পটুয়াখালী প্রতিনিধি

  ২৩ জানুয়ারি, ২০১৮

পটুয়াখালীর সাড়ে তিনশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নেই প্রধান শিক্ষক

পটুয়াখালী জেলায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (সাবেক) ও নতুন জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ মোট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এক হাজার ২৩৩টি। এর মধ্যে প্রধান শিক্ষকের অনুমোদিত পদ রয়েছে এক হাজার ২৪টি। কর্মরত আছেন ৬৭২ জন। ৩৫২টি বিদ্যালয়েই নেই প্রধান শিক্ষক। প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম নানাভাবে ব্যাহত হচ্ছে।

পটুয়াখালী সদর উপজেলার ছোটবিঘাই ইউনিয়নের ৭৯ নং ফুলতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরেজমিন দেখা গেছে, শিক্ষক রীতা হাওলাদার এক শ্রেণি কক্ষে প্রবেশ করে পাঠদান দিয়ে আবার ছুটছেন অন্য শ্রেণি কক্ষে। সেখানেও পাঠদান দিচ্ছেন তিনি। এভাবে এ শ্রেণিকক্ষ থেকে অন্য শ্রেণিকক্ষে ছুটে গিয়ে তাকে পাঠদান করতে হচ্ছে। এই স্কুলে প্রাক প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত দুই শিফটে ছয়টি শ্রেণিকক্ষে এভাবে পাঠদান দিচ্ছেন শিক্ষক রীতা হওলাদার । শিক্ষক রীতা হাওলাদার জানান, তাদের স্কুলে ছাত্রছাত্রী প্রায় ১০০ জন। প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষকের পদ রয়েছে পাঁচটি। দীর্ঘদিন একজন শিক্ষক দিয়ে চলছিল স্কুলটি। মাঝে মধ্যে ডেপুটিশনে একজন শিক্ষক দেওয়া হয়েছে। তবে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন মাত্র দুইজন। তিনি ও প্রাক প্রাথমিকে শিক্ষক এস.এম শাহাবুদ্দিন খালেক। স্কুলের প্রধান শিক্ষক না থাকায় তাকেই প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। এছাড়াও তাকে স্কুলের দাফতরিক ও প্রশাসনিক কাজকর্ম নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে।

শিক্ষক রীতা হাওলাদার বলেন, সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত স্কুলে শিক্ষা কার্যক্রম চলে। প্রভাতী শাখা ও দিবা শাখায় মোট ৬ টি ক্লাশ কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে তাদের। তবে দাফতরিক কাজ কিংবা মাসিক সভায় যোগ দিতে জেলা সদরে যাওয়া হলে অপর শিক্ষককে একাই স্কুলের সকল শেণির পাঠদান চালিয়ে যেতে হয়। এতে করে পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটছে।

এদিকে ইউনিয়নের ৮৪ নং ভাজনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, সেই বিদ্যালয়েও দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষকের পদটি শূন্য রয়েছে। সহকারী শিক্ষক আয়েশা প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি বলেন, প্রায় ১০০ শিক্ষার্থী তার স্কুলে রয়েছে। কর্মরত রয়েছেন ৩ জন শিক্ষক। এর মধ্যে দাফতরিক কাজে প্রায়ই তাকে জেলা শহরে ছুটতে হচ্ছে। এভাবেই চলছে তাদের স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলার এক হাজার ২৩৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৩৫২টি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে। এসব স্কুলে সহকারী শিক্ষকরাই ভারপ্রাপ্ত হিসেবে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন।

এছাড়াও জেলার ১ হাজার ২৩৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪ হাজার ৪৩২ জন সহকারী শিক্ষকের পদের অনুমোদন থাকলেও কর্মরত আছেন ৪ হাজার ২০৫ জন। শূন্য রয়েছে ২২৭টি পদ।

সদর উপজেলা প্রাথমিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এই উপজেলায় ২০৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৯০টিতেই প্রধান শিক্ষক নেই। বল্লভপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকের পাঁচটি পদ থাকলেও সেখানে দুই শিক্ষক দায়িত্ব পালন করছেন। উত্তর কেওয়াবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও কর্মরত আছেন দুই জন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষক বলেন, স্কুল ভেদে প্রতিটি স্কুলে পাঁচজন থেকে ২০ জন পর্যন্ত শিক্ষক নিয়োগ রয়েছেন। তবে যাদের তদবির ভালো তারা গ্রামে আসেন না। তদবির করে শহরে চলে যাচ্ছেন। অথচ যে স্কুলে যাচ্ছেন সেই স্কুলে শিক্ষকের প্রয়োজনই নেই। এ কারণে গ্রামের দুর্গম এলাকায় শিক্ষক থাকতে চাচ্ছে না ফলে এসব এলাকার স্কুলগুলোতেই শিক্ষক সংকট বেশি। তবে বছরের শুরুতেই প্রধান শিক্ষকসহ শিক্ষকদের শূন্যপদ পূরণ করা জরুরী প্রয়োজন বলে মনে করেন এই শিক্ষক।

জেলার সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোল্লা বক্তিয়ার রহমান প্রথম বলেন, ২০১৪ সালের মার্চ মাসে প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা দেওয়ার পর থেকে প্রধান শিক্ষকের পদে নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। আসলে প্রধান শিক্ষক না থাকলে সহকারী শিক্ষককেই প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে হয়। স্কুলের দাফতরিক কাজে ব্যস্ত থাকার পরও শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হচ্ছে। তবে সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণের কার্যক্রম চলছে বলে জানান তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist