গাজী শাহাদত হোসেন ফিরোজী, সিরাজগঞ্জ

  ২২ জানুয়ারি, ২০১৮

খেজুরের গুড়ে মেশানো হচ্ছে ক্ষতিকর রাসায়নিক

মৌসুমী খাবার হিসেবে জনপ্রিয় শীতকালের খাঁটি খেজুর রসের গুড়ের নামে উৎপাদন করা হচ্ছে চিনি ও নিম্নমানের ঝোলাগুড় মিশ্রিত নকল গুড়। এমনকি এতে ব্যবহার করা হচ্ছে মানবদেহের ক্ষতিকর সব রাসায়নিক উপাদান। এসব গুড়ে তৈরিতে ব্যবহার করা হচ্ছে সোডা, গাছের-ছাল ও ফিটকিরিসহ বিপদজ্জনক রাসায়নিক পদার্থ। এতে করে খেজুর গুড়ের মৌলিক স্বাদ-গন্ধ দিন দিন হারিয়ে যেতে বসেছে। এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা এ ধরনের ভেজাল গুড় তৈরি করে স্ব-স্ব উপজেলা প্রশাসনের নাকের ডগার উপর বসে, বিভিন্ন হাট-বাজারে কেনা-বেচা করছে।

সিরাজগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলার হাট-বাজারে দীর্ঘ দিনের গড়ে উঠা পাইকারী ভাবে কেনা-বেচা হয়। এলাকার স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, ব্যবসায়ীরা প্যাকেট ও টিনজাত পদ্ধতিতে ট্রাকে ভরে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রাপ্তানী করছে। কিন্তু এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা বাড়তি মুনাফা লাভের আশায় প্রতিনিয়তই তৈরি করছেন ভেজাল খেজুর গুড়। চলনবিল অধ্যুশিত সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া, রায়গঞ্জ, সলঙ্গা ও তাড়াশ উপজেলায় বেশ কয়েকটি গুড় উৎপাদনকারী কারখানায় অবিরাম ভেজাল গুড় তৈরি করা হচ্ছে।

স্থানীয়রা আরও অভিযোগ করে বলেন, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী কারখানা খুলে হাজার হাজার মন ভেজাল গুড় তৈরি করছেন। তারা বাজার থেকে নিম্নমানের ঝোলা ও নরম গুড় অল্পদামে কিনে (গলিয়ে) তাতে চিনি, রং, হাইড্রোজ, গাছের-ছাল, সোডা, ফিটকিরিসহ রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে খেজুর গুড় তৈরি করছেন। সেই গুড় স্থানীয় হাট-বাজারসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাচ্ছেন। নিন্মমানের কারখানায় ময়লাযুক্ত গুড় মেঝেতে নোংরা স্যান্ডেল পায়ে গুড়ো করছে শ্রমিকরা। পাশেই প্রকাশ্যে রাখা হয়েছে চিনির বস্তা। দিনভর অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে এই ভেজাল গুড় তৈরী করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তা বাজারজাত করা হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার বড় গুড়ের মোকাম রানীরহাট, ভাদাস, তালম, গুল্টা ও নওগাঁ খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মানভেদে প্রতি কেজি খেজুর গুড় ৭০-৮০ টাকা ও ঝোলা গুড় ৫০টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর এসব গুড় বিক্রির কাজে নিয়োজিত রয়েছেন ওই সকল অসাধু গুড় উৎপাদনকারীরা।

তাড়াশ উপজেলার নওগাঁ হাটে গুড় বিক্রি করতে আসা গুড় উৎপাদনকারী জোনাব আলী, আব্দুল মান্নানসহ অনেকে জানান, তারা প্রতিটি খেজুর গাছের জন্য মালিককে মৌসুম ভিত্তিক খাজনা ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা দিয়ে থাকেন। প্রতি কেজি গুড় উৎপাদনে খরচ হয় জ্বালানি-মজুরীসহ ৮০ টাকা। আর খাঁটি গুড়র উৎপাদন করতে খরচ হয়, গড়ে প্রায় ১০০ টাকা। তাই গুড়ের চাহিদা ও উৎপাদন খরচ পুষিয়ে নিতে ২০ লিটার খেজুর রসে ৫ কেজি চিনি মেশান তারা। পক্ষান্তরে ২ কেজি চিনি মেশালে গুড় বেড়ে হয় দ্বিগুন। গুড়ের রং ফর্সা ও শক্ত করতে চিনিসহ বিভিন্ন পদার্থ মেশাতে হয়। তবে চিনি মুক্ত গুড়ের রং হয় কালো। তাতে প্রকৃত স্বাদ-গন্ধ অটুট থাকে। এই গুড় প্রতি কেজি কমপক্ষে ১০০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়।

ঢাকা থেকে আসা পাইকার হানিফ আলী ও সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া থেকে আসা আসমত ব্যাপারী জানান, খেজুর গুড়ের সেই ঐতিহ্য আর নেই। প্রান্তিক পর্যায়ের মৌসুমি গুড় উৎপাদনকারী ও মহাজন সকলেই ভেজাল গুড় তৈরি করছেন। গুড়ের রং ফর্সা ও শক্ত করতে তারা ইচ্ছাকৃত ভাবেই চিনির সাথে ক্ষতিকারক রাসায়নিক মিশিয়ে আর্থিক ভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করছেন। এ ব্যপারে (এমবিবিএস) ডাক্তার মোঃ হাফিজুর রহমান মিলন (সিরাজগঞ্জ) জানান, খেজুর গুড়ে চিনি, হাইড্রোজ, সোডা, রং, ফিটকারির মত ভেজাল মিশ্রণের কারণে কিডনি ড্যামেজ, খাদ্যনালীতে ক্যান্সার, লিভারে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

এব্যপারে সিরাজগঞ্জ জেলা কৃষি কর্মকর্তা জানান, চলনবিল অধ্যুশিত সিরাজগঞ্জের কয়েকটি উপজেলায় প্রচুর খেজুর গাছ রয়েছে। এগুলো ভালভাবে রক্ষণা-বেক্ষণ করতে পারলে চলনবিল তথা দেশ ও দেশের বাহিরের মানষের পক্ষে তবেই হারিয়ে যাওয়া আসল খেজুর গুড়ের সুস্বাদু-স্বাদ ও ঐতিহ্য ফিরে পাওয়া সম্ভব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist