কোরবান আলী, ঝিনাইদহ

  ১৩ জানুয়ারি, ২০১৮

ঝিনাইদহে কয়েক দিনেই অর্ধশতাধিক গাছ নিধন

নিয়ম নীতির কোনো তোয়াক্কা না করে ও অভিনব কৌশল অবলম্বন করে ঝিনাইদহে নির্বিচারে গাছ নিধন অব্যাহত রয়েছে। কোন ভাবেই ‘গাছ খেকো’দের থামানো যাচ্ছে না। প্রভাবশালীদের পৃষ্ঠপোষকতায় চালানো হচ্ছে এ ধ্বংসযজ্ঞ। গত কয়েক দিনে কমপক্ষে ৬২টি মূল্যবান গাছ ক্ষতিগ্রস্থ করা হয়েছে। পরিবেশবাদীরা বলেছেন কয়েক দিনের মধ্যে গাছ কাটা বন্ধে বড় ধরনের আন্দোলনে নামাবেন তারা।

সর্বশেষ বৃক্ষ নিধনের ঘটনা ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার। এই দিন ঝিনাইদহ সড়ক বিভাগের অধিগ্রহন করা হামদহ-আরাপপুর বিকল্প সড়কের দুই পাশে থাকা বিশাল আকৃতির কয়েকটি মূল্যবান কড়াই গাছের বড় বড় ডাল কেটে ফেলা হয়েছে। সকাল থেকে শুরু করে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলতে থাকে এ কাজ। স্থানীয় সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম মোয়াজ্জেম হোসেনের নির্দেশে ওই সড়কের (মরমি কবি পাগলাকানাই গেটের কাছে) একটি বিশাল কড়াই গাছের একাংশ কেটে ফেলা হয়েছে। খবরের সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেছেন, গাছ কাটার বিষয়ে সরকারের কোন নীতিমালা আছে কিনা জানা নেই তার। তিনি আরো বলেছেন, জনৈক ব্যক্তির বাড়ির ক্ষতি হচ্ছে মর্মে আবেদনের প্রেক্ষিতে গাছটি কেটে ফেলার নিদের্শ দিয়েছেন। জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি ও জেলা প্রশাসকের নলেজে দিয়ে কাজটি করেছেন বলেও দাবী তার।

এদিকে অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলা শহরের আবুল হোসেন সড়কের জনৈক মোঃ আয়ুব আলী বিশ্বাস। জেলা শহরের শহীদ মশিউর রহমান সড়কে তার ফাঁকা জমি আছে। ওই জমির ওপর সড়ক বিভাগের একটি কড়াই গাছের ডাল রয়েছে। জমির মালিক নতুন বাড়ি তৈরীর জন্য স্থানীয় সড়ক বিভাগের কাছে গাছের ডাল কেটে ফেলার জন্য আবেদন করেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকারের নিয়ম নীতিমালা উপেক্ষা করে নির্বাহী প্রেেকৗশলী গাছটির ডাল কেটে ফেলার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। স্থানীয় সড়ক বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (চলতি দায়িত্বে) তানভীর আহমেদ সাক্ষরিত স্মারকের পত্র সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।

এলাবাসি অভিযোগ, সড়কে আরো কয়েকটি গাছ রয়েছে যা যানবাহন চলাচলের জন্য বিপদজনক হয়ে উঠেছে। কিন্তু সেই সব বিপদজনক গাছের ডাল কাটা হয়নি। আরো অভিযোগ করা হয়েছে, অনুরুপ ভাবে গাছ কেটে সড়ক বিভাগের জায়গা দখল করে অট্টালিকা নির্মান করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার একই সড়কের বড় ব্রীজ এলাকার কয়েকটি গাছের একই হাল করা হয়েছে।

স্থানীয় সড়ক বিভাগের দেয়া তথ্য মতে, ওজোপাডিকো (ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোং) এর বিদ্যুতের নতুন লাইন সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ চলছে। সূত্র মতে, বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণ ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান নিয়মিত সড়কের পাশের মূল্যবান গাছ কেটে সাবাড় করে দিচ্ছে। এসব গাছ কাটার জন্যও সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের অনুমতি কিংবা সরকারের নীতিমালা অথবা প্রধানমন্ত্রির দফতরের প্রজ্ঞাপন অনুসরণ করা হয়নি। ২০১৭ সালে কয়েক লাখ টাকার গাছ নিধন করা হয়েছে। চলতি বছরের শুরুতেই অব্যাহত রয়েছে সেই গাছ কাটা। অভিযোগ করা হয়েছে এমন ভাবে গাছের ডাল কেটে ফেলা হচ্ছে যাতে করে কা-টি সহজেই রাতের আধারে কেটে লুকিয়ে ফেলা যায়।

এবার বছরের শুরুতেই সরকারী দপ্তর ও আবাসিক এলাকায় গাছ কাটা শুরু হয়েছে। নানা অজুহাতে মুল্যবান গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। কয়েকদিন আগে বাংলাদেশ টেলিভিশন ঝিনাইদহ আঞ্চলিক উপ-কেন্দ্র থেকে গাছ কেটে বিক্রি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা দিপক কুমার মালাকার বিনা টেন্ডারে প্রায় ২৫টি গাছ ক্ষতিগ্রস্থ করেছেন। ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা মহাসড়কের গোপিনাথপুর এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) এ উপকেন্দ্র।

এখানেই শেষ নয়। ঝিনাইদহ সদর উপজেলা পরিষদ ও আবাসিক এলাকাসহ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার বাসভবনের ভিতরের সৌন্দর্য বর্ধনের নামে চলছে গাছ নিধন। গত বুধবার এ খবর ছড়িয়ে পড়লে কয়েকজন সংবাদ কর্মি ছুটে যান সেখানে। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার অপরাহ্নে সংশ্লিষ্ট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল আলীম বলেন, পরিষদের মাসিক সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে পরিষদ ক্যাম্পাসের গাছের কিছু ডাল কাটা হয়েছে। কেটে ফেলা ডাল গুলো শিগগিরি নিলাম করা হবে। এর জন্য একটি নিলাম কমিটি গঠন করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। অনুমান ২০ থেকে ২৫ টি গাছ নেড়া করে দেয়া হয়েছে। হঠাৎ করে গাছের ডাল কাটা কিংবা ছেটে ফেলার সিদ্ধান্ত কেন গ্রহন করা হলো, এমন প্রশ্ন ছিল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে। তবে তিনি এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

এদিকে, ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা সড়কের অর্ধশত; কালীগঞ্জ উপজেলা শহরের ভুষণ স্কুলের সামনে থেকে মোবারকগঞ্জ চিনিকল পর্যন্ত সড়কের অন্তত ৩৫ শতবর্ষী কড়াই, রেনট্রি গাছ কেটে সাবাড় করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। প্রভাবশালী মহল গাছগুলো কাটার জন্য নানা ফাঁকফোঁকর খুঁজছেন। জেলা শহরের কেন্দ্র স্থলের বিশাল আকৃতির ৩টি মূল্যবান কড়াই গাছের ডাল কেটে নিলামে বিক্রি করা হয়েছে। হামদহ এলাকার একটি মূল্যবান গাছ অতিসম্প্রতি কেটে ফেলা হয়েছে। এভাবে ছাটা হচ্ছে ডাল-কাটা হচ্ছে গাছ। এসব বিষয়ে জেলা পরিবেশ ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি মাসুদ আহম্মেদ সন্জু ও সহ-সভাপতি পৃথি¦ষ রঞ্জন সরকারের উচ্চ মহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, গাছ খেকো, নদী দখলবাজরা বেশ কিছু দিন ধরে নতুন নতুন রুপে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা আরো বলেন চলমান পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এতে করে সুবজ বৃক্ষে ঘেরা জেলার পরিবেশের ওপর বিরুপ প্রভাব পড়ছে। কয়েক দিনের মধ্যে গাছ কাটা বন্ধসহ নদী দখলের বিরুদ্ধে সংগঠনটি মাঠে নামবে বলেও জানান এ দুই নেতা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist