরা পর্যাপ্ত ব্যবহারিক করতে পারি না। জোসনা আক্তারসহ একাধিক প্রশিক্ষাণার্থীরা বলেন, এখানে যারা আছেন তারা খুবই আন্তরিকতার সাথে আমাদের প্রশিক্ষণ দেয়। এখানে নিরাপত্তাজনিত সমস্যা নাই। তবে হোস্টেলে খুবই নিম্নমানের খাবার খাওয়ানো হয়। হোস্টেলে স্থায়ী কোন বাবুর্চি নাই। অস্থায়ীভাবে নিয়োগকৃত যে আছে তাকে রান্নার কাজে আমাদের সহযোগিতা করতে হয়। যে কারণে প্রশিক্ষণের ক্ষতি হয়। এছাড়াও খাবার পানির উৎস একটি পুকুর আছে, যা শীত মৌসুমে শুকিয়ে যায়। খাবার পনির জন্য বিকল্প ব্যবস্থার দাবি কারণে শিক্ষার্থীরা।

প্রতিষ্ঠানটির সহকারী পরিচালক প্রশিক্ষণ ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. মোখলেচুর রহমান বলেন, বিভিন্ন জটিলতার কারণে প্রশিক্ষাণার্থীদের সব ধরনের সুযোগ সুবিধা দিতে পারছি না। প্রতিষ্ঠান শুরুর সময় যে উপকরণ ছিল এখনও সেই উপকরণে চলছে। এখন পর্যন্ত নতুন কোনো প্রশিক্ষণ উপকরণ পাইনি। প্রয়োজনীয় উপকরণ না থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে যাচ্ছে। গবাদি পশু, হাস-মুরগি পালন ও মৎস্য চাষ প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো থাকা স্বত্তেও আমরা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালাতে পারছি না। প্রতিষ্ঠানটির প্রয়োজনীয় অনেক পদই শুন্য রয়েছে। এ ধরনের একটা ইনস্টিটিউটে হোস্টেল সুপার নাই, হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তাসহ অনেক পদই শূন্য রয়েছে। যার কারণে মূল কাজ ব্যাহত হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, একজন শিক্ষার্থীর ৯০ টাকায় একদিন খেতে হয় এটা কষ্টকর। ১৭ বছরের আগের বাজেট এখনও চলমান। ১৭ বছরের আগের বাজার দর আর এখনের বাজার দর এখন আকাশ পাতাল ব্যবধান। যার কারণে প্রশিক্ষণার্থীদের মানসম্মত খাবার সরবরাহ করতে পারি না। এসব সমস্যার মধ্যেও এখান থেকে ১ হাজার ৫৭৪ জন নারী প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এদের মধ্যে অনেকে নিজে প্রতিষ্ঠান করে কাজ করছে। আবার অনেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন।

বাগেরহাট জেলা প্রশাসক তপন কুমার বিশ্বাস এ বিষয়ে বলেন, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান প্রধানের সাথে কথা বলে সংকটের বিষয়টি যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে সমস্য সমাধানের জন্য চেষ্টা করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist