নীলফামারী প্রতিনিধি

  ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

তিস্তার খাল পানিতে টইটম্বুর আটঘাট বেঁধে মাঠে কৃষকরা

‘গেল বার পোকায় শ্যাষ কইচ্ছে। দুই বিঘাত নাগাইছিনো, লাভ করিরে পাই নাই, দেখি এইবার কি হয়। লাভের আশা তো করিবারে নাগিবেই’- বলছিলেন নীলফামারী সদর উপজেলার ইটাখোলা ইউনিয়নের উত্তর কানিয়ালখাতা গ্রামের কৃষক নিরানন্দ রায়। তিনি আরও বলেন, ‘এক বিঘা জমিত বীছোন থাকি শুরু করি কাঁটা পর্যন্ত ছয় হাজার টাকার উপোরোত খরচ হয়। ব্যাঁেচর সময় দেখা যায় ধানের দামে নাই। এইবার তিন বিঘাত নাগাইনো, যা আছে হইবে কপালোত।

একই এলাকার আরেক কৃষক রোস্তম আলী। পাঁচ বিঘা জমিতে লাগাচ্ছেন ইরি-বোরো ধানের চারা। গেল মৌসুমে লোকসানের কথা মাথায় রেখে লাভের আশায় এবারও জমিতে স্বপ্ন বুনছেন। আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘কারেন্টের দাম বাড়ি গেইছে, সেচের খরচ বাড়িছে, বেশি টাকা দিয়াও শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি অভিযোগ করেন, হামরা চারা নাগাইছি। বিএসগুলাক খুঁিজও পাওয়া যায় না। পোকা ধরিলে পরামর্শ নেমো, সেটাও জানিবার পাই না। এ রকম নানা শংকা নিয়ে মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন নীলফামারীর কৃষকরা। কোথাও বীজ তোলা, কোথাও হাল চাষ, কোথাও সেচ দেওয়া আবার কোথাও চারা রোপণের কাজ চলছে জেলার প্রান্ত জুড়ে। এমন চিত্র দেখা গেছে নীলফামারী শহরের মধ্য হাড়োয়া, কুখাপাড়া, কুন্দপুকুর, চড়াইখোলা, ইটাখোলা, টুপামারী, কচুকাটা, লক্ষ¥ীচাপ, চাপড়া সরমজানী, চওড়া বড়গাছা, পলাশবাড়ি, খোকশাবাড়িসহ ডোমার উপজেলার সোনারায়, ডিমলা উপজেলার বালাপাড়া, জলঢাকা উপজেলার টেঙ্গণমারী, কিশোরগঞ্জ উপজেলার পুটিমারী, নিতাই, গাড়াগ্রাম ও সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ি, কাশিরাম বেলপুকুর ও কামারপুকুর ইউনিয়ন ঘুরে। মাঘের কনকনে শীত উপেক্ষা করে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইরি বোরো আবাদে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন কৃষকরা। সচরাচর হাজিরা ভিত্তিতে দৈনিক কাজ করলেও পুরোনো পরিচিতি হারিয়েছে এই সময়ে। দলবদ্ধ হয়ে চুক্তিভিত্তিক জমিতে চারা রোপন করে দিচ্ছেন শ্রমিকরা। এমন চিত্র চোখে পড়েছে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে। ইটাখোলা ইউনিয়নের কানিয়াল খাতা তিস্তা সেচ ক্যানেল সংলগ্ন এলাকায় ৭/৮ জনের দল রোপন করছেন ইরি বোরো চারা। বিঘা প্রতি এক হাজার টাকা চুক্তিতে কাজ করছেন তারা। লাগাবেন ছয় বিঘা জমিতে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নীলফামারী উপ-পরিচালকের কার্যালয় সুত্র জানায়, জেলায় ৮৪ হাজার ২৭৯ হেক্টর জমিতে এবার ইরি- বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে এবারে। আর চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিনলাখ ৫৭ হাজার ৩৫৮ মেট্রিক টন। আবাদের ভরা মৌসুমে সেচের জন্য ৩২৮টি গভীর নলকূপ, ২৬ হাজার অগভীর নলকূপ ব্যবহার করছেন কৃষকরা। লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হওয়া জমিতে আবাদের জন্য বীজতলা করা হয়েছিলো চার হাজার ৯৭০ হেক্টর জমিতে। কৃষকরা জমি তৈরি, বীজ তোলা, সেচের ব্যবহারসহ চারা রোপণে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বলে জানান রাকিব আবেদীন। জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর নীলফামারীর উপ-পরিচালক আবুল কাশেম আযাদ জানান, জেলার সর্বত্রই চলছে কৃষকদের আবাদের ব্যস্ততা। আবহাওয়া ভালো থাকায় বেশ জোড়েশোরে চলছে চারা রোপণের কাজ।

ইতিমধ্যে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকেরও বেশি জমিতে চারা লাগানো হয়েয়ে জানিয়ে তিনি বলেন, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বাকি জমিগুলোতে চারা লাগানোর কাজ শেষ হবে। পুরো ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে এবং মার্চ মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত ইরির বোরোর চারা লাগানো চলবে বলে জানান তিনি। এদিকে তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো আবাদ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া সুত্র। প্রকল্প এলাকার নীলফামারী, রংপুর ও দিনাজপুর জেলার ১২টি উপজেলায় রেশনিং পদ্ধতিতে সেচ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে দফতরটি।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ডালিয়া বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, তিস্তা সেচ প্রকল্পে ২হাজার কিউসেক পানি রয়েছে। যা দিয়ে কমান্ড এলাকায় নির্বিঘেœ সেচ কার্যক্রম চালানো যাবে। তবে লক্ষ্যমাত্রা আরো বাড়তে পারে বলে জানান তিনি। ডিভিশনের সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রাফিউল বারী জানান, প্রকল্পের আওতায় ১০০ কিলোমিটার প্রধান খাল, ২৫০ কিলোমিটার সেকেন্ডারি খাল এবং ২৮০ কিলোমিটার টারশিয়ারি খাল রয়েছে।

ভরা এই মৌসুমে তিস্তা সেচ ক্যানেলে টাইটুম্বুর পানি দেখে বেশ খুশি কৃষকরা। তাদের দাবি, এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে এবার আর কৃষকদের সেচ নিয়ে বিপাকে পড়তে হবে না। ইটাখোলা ইউনিয়নের কানিয়াল খাতা গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ জানান, এবারে সাত বিঘা জমিতে বোরো করেছি। এখন সেচের কোন সমস্যা হচ্ছে না। ক্যানেলে অনেক পানি। জমিতেও দিচ্ছি। আমরা চাই ক্যানেলটি এভাবেই থাক যাতে আবাদের সময় কৃষকরা ছুটোছুটি না করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist