বাগেরহাট প্রতিনিধি
অবহেলায় পড়ে আছে অযোধ্যা মঠ
অযতেœ আর অবহেলায় রয়েছে বাগেরহাটের ঐতিহ্যবাহী অযোধ্যা মঠ। মঠের উপরিভাগে বেড়ে উঠেছে পরগাছা ও সংস্কারের অভাবে ঝুুঁকিতে রয়েছে মূল্যবান প্রাচীন এ স্থাপনাটি। বাগেরহাট সদর উজেলার যাত্রাপুর বাজার থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দূরে বারুইপাড়া ইউনিয়নের ভৈরব নদীর পূর্ব তীরে কোদলা গ্রামে অবস্থিত ঐত্যিবাহী এ মঠটি। প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের তালিকায় থাকা সংরক্ষিত পুরাকীর্তি হলেও প্রাচীন এ মঠটি দেখতে আসা পর্যাটকদের জন্য নেই নূন্যতম কোনো সুবিধা। আর এ কারণে স্থাপত্য নান্দনিকতায় এটি দেশের সবচাইতে সুন্দর মঠ হলেও এখানে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীরা পড়ছেন নানা বিড়ম্বনায়।
‘অযোধ্যার মঠ’ নামেই বেশি পরিচিত মঠটি। তবে ‘কোদলা মঠ’ নামও পরিচিতি আছে। কোদলা পার্শ্ববর্তী গ্রামের নাম বই-পুস্তক ও বিভিন্ন লেখালেখিতে অযোধ্যা নামটির পাশাপাশি কোদলা মঠ নামটি বেশি ব্যবহৃত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ প্রতœœতত্ব অধিদপ্তর তাদের বিভিন্ন নির্দেশিকায় একে কোদলা মঠ নামেই লেখা হয়।মঠে প্রবেশের মোট তিনটি পথ। ধারণা করা হয় দক্ষিণ দিকের প্রবেশ পথটি ছিল মূল ফটক। বাকি দুইটি পূর্ব ও পশ্চিম দিকে। প্রবেশ পথগুলো মুলত ‘করবেল’ (পরপর ইট সাজিয়ে) পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়েছে। কবে, কে এ মঠ নির্মাণ করেছিলেন তার সঠিক কোনো তথ্য না পাওয়া গেলেও বাগেরহাট প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ঐতিহ্যবাহীএ মঠটি সপ্তদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে নির্মিত। বহুকাল আগে মঠের দক্ষিণ কার্নিসের নিচে প্রায় অদৃশ্যমান দুই লাইনের একটি ইটে খোদাই করা লিপি অনুযায়ী দেবতার অনুগ্রহ লাভের আশায় কোনো এক ব্রাহ্মণ মঠটি নির্মাণ করেছিলেন। তবে জনশ্রুতি আছে যশোরের রাজা প্রতাপাদিত্য তার সভাসদ গৃহের প-িত অবিলযম্বা সরস্বতীর স্মৃতির উদ্দেশ্যে মঠটি নির্মাণ করেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, মঠটির দেয়ালে লাল রংঙের ইটের উপর খোদাই করা কারুকাজগুলোতে অযতœ আর অবহেলায় শ্যাওলা পড়েছে। মঠে প্রবেশের দরজার উপরের অংশে পোড়া মাটিতে আকর্ষনীয় অলংকার করা বেশ কয়েকটি ইট নষ্ট হয়ে গেছে। কয়েকটি স্থানে ইটের উপর খোদাই করা কারুকাজ গুলো নষ্ট হয়ে নিচে পড়ছে। মঠের উপর জন্ম নেওয়া পরগাছার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেয়াল। মঠের দ্বায়িত্বে থাকা সামছুল আলম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মঠের উপরে জন্ম নেওয়া পরগাছাগুলো পরিষ্কার করার জন্য কোনো উদ্দ্যোগ নেওয়া হয়নি। যে কারণে পরগাছার শিকড়ে মঠের দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এগুলো মঠের উপরে অংশে হওয়ার প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে তা কেটে ফেলা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি সম্পর্কে খুলনা প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর অবগত ধাকলেও পরগাছাগুলোর ব্যাপারে তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সংস্কার কাজ না করার কারণে অলংকার খোদাইকৃত অনেকগুলো ইট নষ্ট হয়ে গেছে।
এছাড়া রাতে এখানে কোনো আলোর ব্যবস্থা নেই। বেড়াতে আসা পর্যটকদের নেই নূন্যতম সুযোগ সুবিধা। কোনো হোটেল ও বাথরুম না থাকায় বিশেষ কোনো দিন ছাড়া দর্শনার্থীরা খুব কম আসে।
যশোর থেকে অযোধ্য মঠ দেখতে আসা খায়রুজ্জামান বলেন, অযোধ্য মঠ সম্পর্কে বইতে অনেক পড়েছে কিন্তু বাস্তবে দেখা হয়নি। তাই সময় পেয়ে ঐতিহ্যবাহী এ মঠটিকে দেখতে আসা। কিন্তু এখানে আসার পর সমস্যায় পড়ে গেছি। মঠের আশপাশের কোনো খাবার হোটেল বা দোকান না থাকায় মঠটি ভালোভালে ঘুরে না দেখেই ফিরে যেতে হচ্ছে। অযোধ্য মঠ দেখতে আসা বাগেরহাটের রামপাল উপজেলা বাসিন্দা মিলি আক্তার বলেন, নিজ জেলাতে ঐতিহ্যবাহী এ মঠটি থাকলে সময় সল্পতার কারণে দেখতে আসা হয়নি। তাই সময় বের করে মঠটি দেখতে আসা। তবে এখানে আসার পর কোনো বাথরুম না থাকায় বিড়াম্বনায় পড়েছি। এ কারণে অল্প সময় থেকে আবার ফিরে যেতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাগেরহাট জাদুঘরের কাস্টডিয়ান গোলাম ফেরদাউস বলেন, খুলনা প্রততœত্ত্ব অধিদপ্তরের একজন উপ-প্রকৌশলী ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি অযোধ্য মঠটি ব্যাপক সংস্কার করার জন্য একটি প্রাককলন তৈরি করেছেন। আশা করি চলতি বছরের মধ্যে কাজ শুরু হতে পারে।
"