মো. সবুজ হোসেন, নওগাঁ

  ১৭ জানুয়ারি, ২০১৮

নওগাঁয় রেজিস্ট্রেশনবিহীন দোকানে ব্যথানাশক ইনজেকশন

সরবরাহ কম থাকায় দাম কয়েকগুণ বেশি

‘জি-প্যাথেডিন’ একটি ব্যথানাশক ইনজেকশন। এটি নারকোটিক ড্রাগ এবং গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিকেলস লিমিটেড থেকে উৎপাদিত। ইনজেকশনটি মূলত সিজারিয়ান পরবর্তী সময়, কার্ডিওলজিস্ট, নাক, কান গলা ব্যথা, মাঝারি থেকে তীব্র ব্যথা ও লোকাল এনেসথেসিয়ায় সহযোগি ড্রাগ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যা মাদকসেবীরা নেশা হিসেবেও ব্যবহার করে থাকে। ইনজেকশনটি নারকোটিক ড্রাগ হওয়ায় ঔষধ দোকানিদের এটি বিক্রি করতে হলে আলাদা করে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়। এ অ্যাম্পুলটির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য (এমআরপি) ৩৪ টাকা ৫০ পয়সা হলেও নওগাঁয় তা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকায়। আবার চাহিদা বেশি থাকলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় নগণ্য।

নওগাঁ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর থেকে মিম মেডিকেল স্টোর, বাংলদেশ মেডিকেল স্টোর এবং প্রাইম ল্যাব এন্ড হাসপাতাল ও হলিফ্যামিলি হাসপাতালে রেজিষ্ট্রেশন দেয়া আছে। যাদের নামে ‘নারকোটিক’ গ্রুপের রেজিস্ট্রেশন করা থাকবে মূলত তারাই এ অ্যাম্পুলটি বিক্রি করতে পারবেন। আর ক্রেতাদের এটি কিনতে হলে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রে তা উল্লেখ থাকতে হবে। কিন্তু বাইরের কয়েকটি ঔষধের দোকানগুলোতে ‘নারকোটিক’ গ্রুপের ‘জি-প্যাথেডিন’ এ ইনজেকশনটি বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা এটি উচ্চ মূল্য দিয়েই কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। বাজারে জি-প্যাথেডিনের এ ইনজেকশনটি পাওয়া না গেলে জরুরি ভিত্তিতে বিকল্প হিসেবে অন্যটি নিয়ে থাকেন। আবার ব্যবস্থাপত্র ছাড়াও পরিচিত থাকায় এ ইনজেকশনটি রেজিস্ট্রেশন বিহীন দোকান থেকে বিক্রি হয়। ফলে সহজেই মাদকসেবিরা তা পেয়ে থাকেন।

জানা গেছে, ‘জি-প্যাথেডিন’ প্রতি পিছ অ্যাম্পুলটির এমআরপি মূল্যে ৩৪ টাকা ৫০ পয়সা ‘গণস্বাস্থ্যে’ জমা দিতে হয়। এরপর সেখান থেকে ইনজেকশনটি উঠানোর জন্য ‘নারকোটিক’ গ্রুপের রেজিস্ট্রেশনের আওতায় নওগাঁ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিস থেকে সুপারিশ বা অনুমতি নিতে হয় পরিবহন বা যানবাহন করে নিয়ে আসার জন্য। সুপারিশ পেতে হলে অতিরিক্ত টাকা গুণতে হয় ‘নারকোটিক’ গ্রুপের রেজিষ্ট্রেশনভুক্ত ঔষধের দোকানি এবং হাসপাতালগুলোকে। আর এ সুপারিশের ফলে যানবাহনে করে নিয়ে আসার সময় কোথাও পুলিশ প্রশাসন আটক করে না। এছাড়া ঢাকার গ্যান্ডেরিয়াতেও স্বাক্ষর নেয়ার সময় ফাইলটি পাশ করার জন্য টাকা গুণতে হয় বলেও জানা গেছে।

সদর হাসপাতাল রোড মিম মেডিকেল স্টোরের মালিক কল্লোল বিশ্বাস বলেন, ‘জি-প্যাথেডিন’ ইনজেকশনটির দাম ৩৪ টাকা ৫০ পয়সা হলেও নিয়ে আসতে খরচ পড়ে ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকা। আর বিক্রি হয় ১১০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা। আর এটির লাইসেন্স করতে খরচ হয় প্রায় ২ হাজার টাকার মতো। প্রতি বছরে আমার জন্য ৮০০ টি অ্যাম্পুলের বরাদ্দ হলেও চাহিদা রয়েছে প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার টি অ্যাম্পুল।

নওগাঁ ঔষধ তত্ত্বাবধায়ক সুপার মরুময় সরকার বলেন, এটি একটি ‘নারকোটিক’ গ্রুপের ইনজেকশন। ‘জি-প্যাথেডিন’ ইনজেকশনটি মস্তিকের বিঘœ ঘটায়। তাছাড়া এটি ব্যাথা উপশমের কাজ করে। জেলায় প্রায় ৩ হাজার ঔষধের দোকান আছে। আর রেজিস্ট্রেশন আছে প্রায় ২ হাজার ৭৩৫টি। আমাদের ব্যর্থতার কারণ হচ্ছে লোকবল সংকট। আর মোবাইল কোর্ট যে পরিচালনা করব সেসময় প্রশাসন থেকে কাউকে পাওয়া যায় না। কিছু বিষয় দেখেও না দেখার ভান করতে হয়। কারণ সরকার আমাদের সে ক্ষমতা দেয়নি। তবে শিগগিরই এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

নওগাঁ জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক রাজিউর রহমান বলেন, জেলায় দুইটি ঔষধের দোকান ও দুইটি হাসপাতালে ‘জি-প্যাথেডিন’ ইনজেকশন বিক্রিয়ের রেজিস্ট্রেশন দেওয়া আছে। এটি একটি ‘ডেঞ্জার ড্রাগ’ হিসেবেও পরিচিত। এটি গণস্বাস্থ্য ও পপুলার থেকে তৈরিকৃত। যদি বাইরের দোকানগুলোতে এ ইনজেকশনটি পাওয়া যায় তাহলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সারা বছরে জেলায় প্রায় ১০ হাজার অ্যাম্পুল সরবরাহ করা হয়। তবে চাহিদা রয়েছে প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ হাজার পিছ অ্যাম্পুল।

নওগাঁ সিভিল সার্জন ডা. মুমিনুল হক বলেন, এই ইনজেকশনটি মূলত সিজারিয়ানের কাজে ব্যবহৃত হয়। এটি সরবরাহ কম হওয়ায় চাহিদাও বেশি। ফলে দামও বেশি। তবে দাম বেশির ক্ষেত্রে আমাদের কিছুই করণীয় নাই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist