বগুড়া প্রতিনিধি

  ১৫ জানুয়ারি, ২০১৮

খাদ্য বিভাগের কালো তালিকায় সহস্রাধিক মিল

বন্যায় ক্ষতির দাগ মাথায় নিয়ে ফলানো আমন ধান এখন বগুড়ার হাট বাজারে বিক্রি হচ্ছে। বিভিন্ন হাটে ধান বিক্রি শুরু হওয়ায় সরকারিভাবে ধান চাল সংগ্রহ অভিযানও শুরু হয়েছে। সরকারিভাবে জেলায় এবার আমন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩২ হাজার ৩০৮ মেট্রিকটন। সরকারিগুদামে এই পরিমাণ চাল সরবরাহ করবে ১ হাজার ৯৩৫ জনের মধ্যে চুক্তিবদ্ধ হওয়া ৬৬৯ জন মিল মালিক। চুক্তিবদ্ধ না হওয়ায় সহস্রাধিক মিল মালিক রয়েছেন খাদ্য বিভাগের কালো তালিকায়। বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, বগুড়া জেলায় এবার ১ লাখ ৮৫ হাজারের বেশি জমিতে আমন আবাদ হয়। আমন চারা বড় হতে শুরু করার পরই দুই দফায় বন্যায় প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমির ধান পানিতে তলিয়ে যায়। আমন চারায় পচন ধরে। শংঙ্কিত কৃষকদের পুনবাসনে সরকারিভাবে বিনামূল্যে আবারো আমন চারা বিতরণ করে। নতুনভাবে আবারো জমি চাষ শুরুহলে শেষ পর্যন্ত বগুড়া জেলায় আমন চাষ হয় ১ লাখ ৬৫ হাজার ৮০ হেক্টর। এই পরিমান জমিতে ৫ লাখ টন চাল আকারে ফলন পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষি বিভাগের মতে জেলায় আমনের ফলন বরাবরের মত এবারো ভাল হয়ে থাকে। জেলার মাটি আবহাওয়ার কারণে জেলায় আমনের ফলন প্রতি হেক্টরে ধরা হয় ৩ টন। জাতীয়ভাবে সে ফলন ধরা হয়েছে ২.৭৭ টন করে। জেলার ধুনট, শেরপুর, নন্দীগ্রাম, কাহালু, আদমদিঘি, শিবগঞ্জ, দুপচাঁচিয়াসহ সকল উপজেলায় ধান কাটা মাড়ায় শেষে হাটে বাজারে বিক্রি শুরু হয়েছে। বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, শেরপুর উপজেলার বিভিন্ন হাটের ধান ব্যবসায়িদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মোটা গুটি ধান (৪০ কেজি) বিক্রি হচ্ছে ১০০০টাকায়, এই ধানের চাল বিক্রি হচ্ছে পাইকারি ৩৮ থেকে ৩৯ টাকা, আমন রঞ্জিত ধান বিক্রি হচ্ছে ১১০০ টাকা মন। মিনিকেট ১৪০০ টাকা এবং এর চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা কেজি, পাইজাম ধান ১৫০০ টাকা মন এবং চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজি। এছাড়া গত বছরের বোরো ২৮ ধান পুরাতন বিক্রি হচ্ছে ১২৭০ থেকে ১২৮০ টাকা মন। বগুড়া জেলা সহকারি খাদ্য নিয়ন্ত্রক ওমর ফারুক জানান, জেলায় ধান বিক্রি শুরু হয়েছে। সরকারিভাবে জেলায় এবার ৩২ হাজার ৩০৮ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হবে। এ চাল সরবরাহ করতে ৬৬৯ জন হাসকিং ও অটো রাইস মিল মালিক চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। গত বছর চুক্তিবদ্ধ মিল মালিক ছিলেন ৭০৮ জন। এবার চুক্তি করে নাই ৩৯ জন মিলার। জেলায় মোট হাসকিং ও অটো রাইস মিল মালিক রয়েছেন ১ হাজার ৯৩৫ জন। এরমধ্যে চুক্তিবদ্ধ হননি ১ হাজার ২৬৬ জন মিলার। বগুড়ায় সরকারি গুদামে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত চাল সংগ্রহ হয়েছে ১৫ হাজার ৭০০ মেট্রিক টন। চুক্তি অনুযায়ী মিল থেকে ৩৯ টাকা কেজি হিসেবে চাল কিনবে সরকার। ৩ ডিসেম্বর থেকে চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। গত মৌসুমে চাল দিতে সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পরও সিংহভাগ মিলার লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে সরকারকে চাল দেননি। চুক্তি ভঙ্গের কারণে সেসব মিলারদের কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এবার চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণে খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছেন। বগুড়ার শেরপুর উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এই উপজেলায় ৬ হাজার ৪৭৭ মেট্রিকটন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সে মোতাবেক চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু করা হয়েছে। ইতিমধ্যে ৫হাজার ৭০০মেট্রিকটন চাল দিতে সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন ১২৮জন মিলার। এই উপজেলায় ৩৭২জন লাইসেন্সধারী মিলার রয়েছে। কিন্তু গেল মৌসুমে চাল দিতে সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পরও ২২২জন মিলার লোকসানের অজুহাত দেখিয়ে সরকারকে চাল দেননি। চুক্তি ভঙ্গের কারণে সেসব মিলারদের কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এবার চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ওইসব মিলারদের কোন বরাদ্দ দেয়া হয়নি। বগুড়ার শেরপুর উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হামিদ জানান, সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার পর প্রত্যেক মিলার প্রাপ্ত বরাদ্দ অনুযায়ী চাল দিতে বাধ্য। তাই চুক্তি অনুযায়ী মিলাররা সরকারি গুদামে চালও সরবরাহ শুরু করেছেন। তবে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার জন্য আরেকবার মিলারদের সুযোগ দিতে হবে। যাতে করে বাদপড়া লাইসেন্সধারী মিল মালিকরাও সরকারকে চাল দিতে পারেন। পাশাপাশি সরকারের অভ্যন্তরীণ আমন চাল সংগ্রহ অভিযান সফল হবে বলে এই চালকল মালিক সমিতির নেতা মনে করেন। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. হারুনার রশিদ জানান, মিলার বা চাল ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী এবার চালের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই নির্ধারিত সময়ের আগেই চুক্তি অনুযায়ী মিল মালিকরা সরকারি গুদামে চাল দেবেন বলে আশা করছেন। ২০১৮ সালের ২৮ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই চাল সংগ্রহ অভিযান অব্যাহত থাকবে। বগুড়া জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মাইন উদ্দিন জানান, জেলায় চাল সংগ্রহ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক চাল সংগ্রহ হয়েছে। আগামী কয়েকদিন মধ্যে আরো চাল সংগ্রহ হবে। লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। যে সব মিলার চুক্তিবদ্ধ হননি তাদের কালো তালিকা করা হয়েছে। আগামী ২ মৌসুম তারা সংগ্রহ অভিযানে অংশ নিতে পারবে না। বগুড়ার কাহালু উপজেলার মিল মালিক মোহাম্মদ আলী জানান, হাটে বাজারে ধানের দাম বেশি হলেও বগুড়ায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে। মিল মালিকরা ইতিমধ্যে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ৩৯ টাকা দরে সরকারি গুদামে চাল সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে। বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার চলতি আমন মৌসুমে সান্তাহার সিএসডিসহ ৪টি গুদামে ৪হাজার ৪শত ৭৩‘০১০ মেট্রিক টন চাল সংগৃহিত হয়েছে। সংগ্রহের অপেক্ষায় রয়েছে ৪শত ৯৪ মেট্রিক টন চাল। এদিকে সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ না হওয়ায় উপজেলায় ১৭৬টি চালকল মালিককে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা যায়, আদমদীঘি উপজেলায় অটোসহ ২৩০টি চালকল বা চাতাল রয়েছে। এরমধ্যে গত বেরো মৌসুমে সরকারকে চাল দেয়ার চুক্তি না করায় ১৭৩টি চালকল মালিককে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। অপর ৫৭টি চালকল মালিক চুক্তি মোতাবেক সরকারী খাদ্য গুদামে চাল প্রদান করেন। চলতি আমন মৌসুমে ৫৭টি চাল কলের মধ্যে আরও ৩টি চালকল সরকারের সাথে চুক্তিবদ্ধ না হওয়ায় তাদেরও কালো তালিকাভুক্ত করা হয়। বাকি ৫৩টি চালকল মালিক সরকারের সাথে চুক্তি মোতাবেক খাদ্য গুদামে চাল সরবরাহ করছেন। উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শাহানশাহ্ চালকল মালিকদের কালো তালিকাভুক্ত হওয়া নিশ্চিত করে জানান, ২০১৬ সালের ৭ ডিসেম্বর চলতি আমন মৌসুমে সরকারিভাবে ৩৯টাকা কেজি দরে চাল সংগ্রহ শুরু করা হয়েছে। ৫৩টি চালকল মালিকের মাধ্যমে সান্তাহার সিএসডি, আদমদীঘি সদর, নসরতপুর ও সান্তাহার এলএসডি খাদ্য গুদামে মোট ৪হাজার ৪শত ৭৩’০১০ মেট্রিক টন চাল সংগৃহিত হয়েছে। অবশিষ্ট চাল আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে সংগৃহিত হওয়ার আশা রয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist