তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি

  ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮

ডাহুক নদীতে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন, কৃষকের মাথায় হাত

ভূমিধসের আশঙ্কা ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ

পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলায় ড্রেজার মেশিন দিয়ে ডাহুক নদী থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন চলছে। ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে একের পর একর সমতল ও আবাদি জমিতে গভীর খাদ তৈরি করে পাথর উত্তোলনের ফলে পরিবেশ বিপর্যের দিকে যাচ্ছে। অন্যদিকে ডাহুক নদীতে বাঁধ দিয়ে ৩০টি স্থানে বড় বড় গর্ত করে পাথর উত্তোলনের ফলে নদী নাব্য হারাতে বসেছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার শালবাহান বালাবাড়ী, বুড়াবুড়ি ও ভজনপুর গনাগছসহ বেশকিছু স্থানে একরের পর একর জমিতে উত্তোলন করা হচ্ছে অবৈধভাবে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ড্রেজার মেশিনে পাথর। শালবাহান বালাবাড়ির ডাহুক নদীতে ৩০ থেকে ৪০ মিটার বিশাল গর্তের পরিমাণ অনেক। এসব গর্তের বালিতে বাধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে নদীটির পানি প্রবাহ। এলাকার প্রভাবশালীরা পরিবেশকে হুমকির মুখে ফেলে মেতে উঠেছে পাথর উত্তোলন উৎসবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয়রা জানান, মাঝিপাড়া ডিগ্রি কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাহেদ আলীসহ বেশ কয়েকজন সরকারি দলের ব্যক্তিবর্গ ডাহুক নদীর বুক চিরে পাথর উত্তোলন করছেন। এতে বালাবাড়ীর উজানে বুড়াবুড়ির ইউপির সরকারপাড়া, চড়কডাঙ্গী, হারাদিঘী এবং শালবাহান ইউনিয়নের রওশনপুরের কৃষকরা পড়েছেন বিপাকে। উজানের পানি বেড়ে যাওয়ায় নদী সংলগ্ন তাদের জমিতে তারা চাষাবাদ করতে না পারায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এ ব্যাপারে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্ত এক কৃষক আব্দুর রশিদ প্রতিদিনের সংবাদ বলেন, ‘নদীর মধ্যে বাঁধ দিয়ে পাথর তোলায় আবাদি জমি আমরা চাষ করতে পারছি না। অন্যদিকে বেশি পানিতে বীজতলা ডুবে গেছে। আমাদের অল্প জমি, চাষাবাদ করতে না পারলে ধান পাব কোথা থেকে?’

তিনি আরও বলেন, এ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা গত ৩১ জানুয়ারি পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ করে। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে ৩১ জানুয়ারি তেঁতুলিয়া নির্বাহী কর্মকর্তা, পুলিশ ও বিজিবির সহায়তায় অভিযান চালিয়ে ১৩টি সাইট বন্ধ করেন এবং এর সঙ্গে জড়িত থাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের বুড়াবুড়ি ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামু, জিয়াউর রহমান, আলম হোসেন, পঞ্চগড় সদর উপজেলার টিটিহিপাড়া এলাকার সাইফুল ইসলাম, তেঁতুলিয়ার হাওয়াজোত এলাকার শহিদুজ্জামান ও রওশনপুর এলাকার রুবেল ইসলাম নামের ৬ ব্যক্তিকে দুই মাস কারাদ- প্রদান করা হয়। এদিকে, ভজনপুর গনাগছ গ্রামে পাথর উত্তোলনে ব্যবহৃত সাতটি বোমা মেশিনে আগুন লাগিয়ে ধ্বংস করা হয়। সরেজমিন আরও দেখা যায়, উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউপির কাটাপাড়া এলাকায় নারায়নগঞ্জ বিদ্যালয় হতে ছয়শ ফুট দূরে মতিয়ারের বাড়ি হতে ভেরসা নদী পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তা ভেঙে পড়ার উপক্রম। রাস্তাটির পাশে পাথর সাইট করে পাথর উত্তোলনের ফলে ১২ ফিটের রাস্তাটি ছয় ফিটে পরিণত ও গভীর খাদ সৃষ্টি হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে ধসে পড়ার আশঙ্কার করছেন এলাকাবাসী। এলাকার বাদশা সোলায়মান, মকসেদ, নজরুলসহ বেশকয়েক স্থানীয় অসাধু চক্র রাস্তা কেটে পাথর সাইট বানিয়ে রমরমা পাথর উত্তোলন করছেন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে এভাবে গভীর খাদ করে পাথর উত্তোলন, পরবর্তীতে খাদ ভরাট না করায় পরিবেশ বিপর্যয়ের হুমকির মুখে পড়তে পারে তেঁতুলিয়া এমনি আশঙ্কার কথা জানাচ্ছেন পরিবেশবিদরা। এ বিষয়ে পঞ্চগড় সরকারি মহিলা কলেজের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান তৌহিদুল বারী বাবু প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ড্রেজার মেশিন দিয়ে ডাহুক নদী থেকে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনে করে নদীর প্রবাহ বন্ধ করলে একদিকে মরুকরণ হবে, অন্যদিকে স্থায়ী জলাবদ্ধতা তৈরি হবে। জীববৈচিত্র্য ক্ষতি হবে। এ জন্য প্রশাসনকে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। অবৈধ সাইট বন্ধ করে নিয়মিত পুলিশি টহলের ব্যবস্থা করতে হবে। তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. সানিউল ফেরদৌস বলেন, কিছু লোকজন নদী দখল করে পাথর তুলছে। তারা একেবারে বেপরোয়া হয়ে গেছে। ‘আমরা এর আগে বারবার অভিযান চালিয়েছি এবং ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দিয়েছি। নদীগুলো রক্ষা করতে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ আমরা অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করতে দিব না।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist