আশরাফুল আলম, সোনারগাঁ (নারায়ণগঞ্জ)
দুই বছরেই রাবার ড্যাম নষ্ট ব্যাহত ইরি-বোরো চাষ
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার সনমান্দি, সাদিপুর ও নোয়াগাঁও ইউনিয়নের কয়েক হাজার কৃষক পরিবারের জন্য ইরি ও বোরো ধান চাষে সেচ ব্যবস্থার সুবিধার্থে ২০০৪ সালে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর রাবার ড্যাম স্থাপন করা হয়। এটি দেশে নির্মিত অষ্টম রাবার ড্যাম। রাবার ড্যাম স্থাপনের দুই বছরের মাথায় ড্যামটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় দীর্ঘদিন যাবৎ স্থানীয় কৃষকরা এর সুফল থেকে বঞ্চিত ও ব্যাহত হচ্ছে ইরি ও বোরো ধান চাষ।
সরেজমিন অলিপুরা বাজার এলাকায় গিয়ে জানা যায়, উপজেলার সনমান্দি ইউনিয়নের অলিপুরা বাজারের পাশে ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর ২০০৪ সালে ৫৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩ দশমিক ৮ মিটার উঁচু রাবার ড্যামটি স্থাপন করা হয়। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডির) অধীনে এই রাবার ড্যাম এবং এর পাশে ১৪৪ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৪ দশমিক ২৬ মিটার প্রস্থের একটি সেতু নির্মাণ করতে সরকারের প্রায় পাঁচ কোটি টাকা ব্যয় হয়।
এলজিইডির নারায়ণগঞ্জের তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী ও বর্তমানে এলজিইডির সদর দপ্তরের প্রকল্প পরিচালক মোসলেহ উদ্দিন জানান, রাবার ড্যামটি তৈরি করা হয়েছিল মূলত উপজেলার সনমান্দি, সাদিপুর ও নোয়াগাঁও ইউনিয়নের ৩৫টি মৌজার ১ হাজার ৫৫৮ হেক্টর ইরি, বোরো ধানের জমিতে সেচের পানি সরবরাহ করার জন্য। সে সময় মন্ত্রণালয়ে অনেক দৌড়ঝাঁপ করে এই প্রকল্পটি আমরা বাস্তবায়ন করেছিলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় কৃষকরা ১২ বছর ধরে সেচ ব্যবস্থার কোন সুফল পাচ্ছেন না। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে।
উপজেলার কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সনমান্দি, সাদিপুর ও নোয়াগাঁও তিনটি ইউনিয়নের ইরি, বোরো ধানের জমিতে সেচের পানি সরবরাহ করার জন্য রাবার ড্যামটি স্থাপন করা হয়। পরে রাবার ড্যামটি দেখাশোনার জন্য এর সুবিধাভোগী মানুষের মধ্য থেকে একটি সমবায় সমিতি গঠন করা হয়েছিল। এই সমিতির দায়িত্ব হচ্ছে রাবার ড্যামটির দেখভাল করা, প্রতি বছর ড্যাম ফুলিয়ে পানি আটকে রাখা এবং ওই পানি ধান চাষে সেচের কাজে ব্যবহার নিশ্চিত করা কিন্তু সমিতির সদস্যরা সরকারের ওপর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে বসে আছেন।
স্থানীয় অলিপুরা বাজার এলাকার কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ১২ বছর ধরে রাবার ড্যামটিতে পানি আটকানো যাচ্ছে না। যার ফলে সেচ মৌসুমে প্রয়োজনীয় পানি না পাওয়ায় বোরো ধানের চাষাবাদ করতে পারছেন না স্থানীয় কৃষকরা।
সনমান্দি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহিদ হাসান বলেন, রাবার ড্যামটি মেরামত করার জন্য যে অর্থের প্রয়োজন তা বরাদ্দ দিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েও কোন ফল পাওয়া যাচ্ছে না।
এলজিইডির সোনারগাঁ উপজেলা প্রকৌশলী আলী হায়দার জানান, রাবার ড্যামটি দীর্ঘদিন যাবৎ অচল। এর মূল কারণ রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারক না করা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশেক পারভেজ জানান, রাবার ড্যামটি চালু হওয়ার পর উপজেলার চারটি ইউনিয়নের কয়েক হাজার কৃষক তাদের ইরি, বোরো ধানের জমিতে সেচ দিতে এই পানি ব্যবহার করতেন। তিনি আরো জানান, সেচ মৌসুমে পানি পেতে যেন সমস্যা না হয়, সে জন্য রাবার ড্যামটি নির্মাণ করা হয়। কিন্তু শুষ্ক মৌসুম শুরুর আগে ড্যামটিতে পানি আটকে রাখা যাচ্ছে না। রাবার ড্যামটি এখন নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। এটি মেরামতে অনেক অর্থের প্রয়োজন।
"