রেজওয়ান শরিফ, টাঙ্গাইল
গাজীপুর-টাঙ্গাইল চার লেন প্রকল্প
বিড়ম্বনা দূর করতে মহাসড়কজুড়ে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ
গাজীপুর-টাঙ্গাইল-এলেঙ্গা মহাসড়ক চারলেনে উন্নীতকরণের কাজ এগিয়ে চলছে। সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্পের আওতায় গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ দুই লেনের এই মহাসড়কটি চারলেনে উন্নীত করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় অর্ধেক কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
সরেজমিন টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে মির্জাপুর পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মহাসড়কে উন্নয়ন কাজের কর্মযজ্ঞ। কোথাও পাথর ফেলে রুলার দিয়ে পেটানো হচ্ছে। কোথাও চলছে ব্রিজের গার্ডার স্থাপনের কাজ। কোন কোন অংশে পুরাতন সড়কের পিচ তুলে ফেলা হচ্ছে নতুন করে ঢালাইয়ের জন্য। কোথাও আবার নব নির্মিত সড়কে চলছে পিচ ঢালাইয়ের কাজ। সকাল থেকে রাতঅব্দি অবিরাম চলছে এই কর্মযজ্ঞ। যেন বিশ্রামের ফুরসত নেই।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মির আক্তার হোসেন লিমিটেডের প্রকল্প পরিচালক ফারুখ আহম্মদ সিদ্দিকী বলেন, ‘ব্যস্ততম এই মহাসড়কটি চালু রেখে উন্নয়ন কাজ করতে গিয়ে কিছুটা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি সঠিক সময়ে কাজটি শেষ করার। এজন্য নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৩ আগষ্ট এই প্রকল্পের টেন্ডার আহবান করা হয়। চারটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু হয়। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রকল্পের কাজ সম্পন্নের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে টাঙ্গাইল থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত কন্ট্রাক্ট নম্বর-৪ এর কাজ শেষ করার সময় পাবে ২০১৯ সালের মার্চ পর্যন্ত। কারন এটি চুক্তিও হয়েছিলো তিন মাস পরে। ‘এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক,’ ‘ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট’ এবং ‘আবুধাবি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট’ এর ঋণ সহায়তায় বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হচ্ছে। প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩৬৪৭৪.৯৫ লক্ষ টাকা। এর মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণে লেগেছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। কাজের মান নিয়ন্ত্রণের জন্য দুইটি কোরিয়ান একটি ইন্ডিয়ান এবং একটি বাংলাদেশি কনসালটেন্সি কোম্পানি নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
চারলেনের মূল সড়কের মাঝখানে ১.২ মিটার প্রস্থের রোড ডিভাইডারসহ মোট প্রস্থ হবে ১৫.৮ মিটার। এর এক পাশে একটু নিচে ধীর গতির যানবাহন চলাচলের জন্য ৪.২ মিটার প্রস্থের আরও একটি লেন রয়েছে। এটি এলেঙ্গা থেকে কালিয়াকৈর পর্যন্ত নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও কালিয়াকৈর থেকে গাজীপুরের ভোগড়া পর্যন্ত মহাসড়কের উভয় পাশে ৩.৬ মিটার করে সার্ভিস লাইন তৈরি করা হবে। সড়কের উভয়পাশে হার্ড সোল্ডার ও সফট সোল্ডারের প্রস্থ মিলিয়ে মহাসড়কের মোট প্রস্থ হবে ২৯.৮ মিটার। চার লেনের ৭০ কিলোমিটার মহাসড়কে টাঙ্গাইলের ঘারিন্দা, ভাতকুড়া, করটিয়া হাট বাইপাস, বাঐখোলা, সাটিয়ারচরা, মির্জাপুর বাসস্ট্যান্ড এবং কালিয়াকৈর বাসস্ট্যান্ডে আন্ডারপাস নির্মিত হবে। অপরদিকে গাজীপুরের কোনাবাড়ি, চন্দ্রা ও লতিফপুর এবং টাঙ্গাইলের সোহাগপুর ও রাবনায় ৫টি উড়াল সড়ক নির্মাণের কাজ পুরোদমে এগিয়ে চলছে। এছাড়াও এই মহাসড়কে ২৬টি সেতু ও ৬০টি কালভার্ট সম্প্রসারণ ও ১২টি পথচারী সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।
কন্ট্রাক্ট-১ এ গাজীপুরের জয়দেবপুরের ভোগড়া থেকে কালিয়াকৈর বাইপাস পর্যন্ত ১৮.৯ কিলোমিটার অংশে কাজ করছে ‘স্পেকট্রা কন্সট্রাকশন লিমিটেড’। কন্ট্রাক্ট-২ এ কালিয়াকৈর বাইপাস থেকে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের ইচাইল পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার অংশে কাজ করছে ‘আব্দুল মোনেম লিমিটেড’। কন্ট্রাক্ট-৩ এ মির্জাপুরের ইচাইল থেকে টাঙ্গাইলের দরুন বাইপাস পর্যন্ত ২২.৪ কিলোমিটার অংশে কাজ করছে ‘মীর আক্তার হোসেন লিঃ’ এবং কন্ট্রাক্ট-৪ এ টাঙ্গাইল থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার কাজ করছে ‘ডিয়েনকো লিমিটেড’।
এদিকে পথচারী, যাত্রী, চালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই মহাসড়কের কাজ সম্পন্ন হলে ঢাকার সাথে বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত ২৫টি জেলার সাথে সড়ক যোগাযোগ আরোও সহজ হয়ে যাবে। যাত্রী সাধারণকে প্রতিনিয়ত যানজটের কবলে পড়ে যে বিড়ম্বনা সইতে হয় তা দূর হয়ে যাবে। দুর্ঘটনাও কমে আসবে।
প্রকল্পের পরিচালক জিকরুল হাসান বলেন, ‘গাজীপুরের জয়দেবপুর থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত ৭০ কিলোমিটার মহাসড়কে আমাদের সাব স্ট্রাকচার শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। সুপারস্ট্রাকচার ৫০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। অন্যান্য কাজগুলিও সমানতালে এগিয়ে চলছে। কাজের গড় অগ্রগতি ৫০ ভাগ। কাজের অগ্রগতী আমাদের টার্গেট অনুযায়ীই হচ্ছে। আশা করি নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমরা আমাদের কাজ সম্পন্ন করতে পারবো।
"