ফুলবাড়ী (দিনাজপুর) প্রতিনিধি

  ১৯ জানুয়ারি, ২০১৮

প্রশাসন ম্যানেজ করে কৃষিজমির মাটি ইটভাটায়

চিরিরবন্দর উপজেলার ১২টি ইউনিয়নে উপজেলার ৩৭টি ইটভাটায় স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ভেকু গাড়ি দিয়ে কৃষি জমির মাটির কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ইটভাটাগুলোতে প্রতি মৌসুমে উৎপাদিত হচ্ছে প্রায় ২১ কোটি পিচ ইট। এই ইট উৎপাদনের জন্য পোড়ানো হচ্ছে প্রায় ১ কোটির বেশি সিএফটি মাটি। সিংহভাগ মাটি আসছে কৃষিজমি থেকে।

অভিযোগ পাওয়া গেছে, কৃষকদের ভুল বুঝিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ভেকু গাড়ি দিয়ে কৃষিজমির মূল্যবান অংশ ‘টপ সয়েল’ হিসেবে পরিচিত মাটি কেটে ইটভাটায় ব্যবহার করা হচ্ছে। অর্থাভাবে জমির মালিকরা স্বল্পমূল্যে জমির ঊর্বর মাটি ইটভাটা ও গৃহ নির্মাণে বিক্রি করায় উৎপাদন প্রায় ৩০ শতাংশ হ্রাস পাচ্ছে বলে উপজেলা কৃষি বিভাগের ধারণা। কিন্তু বাস্তবে ৮০ শতাংশ উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে বলে গবেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তবে ইটভাটার চাহিদা মেটাতে কৃষিজমির গুরুত্বপূর্ণ অংশের এমন বিনাস হলেও এ নিয়ে তেমন প্রতিক্রিয়া নেই সংশ্লিষ্ট কোনো প্রতিষ্ঠানের। ফলে কৃষিজমির ঊর্বরতা ও ফসল উৎপাদনের ওপর মারাত্মক বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে কৃষি অর্থনীতি ও পরিবেশ ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছে। অথচ ইটভাটার সর্বশেষ আইন অনুযায়ী কৃষিজমির মাটি ভাটায় ব্যবহার নিষিদ্ধ। পরিবেশ অধিদপ্তর, কৃষক ও কৃষি বিভাগ, ইটভাটা মালিকসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। তবে কৃষিজমির টপ সয়েল নিয়ে উদ্বেগ সম্পর্কে ধারণা নেই কৃষকদের। জানা গেছে, গ্রামের দরিদ্র কৃষকরা অর্থাভাবে, আবার কেউ কেউ সচেতনতার অভাবে ফসলি জমির ঊর্বর মাটি ইটভাটায় বিক্রি করছেন। সামান্য প্রয়োজনে বা কোনো প্রয়োজন ছাড়াই মাটির উপরিভাগ তুলে দিচ্ছেন ভাটা মালিকদের কাছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ভুল ধারণা থেকেও তারা মাটি বিক্রি করছেন।

চিরিরবন্দর ইট প্রস্তুতকারীদের তথ্য অনুযায়ী, গড়ে ভাটাপ্রতি ৬০ লাখ হিসেবে উপজেলায় ৩৫ টি ইটভাটা থেকে প্রতি মৌসুমে প্রায় ২১ কোটি ইট উৎপাদিত হয়। আর এ জন্য প্রতি ভাটায় ৮ থেকে সাড়ে ৮ হাজার ট্রাক মাটি দরকার হয়। মাটি পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ১ কোটির বেশি সিএফটি।

ইটভাটার সর্বশেষ আইন অনুযায়ী, কৃষিজমির মাটি ভাটায় ব্যবহার নিষিদ্ধ। এই আইন লঙ্ঘনের জন্য সর্বোচ্চ ২ বছর কারাদ- বা ২ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দ-ের বিধান রয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান বলেন, ফসলি জমির উপরি ভাগের ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি পরিমাণ মাটি ঊর্বর। এ মাটির সাথে জৈব উপাদান রয়েছে। ফসলি জমিতে ৫ শতাংশ জৈব সার থাকার কথা থাকলেও বাস্তবে আছে মাত্র ১ শতাংশ। ফসলি জমির মাটি এভাবে বিক্রি হয়ে ইটভাটায় গেলে আগামিতে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ হারে ফসল উৎপাদন হ্রাস পাবে।

চিরিরবন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. গোলাম রব্বানী বলেন, গ্রামের দরিদ্র কৃষকরা অর্থাভাবে, নগদ টাকার আশায় তারা মাটি বিক্রি করছেন। মাটি বিক্রি করে সাময়িক অভাব দূর হলেও আখের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় ক্ষতি হচ্ছে তাদের।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist