অলিউজ্জামান রুবেল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে গেল বছরে ১১০ অস্ত্র উদ্ধার
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্ত এলাকাগুলো চোরাচালানের অনেকটা নিরাপদ রুটে পরিণত হয়েছে। কোন রকমেই বন্ধ হচ্ছে না অস্ত্রের চোরাচালান। এদের প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী যতটা তৎপরÑ তারচেয়েও বেশি বেপরোয়া চোরাচালানিরা। গত এক বছরে শতাধিক আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে, আটক হয়েছে অর্ধশত অস্ত্র চোরাকারবারি।
আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর তথ্যমতে, পুলিশ বিজিবি ও র্যাবের হাতে শুধু আগ্নেয়াস্ত্রসহ আটক হয়েছে প্রায় অর্ধশত চোরাকারবারি। এসব ঘটনায় উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ১১০টি অস্ত্র। আর এসব অস্ত্রের অধিকাংশই উদ্ধার করা হয়েছে শিবগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার অধিকাংশই পার্শ্ববর্তী ভারতের সঙ্গে সংযুক্ত। ওইসব এলাকায় কিছুসংখ্যক জায়গাতে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া থাকলেও সিংহভাগ জায়গাই নেই বেড়া। যার কারণে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড-বিজিবি ও বিএসএফের টহল দলের চোখ ফাঁকি দিয়ে খুব সহজেই দুই দেশের চোরাকারবারিররা একত্রিত হয়ে অস্ত্র ব্যবসা চালিয়ে আসছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার তেলকুপি, সাহাপাড়া ও গোমস্তাপুর উপজেলার বেশ কয়েকজন চোরাকারবারির সঙ্গে আলাপ করে এমনই তথ্য পাওয়া গেছে।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে তারা জানান, প্রায় দিনই রাত গভীর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চোরাকারবারিদের আনাগোনা বেড়ে যায় সীমান্ত এলাকায়। মোবাইল ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে চাহিদা মতো যে কোন অস্ত্রের অর্ডার দেয়া হয়। আর সেই মালের টাকা সামীন্ত এলাকায় থাকা একশ্রেণির হু-ি ব্যবসায়ীর মাধ্যমে চলে যায় সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীর কাছে। ভারতীয় চোরাকারবারিরা রাতের অন্ধকারে সেই মাল পৌঁছে দেয় সীমান্ত এলাকায়। সেখান থেকেই বাংলাদেশের চোরাকারবারিরা নিয়ে এসে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে থাকে। তারা আরো জানান, এসব চোরাচালানের সঙ্গে সরাসরি সহযোগিতা করে ভারতীয় কিছুসংখ্যক বিএসএফ সদস্য। সেই অস্ত্রগুলো বহন করে বাংলাদেশে নিয়ে আসে ভাড়া করা শ্রমিক। তারা টাকার বিনিময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দেয়। আর এই শ্রমিকদেরই কিছু অংশ মাঝেমধ্যে ধরাও পড়ে। কিন্তু অবৈধ টাকার বিনিময়ে খুব সহজেই ছাড়া পেয়ে আবারও জড়িয়ে পড়ে এমন কর্মকা-ে। আর তাদের ছাড়ানোর মূল ভূমিকা পালন করে অস্ত্র আমদানিকারক গডফাদাররা। কিন্তু সেই মূল হোতারা সব সময় থেকে যায় ধরাছোঁয়ার বাইরে। যার কারণে ঠেকানো যাচ্ছে না অবৈধ অস্ত্র ব্যবসা। মূল অস্ত্র ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে ধরা গেলে এই অস্ত্র ব্যবসার লাগাম অনেকটা ধরা যেত।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ ৯ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আবুল এহসান জানিয়েছে, গেল ২০১৭ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে প্রায় ৩৬টি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় অনেক চোরাকারবারিকে আটক করা হয়েছে। চোরাচালান ঠেকাতে বিজিবির প্রতিটি সদস্য কঠোর অবস্থানে থেকে দায়িত্বপালন করে যাচ্ছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ র্যাব ৫ ক্যাম্পের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গেল বছরে শুধু চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রায় ৪৬টি অস্ত্রসহ ২৭ জনকে আটক করা হয়। অস্ত্র উদ্ধার অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের পুলিশ সুপার টিএম মোজাহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, জেলায় পুলিশের অভিযানে ২৮টি অগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়। তিনি দাবি করেন মাদক, জঙ্গি ও অস্ত্র ব্যবসায়িরা জাতির শত্রু, তাদের নির্মূল করতে পুলিশ কাজ করছে।
"