জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট প্রতিনিধি
সংরক্ষণের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ
খরস্রোতা তিস্তা আর ধরলার মাঝামাঝি জেলা লালমনিরহাটের জনবসতিকে বন্যা থেকে রক্ষা করতে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সংরক্ষরণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেই সংরক্ষণ বাঁধ। সংস্কার না হলে আগামী বন্যায় জেলায় ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা এলাকাবাসীর।
লালমনিরহাট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, তিস্তা নদীর ভয়াল বন্যা থেকে কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও জেলা সদর রক্ষা করতে ২০০৩ সালে ২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ তিস্তার বাম তীরে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও দুইটি সলেডি স্প্যার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। নির্মাণকালীন সময় ৭০ ফুট প্রস্থে জমি অধিগ্রহণ করে প্রস্থে ১৪ ফুট ও ৭/১০ ফুট উঁচু এ বাঁধ নির্মাণ করা হয়। যার মধ্যে সলেডি স্প্যার-২ থেকে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের প্রায় এক কিলোমিটার কাজ না করেই সমাপ্ত করা হয়েছে। এই এক কিলোমিটারে ক্ষতি না হলেও অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণও নিয়েছেন জমি মালিকরা। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ওই বাঁধ কেটে নিয়ে আবারো ফসলি জমি, পুকুর ডোবাসহ বসতবাড়ি নির্মাণ করছেন পূর্বের জমির মালিকরা। ফলে ৭০ ফুটের এ বাঁধ এখন কোথাও কোথাও ৪/৫ ফুটে পরিণত হয়েছে। গত বন্যায় বেশ কিছু অংশে উপচে প্রবাহিত হয় বন্যার পানি। কোন কোন স্থানে স্থানীয়রাই জিও ব্যাগ দিয়ে বন্যা রক্ষা করেছেন মাত্র। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরে তা সংস্কারের কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
সলেডি স্প্যার বাঁধের দুই পাশে বসতবাড়ি করছেন পূর্বের মালিকরা। আর পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ জমি দখল নিয়েও প্রায় বিবাদ বাঁধছে স্থানীয়দের মাঝে। বাঁধের এ জমি উদ্ধার করে দ্রুত সংস্কার করা না হলে আগামী বন্যায় উপজেলাসহ জেলা শহরও বন্যার নদীভাঙনের মুখে পড়বে বলে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন।
বেদখলে যাওয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের জমি ফিরে দিতে দখলকারীদের নামে একাধিক বার নোটিশ করা হয়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড দাবি করলেও দখলকারীরা অস্বীকার করছেন। আগামী বন্যায় এ বাঁধটি রক্ষা নিয়েও চিন্তিত খোদ পানি উন্নয়ন বোর্ড। তিস্তা সড়ক সেতু থেকে কালীগঞ্জের কাকিনা রেলগেট পর্যন্ত এ বাঁধের অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের রজবপাড়া, কুটিরপাড়, চন্ডিমারী এবং সদর উপজেলার কালমাটি আনন্দ বাজার ও বাগডোরা অংশে।
অপরদিকে বিগত ভয়াবহ বন্যায় সলেডি স্প্যার বাঁধ-২ এর নিচে ফাটল দেখা দেওয়ায় তা সংস্কার করা হচ্ছে। নি¤œমানের বালু আর পাথর দিয়ে করা এ কাজের মান নিয়েও স্থানীয়দের বিস্তর অভিযোগ। বাঁধের উপর থাকা জনবসতির কারণে বন্যাকালিন সময় জরুরিভাবে বাঁধ রক্ষার সকল প্রস্তুতিতে ভাটা পড়ে। তাই বিগত বন্যায় সলেডি স্প্যারের জনবসতিকে অন্যত্র সরে যেতে বলা হলেও তা আজও বাস্তবায়ন করা হয়নি।
এ দিকে ধরলার ডান তীর রক্ষায় সাড়ে ১৮কিমি বাঁধ নির্মাণ করা হয়। যার মধ্যে গত বন্যায় ৩৫টি স্থানে এক দশমিক তিন কিলোমিটার পূর্ণাঙ্গ এবং প্রায় ৫ কিলোমিটার আংশিক ভেঙে যায়। এ বাঁধ সংস্কারের জন্য ৩৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে একটি প্রকল্প পাঠিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
সরকারি তথ্যমতে, গত বন্যায় জেলায় প্রায় আটশত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলার এসব বাঁধ আগাম সংস্কার না হলে আগামী বন্যায় দ্বিগুণ ক্ষয়-ক্ষতির আংশকা করছেন সুশীল সমাজ ও নদী পাড়ের মানুষজন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নোটিশ পাঠায়নি উল্লেখ করে আদিতমারী উপজেলার রজবপাড়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রউফ, মোজাফ্ফর আলী জানান, কর্তৃপক্ষ চাইলেই তারা বাঁধের জমি ছেড়ে দিবেন। গত বন্যায় জিও ব্যাগ দিয়ে এ বাঁধ রক্ষা করা হয়েছে। আগামী বন্যার আগে বাঁধটি সংস্কার না হলে তিস্তার গতিপথ পরিবর্তন হয়ে উপজেলা সদর হুমকীর মুখে পড়বে। তারা দ্রুত বাঁধটি সংস্কারের দাবি জানান।
লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিভাগিয় উপসহকারী প্রকৌশলী (এসডি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, ধরলা ডান তীর সংস্কারের জন্য বরাদ্ধ চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তিস্তা বাম তীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের জমি বেদখল হওয়ায় ভাঙনের মুখে পড়েছে। তবে তা উদ্ধার করতে দখলকারীদের নামে দুইটি করে নোটিশ পাঠানো হয়েছে। কিন্তু তারা জমি ছেড়ে না দেওয়ায় সমস্যা হচ্ছে। কয়েকটি স্থান ভাঙনের মুখে পড়ায় বিগত বন্যায় জিও ব্যাগ দিয়ে সাময়িক আটকানো হয়েছে মাত্র।
"