মাধবপুর (হবিগঞ্জ) ও আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি

  ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

টমেটোর কেজি এক টাকা, করলা দুইশ

হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুরের মাঠে মাঠে লাল তরতাজা টমেটো। কিন্তু এ টমেটোই এখানকার কৃষকদের জন্য গলাকাটা। হিমাগার না থাকাসহ নানা সমস্যার কারণে টমেটো কেজি এখন অবিশ্বাস্য হলেও মাত্র এক টাকা।

মাধবপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলার মাধবপুর উপজেলায় ২৫০ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২২০ হেক্টর নিধারর্ণ করলেও ফলন হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৩০ হেক্টর।

উপজেলার ঘুরে দেখা গেছে, বোরো মৌসুম শুরু হওয়ায় মাঠে ধানের চারা লাগানোর তোড়জোড় শুরু হয়েছে। এছাড়া স্থানীয়ভাবে টমেটো সংরক্ষণাগার (হিমাগার) না থাকায় ক্ষেত থেকেই চাষিরা টমেটো কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে টমেটো চাষ করে ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে চাষিদের। টমেটো চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় এক মাস ধরে জমি থেকে টমেটো তোলা শুরু হয়েছে। প্রথম দুই সপ্তাহ দাম প্রতি কেজি ১৫ থেকে ২০ টাকা করে পাওয়ায় বেশ খুশি ছিল চাষিরা। কিন্তুু পরের সপ্তাহে ১০ টাকা, এরপর সাত টাকা নেমে আসে। গতকাল সোমবার টমেটোর দাম প্রতি কেজি এক টাকা ও উন্নত জাতের টমেটো সর্ব্বোচ দুই টাকা।

মাধবপুর উপজেলার চৌমুহনী ইউনিয়নের গোপিনাথপুর গ্রামের কৃষক আবুল খায়ের প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, গত রোববার ক্ষেত থেকে দুই টাকা করে টমেটো বেচতাছি। ধান লাগাইতে টাকা লাগবো, তাই কম দামে বেচন ছাড়া উপায় নাই।’ একই ইউনিয়নের রাজনগর গ্রামের কৃষক ফরিদ মিয়া জানান, টমেটো চাষ করে ভালো ফলন হয়েছে। কিন্তুু ভালো দাম পাচ্ছি না। কিস্তিতে টাকা তুলে অন্যের দেড় বিঘা ধার নিয়ে টমেটো চাষ করেছি। টমেটো ভালো হয়েছিল। কিন্তুু টমেটোর দাম খুবই কম। ‘মনে হচ্ছে টমেটো বিক্রি করে কিস্তির টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হবে না। বড়ই চিন্তায় আছি। ’

খুচরা ব্যবসায়ী পাপন মিয়া বলেন, প্রায় দেড় মাস আগে পাইকারদের থেকে ২৫-৩০ টাকা করে টমেটো কিনতে হতো। আর খরচ বাদ দিয়ে খুচরা বিক্রি করতাম ৩৫-৪০ টাকায়। আর এখন ২-৪ টাকায় কিনে বিক্রি করছি পাঁচ টাকায়। টমেটোর দাম একেবারে পড়ে গেছে। ঢাকা থেকে আসা টমেটোর পাইকার রিপা জোয়ারদার বলেন, এ সময় কৃষকদের কাছ থেকে ২০০ থেকে ২৪০ টাকায় প্রতি মণ টমেটো কিনতাম। এখন প্রতি মণ ৩৫-৪০ টাকায় কিনছি। সেজন্য বেশি টমেটো কিনলাম না।

মাধবপুর উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা অর্ধেন্দু দেব অসিত বলেন, চলতি বছর পর্যাপ্ত সার অনুকূল পরিবেশ পাওয়ায় গত বছরের চেয়ে এ বছর টমেটোর বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তুু কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছে না। আমাদের পরামর্শ হল, যদি স্থানীয়ভাবে টমেটো সংরক্ষণাগার করা যায়, অথবা চাষিদের সংরক্ষণ প্রযুক্তিটা বুঝাতে পারা যায় বা সংরক্ষণ করে কিছু দিন পরে বিক্রি করতে পারলে চাষিদের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। দ্বিতীয়ত কোনো আগ্রহী ব্যক্তি টমেটো প্রসেসিং করার জন্য যদি বিভিন্ন খাবার তৈরি করার জন্য এগিয়ে আসেন, তবে কৃষকরা ন্যায্য মূল্য পাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। তিনি বলেন, এখানে একটি হিমাগার স্থাপন করা হলে কৃষকরা উপকৃত হবেন। আশা করি দ্রুতই একটি হিমাগার নিমার্ণ করবে সরকার।

আড়াই মণ টমেটোতে মিলছে না এক কেজি করলা : আদমদীঘি (বগুড়া) প্রতিনিধি জানান, আদমদীঘির হাটবাজারে টমেটোর দামে ধস নেমেছে তবে বেড়েছে করলার দাম। আড়াই মণ টমেটোতেও মিলছেনা এক কেজি করলা। ফলে অধিকাংশ মানুষই করলা কিনতে পারছেনা।

গতকাল বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিকেজি আলু ১০ টাকা, বেগুন ২০ টাকা, সিম ৩০ টাকা, গাজর ২০ টাকা এবং টমেটো মাত্র ২ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। করলার দাম প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে দুইশত টাকা মূল্যে। কাঁচামাল ব্যবসায়ী রশিদুল, খালেক ও হজরত আলী জানায়, সম্প্রতি শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার কারণে করলার গাছে ব্যকটেরিয়া আক্রান্ত হয়ে অধিকাংশ আবাদ নষ্ট হয়। আবার আমদানিও কম হওয়ায় করলার দাম বেড়েছে। দুইদিন আগে করলা বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা থেকে একশত টাকা কেজিতে। আর এখন দুইশত টাকা। কেজি মূল্যে। টমেটো বিক্রেতা কৃষক আলতাফ আলী খা জানায়, সে আড়াই মণ টমেটো বাজারে বিক্রি করে মাত্র দুইশত টাকায়, কিন্তু সেই টাকায় এক কেজি করলা মিলছেনা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist