হাসান জাকির, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ)

  ১৩ জানুয়ারি, ২০১৮

কমে গেছে চোখের আলো থেমে নেই কাজের হাত

কথায় আছে- মাছে ভাতে বাঙালি। মাছ ধরার অন্যতম উপকরণ বিভিন্ন ধরনের জাল। কিন্তু বর্তমানে নদী-নালা ও খাল-বিলে আগের মতো আর মাছ পাওয়া যায় না। তাই বলে দেবকুমারের জালের চাহিদার কমতি নেই। জাল বোনার দক্ষ কারিগর হওয়ায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জালের অর্ডার আসে তার কাছে। অর্ডারি জালের কাজ করতে বছরের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাকে ভীষণ ব্যস্ত থাকতে হয়। এভাবে দীর্ঘ ৪৬ বছর ধরে তিনি একই পেশায় থেকে স্বচ্ছলভাবেই জীবন যাপন করে আসছেন। দেব কুমার বিশ্বাস (৭২) ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার মহাদেবপুর গ্রামের বাসিন্দা।

জাল বুনন ও সারাই বান্দা কাজে অত্যন্ত দক্ষ হওয়ায় সারা বছরই কর্মব্যস্ত থাকেন তিনি। জাল বুনন ও সারাই-বান্দার কাজ থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে ৫ সদস্যের পরিবারের খরচ মিটিয়ে বাড়তি কিছু টাকা থাকে। এই বাড়তি টাকা জমিয়ে ইতোমধ্যে তিনি এলাকায় এক একর জমি ক্রয় করেছেন।

দেব কুমার বলেন, নতুন জাল বুননে আয় কম, কিন্তু পুরাতন জাল সারাইয়ের কাজ করে যথেষ্ট আয় হয়। তিনি জানান, একটি খেপলা জাল বুনতে তার সময় লাগে প্রায় ১৫দিন। এই জাল তৈরিতে সূতা ও জালের কাঠি বাবদ খরচ হয় ৫০০ থেকে সাড়ে ৫৫০ টাকা। নতুন জাল বিক্রি হয় প্রায় ৩ হাজার টাকা।

আলাপকালে দেব কুমার জানান, জাল বুননের কাজে তাকে সহযোগিতা করেন তার স্ত্রী ও সন্তান। স্ত্রী সবিতা রাণীও জাল বুননে বেশ দক্ষ হয়ে উঠেছে। দেব কুমার চার কন্যা সন্তানের জনক। ইতিমধ্যে চার মেয়েকেই পাত্রস্থ করেছেন। ছেলে সন্তান না থাকায় এক মেয়ে-জামাইকে তিনি বাড়িতে নিয়ে রেখেছেন। তারাও তাকে জাল বুননের কাজে সহযোগিতা করে থাকে। বছরের প্রায় সময়ই হাতে কাজ থাকে বলে তাদেরকে কোন সময় বেকার বসে থাকতে হয়না। অথচ এক সময় তাকে স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে অনেক কষ্টে জীবন কাটাতে হয়েছে। দেব কুমারের বয়স বেড়েছে, চোখের আলোও অনেক কমে গেছে, তাই বলে কাজ থেমে নেই।

তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রকার জালের মধ্যে টানা জাল, কৈয়ে জাল, পুটি জাল ও ভেসাল জালের চাহিদা বেশি। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এসকল জালের অর্ডার পান তিনি। বিশেষ করে কোটচাঁদপুর, মহেশপুর, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, দামুড়হুদা ও কুষ্টিয়া থেকে ব্যাপক কাজ আসে। এছাড়া বিভিন্ন সরকারি মৎস্য হ্যাচারীজের জালেরও জোগান দেন তিনি। একা চাহিদা অনুযায়ী মাল ডেলিভারি দিতে না পারায় অটল বিশ্বাস নামের এক শিষ্য তৈরি করেছেন তিনি।

আলোচনাকালে অটল বিশ্বাস জানান, গুরুর কাছ থেকে কাজ শিখে পরিবার পরিজন নিয়ে তিনি নিজেও স্বাচ্ছন্দে আছেন। অন্য কাজের ফাঁকে জাল বুনন ও সারা-বান্দার কাজ করে তিনিও যথেষ্ট আয় করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist