সাহিদুর রহমান, ইসলামপুর (জামালপুর)

  ১৫ জানুয়ারি, ২০১৮

শীত ও ঘন কুয়াশায় কাবু যমুনা-ব্রহ্মপুত্র পারের মানুষ

জামালপুরের ইসলামপুরে তীব্র শীত ও ঘনকুয়াশায় এবং যমুনা-ব্রহ্মপুত্র পাড়ে দু’দফায় বন্যা-নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তরা অর্থ সংকটে ঘরবাড়ি মেরামত করতে না পারায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। প্রায় সপ্তাহকালের শৈত্যপ্রবাহ ও দিনভর ঘনকুয়াশায় ঘর থেকে বের হতে না পারায় যমুনার তীরবর্তী পাথর্শী, কুলকান্দী, বেলগাছা, চিনাডুলী, সাপধরী ও নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের সহ¯্রাধিক পরিবার এবং ব্রহ্মপুত্র নদের তীরবর্তী গোয়ালের চর, গাইবান্ধা, চরপুটিমারী ও চর গোয়ালিনী ইউনিয়নের দরিদ্র মানুষদের জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, বিগত দু’দফা বন্যায় উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার কাচাঁপাকা ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রায় ৫ মাস আগে বন্যার পানি চলে গেলেও অর্থ সংকটে অধিকাংশ পরিবার ঘরবাড়ি মেরামত করতে পারেনি। অনেকে রাস্তা বা অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। টানা কয়েক দিনের তীব্র শীত ও ঘনকুয়াশায় ওইসব পরিবারের জীবন যাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। ভাঙ্গা ঘরবাড়িতে গরম কাপড়ের অভাবে সারারাত আগুন জ্বালিয়ে র্নিঘুম রাত কাটাচ্ছেন তারা। এতে বেশি সমস্যায় পড়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা।

সরেজমিনে পাথর্শী ইউনিয়নের মোরাদাবাদ ও মলমগঞ্জ-কুলকান্দী সড়কের আটিয়ামারী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের করুণ দৃশ্য। মোরাদাবাদ গ্রামের মনঞ্জুর মেয়ে বাক প্রতিবন্ধী আছমা বেগমের একটি মাত্র ঘর ছিল। পানির স্রোত ভাসিয়ে নিয়ে গেছে ঘরটি। তিনি পাথর্শী-কুলকান্দী সড়কে আশ্রয় নিয়ে খোলা আকাশের নিচে প্রচন্ড শীতে অনাহারে-অর্ধাহারে অতিকষ্টে দিনাতিপাত করছে। বৃদ্ধা আলেমা বেওয়া জানান, তার একটি ঘর ছিলো বন্যায় সেটি ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। তিনিও রাস্তা থেকে বাড়ি ফিরতে পারেনি। তীব্র শীতে কেউ তার খোঁজ খবর নেয় নি।

বৃদ্ধ হাবিবুর রহমান বলেন, তার তিনটি ঘর ভেঙ্গে গেছে। বন্যার পানি চলেগেছে কিন্তু টাকার অভাবে একটি ঘরও মেরামত করতে পারেনি।

এ ছাড়া আঃ কবির, আলা বক্স, কাইমদ্দিন, লেচু মিয়া, মনিুরুল হক, আবুল কাশেম সরদার, আবুল কালাম, মঞ্জুর আলী ও নিজাম উদ্দিন জানান, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মেরামত না করতে পারায় এখনো নিজের ঘরে ফিরতে পারেনি। তার মধ্যে শুরু হয়েছে তীব্র শীত। শতাধিক পরিবার মলমগঞ্জ-কুলকান্দী রাস্তার পাশে ঝুপড়ি ঘরে তীব্রশীত ও হীমেল হাওয়ায় মানবেতর জীবন যাপন করছে। পাথর্শী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ইফত্তেখার আলম বাবুল জানান, তার ইউনিয়নে কমপক্ষে দুই হাজার কম্বলের প্রয়োজন। সে ক্ষেত্রে মাত্র ২৯০টি কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে।

চিনাডুলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জানান, তার ইউনিয়নের শতভাগ এলাকা বন্যা ও নদী ভাঙন কবলিত। বন্যার পর তীব্র শীতে ওইসব এলাকার অসহায় মানুষ নিধারুন কষ্টের মধ্যে রয়েছে। সরকারি ভাবে ৩০০ কম্বল পেয়েছি। নয় ওয়ার্ডে ভাগ করে দিয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অতি অল্প।

সাপধরী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন বিএসসি জানান, সরকারী ভাবে ৩০০ কম্বল পেয়েছি। তার ইউনিয়নটি সম্পূর্ণ যমুনার চরাঞ্চল হওয়ায় অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র সীমার নিচে বসবাস করে। নদী বেষ্টিত হওয়ায় এখানে শীতও তীব্র থেকে তীব্রতর। জয়নাল আবেদীন বলেন, তার ইউনিয়নে ২০ হাজার মানুষ শীতবস্ত্র পাওয়ার যোগ্য।

উপজেলা ত্রাণ শাখা সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় সাড়ে সাত হাজার কম্বল বরাদ্দ পাওয়া গেছে। উপজেলা প্রকল্পবাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেহেদী হাসান টিটু জানান, এক পৌর সভা ও ১২ ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের মাঝে ৩০০ করে প্রায় চার হাজার কম্বল বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলো স্থানীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে বিতরণ করা হচ্ছে। যা প্রায়োজনের তুলনায় অতি অল্প বলে মনে করেন ভুক্তভোগীরা।

উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, শীত মোকাবেলায় সরকারের পক্ষ থেকে কোন কমতি নেই। আমি নিজে গভীর রাতে ঘুরে ঘুরে অসহায়দের মাঝে কম্বল বিতরণ করছি।

অন্যদিকে শীতে রোটা ভাইরাজ (কোল্ড ডায়রিয়ার) প্রকোপ দেখা দিয়েছে। কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সোমবার গত দিবাগত রাতে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সদর ইউনিয়নের পচাবহলা গ্রামে বিলকিছ নামে এক গুহবধূর মৃত্যু হয়েছে। তিনি ওই গ্রামের আমিনুলের স্ত্রী।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, তীব্র শীত ও হীমেল হাওয়ায় রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়ায় ঠান্ডা আক্রান্ত হয়ে রিপন, জান্নাতী, শিশু অভি, নাজিরা, ফুলপরী, নাইম ও রাতুলসহ অর্ধশতাধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ ছাড়া বহির্বিভাগে শত শত রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। যাদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু বলে জানা গেছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist