আরিফুল ইসলাম রিগান, কুড়িগ্রাম
প্রধান প্রকৌশলী আসবেন, তাই...
পরিচ্ছন্নতার নামে বিনা টেন্ডারে গণপূর্ত বিভাগের গাছ কেটে বিক্রি
প্রধান প্রকৌশলী আসবেন এই অযুহাতে কোনো নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করেই টেন্ডার ছাড়া সরকারি বেশ কয়েকটি বয়সী গাছ কেটে রাতারাতি বিক্রি করেছে কুড়িগ্রামের গণপূর্ত বিভাগ। গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলামের কুড়িগ্রাম সফর উপলক্ষে পরিচ্ছন্নতা কাজের নামে জেলার গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের অভ্যন্তরের এসব তাজা গাছ কাটা হয়। অবৈধভাবে কাটা এই গাছ রাতারতি বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সংস্থাটির কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারি। এমনকি গাছ কাটার চিহ্ন মুছে ফেলতে গাছের গোড়া তুলে সেসব স্থানে মাটি ভরাট করে দেওয়া হয়েছে। গত শনিবার ও রবিবার সরেজমিনে গণপূর্ত বিভাগে গিয়ে গাছ কেটে তা অপসারণের সত্যতা পাওয়া গেছে।
এদিকে নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মাওদুদুর রহমান, উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (উপ-বিভাগ-১) মো.শাহিনুর ইসলাম, উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো.খাইরুল ইসলাম এবং কার্যসহকারী মো.আমির হোসেনের যোগসাজসে এসব তাজা গাছ কেটে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণপূর্ত বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সাথে কথা বলে জানা গেছে।
কুড়িগ্রাম গণপূর্ত বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে, নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের অভ্যন্তরে প্রায় ৩০ বছর বয়স্ক একটি তাজা ক্রিস্টমার্চ ট্রি, ২৫-৩০ বছরের পুরনো একটি তাজা আমগাছ, একটি তাজা কাঁঠাল গাছ এবং কয়েকটি তাজা মেহগনি, নিম গাছ ও পাম গাছ সহ ১২-১৫ টি কেটে নিচ্ছেন জাহাঙ্গীর নামে একজন ঠিকাদার। পরে শনিবার ও রবিবার সন্ধায় তিনি কাটা গাছগুলো নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় চত্বর থেকে নিয়ে যান। গাছ কাটার চিহ্ন মুছে ফেলতে গাছের গোড়া তুলে সেসব স্থানে মাটি ভরাট করে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে কাটা গাছের কিছু লট গণপূর্ত বিভাগ, পার্শ্ববর্তী নুরুর স’মিল এবং পলাশবাড়ি নিমবাগান সড়কের পাশে মোস্তাফার স’মিলে রাখা হয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
গাছ কাটার কারণ জানতে চাইলে ঠিকাদার জাগাঙ্গীর জানান, তিনি গাছগুলো কিনে নিয়েছেন। টেন্ডার ছাড়া কিভাবে গাছ কিনে নিলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ওই ঠিকাদার জানান, অফিসের কর্মকর্তাদের অনুমতি নিয়ে আমরা কয়েকজন মিলে এসব গাছ কিনে নিয়েছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণপূর্ত বিভাগ, কুড়িগ্রামের কয়েকজন কর্মচারি জানান, যে গাছগুলো কাটানো হয়েছে সেগুলো না কাটিয়েও কাজ করা যেত। বন বিভাগের অনুমোদন ও টেন্ডার করা ছাড়া এভাবে গাছ কাটা সরকারি নিয়মের লঙ্ঘন।
সরকারি গাছ কাটার নিয়ম সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা বন কর্মকর্তা মো. সাদিকুর রহমান জানান, বন বিভাগ কর্তৃক মূল্য নির্ধারণের পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অনুমতি সাপেক্ষে একটি কমিটি গঠনের মাধ্যমে টেন্ডার কিংবা নিলাম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকারি গাছ কেটে বিক্রি করতে হবে। এর বিকল্প কোনও বিধান নেই।
সরকারি আইন অমান্য করে গাছ কেটে বিক্রির কথা স্বীকার করে গণপূর্ত বিভাগ, কুড়িগ্রামের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (উপ-বিভাগ-১) মো.শাহিনুর ইসলাম জানান, সরকারি নিয়ম মেনে কাটতে গেলে অনেক সময়ের প্রয়োজন। আগামী ১১ জানুয়ারি থেকে ১৮ জানুয়ারির মধ্যে আমাদের প্রধান প্রকৌশলী কুড়িগ্রাম সফরে আসার কথা রয়েছে। তাই অফিস চত্বরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য কিছু গাছ কেটে বিক্রি করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে কুড়িগ্রাম গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মাউদুদুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
কুড়িগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্রাহাম লিংকন জানান, অবৈধ ভাবে গাছ কর্তন ও অপসারণ করা সম্পূর্ণভাবে আইনের লঙ্ঘন। এটি অসদাচারণের শামিল।
টেন্ডার ছাড়া সরকারি গাছ কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান জানান, বিষয়টি নিয়ে আমি গণপূর্ত বিভাগ কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে কথা বলবো।
"