গাজী শাহনেওয়াজ

  ১৭ মার্চ, ২০২০

‘মুজিব সারা বাংলায়’

হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী মুজিববর্ষ ঘিরে দেশজুড়ে সাজসাজ রব এবং রাজধানীতে বর্ণিল আলোকসজ্জা। নগরীর সরকারি দফতর থেকে শুরু করে অভিজাত হোটেলগুলো সেজেছে বর্ণিল আলোকসজ্জায়। রাস্তার দুই পাশ ও মোড়ে মোড়ে শোভা পাচ্ছে বাহারি রঙের আলোর ঝলকানি। বাজছে ‘রাজনীতির কবি’ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ। দেয়ালে, সড়ক দ্বীপে মহান স্বাধীনতার স্থপতির বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের আলোকচিত্র। ‘কে বলে মুজিব নেই, মুজিব সারা বাংলায়।’

রাজধানী ঘুরে দেখা গেছে, কয়েক দিন ধরে ঢাকা রূপ নিয়েছে আলোর নগরীতে। নগরীর প্রধান সড়ক, স্থাপনাগুলোয় শোভা পাচ্ছে বাহারি রঙের আলো। বর্ণিল আলোকসজ্জায় চোখ জুড়িয়ে যাচ্ছে। বাদ যায়নি রাস্তার মোড়, ল্যামপোস্টও। আর এ দৃশ্য দেখতে মধ্যরাতেও এসেছেন অনেকে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর এমন আয়োজন দেখতে পেয়ে অনেকেই জানিয়েছেন তাদের সন্তুষ্টির কথা। আর মুজিববর্ষের সব আয়োজনের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি যথাযথ সম্মান জানানোর পাশাপাশি নতুন প্রজন্ম বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস জানবেÑ এমনটাই প্রত্যাশা সাজসজ্জা দেখতে আসা ছাত্র-যুবকদের।

বিজয় সরণিতে বসেছে কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রোর উক্তি নিয়ে ৬০ ফুট উচ্চতার প্রতীকী হিমালয়। এই ভাস্কর্য ঘিরে এখন সেলফি তোলার উৎসব। সারা দিনই দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা গেছে।

সেখানে উপস্থিত হাসান আলী বলেন, রাজধানীর সাজসজ্জা দেখে মনে হচ্ছে আমরা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গেই আছি। ফিদেল ক্যাস্ত্রোর যেন আমাদের সামনেই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কথা বলছেন।

প্রসঙ্গত, ১৯৭৩ সালে আলজেরিয়ায় জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের (ন্যাম) চতুর্থ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ ও কিউবা ছিল। সে সময় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল ক্যাস্ত্রোর সাক্ষাৎ হয়। ওই সময় তিনি বঙ্গবন্ধুকে আলিঙ্গন করে বলেছিলেন, ‘আই হ্যাভ নট সিন দ্য হিমালয়েজ। বাট আই হ্যাভ সিন শেখ মুজিব। ইন পারসোনালিটি অ্যান্ড ইন কারেজ, দিস ম্যান ইজ দ্য হিমালয়েজ। আই হ্যাভ দাজ হ্যাড দ্য এক্সপিরিয়েন্স অব উইটনেসিং দ্য হিমালয়েজ।’ অর্থাৎ, ‘আমি হিমালয় দেখিনি। তবে শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসে এই মানুষটি হিমালয়ের সমান। এভাবে আমি হিমালয় দেখার অভিজ্ঞতাই লাভ করলাম।’

রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে কথা হয় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ছাত্রের সঙ্গে। তারা দল বেঁধে মুজিববর্ষের সাজসজ্জা দেখতে এসেছেন। তারা বলেন, পুরো রাজধানীতেই এক অন্যরকম পরিবেশ। খুবই ভালো লাগছে। শুধু তা-ই নয়, প্রদর্শনীগুলো দেখে আমরা অনেক কিছুই জারতে পারছি। বঙ্গবন্ধুর ভাষণগুলো শুনতে পাচ্ছি।

সংসদ ভবন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, মুজিববর্ষ উপলক্ষে সংসদ ভবন ও আশপাশের এলাকাকে নতুন সাজে সাজানো হয়েছে। সংসদের দক্ষিণ পাশে বাজানো হচ্ছে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ। সংসদের লবিতে ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় নৌকার ওপর বঙ্গবন্ধুর পোট্রেট-সংবলিত প্ল্যাকার্ড স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে ১৯৫২ থেকে শুরু করে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর ভূমিকাগুলো তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া আলোকসজ্জার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন সময়ের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠছে। জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে অনুষ্ঠানের কিছু অংশ এখানেই দেখানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, মুজিববর্ষ উদ্যাপনে জাতীয় কমিটির বাইরে জাতীয় সংসদের পক্ষ থেকে বিশেষ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। সংসদ ভবনকে ঘিরে আলোকসজ্জার পাশাপাশি নানা প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। এ ছাড়া দৃষ্টিনন্দন লেজার শোর আয়োজন থাকছে।

সংসদ চত্বরে পুরো অনুষ্ঠান সাজানোর কাজ পেয়েছে এশিয়াটিক সোসাইটি। এশিয়াটিক সোসাইটির কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ জানান, জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডের অনুষ্ঠানটি রেকডিং হয়েছে। সেই অনুষ্ঠান সংসদের স্থাপিত প্রজেকশনের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। এই অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ৫-৭ মিনিটের আতশবাজি, ফায়ারওয়ার্কস ও লেজার শো। প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলবে অনুষ্ঠানটি চলবে। তবে অনুষ্ঠানটি সবার জন্য উন্মুক্ত নয়। নির্ধারিত গণমাধ্যম এই অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।

এদিকে, জেলা-উপজেলায় এমপিদের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু প্রতিকৃতিতে ফুল দেওয়া, মিলাদ-মাহফিল এবং ভাষণ নিয়ে আলোচনা ঘরোয়া পরিবেশে চলবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের সরকারদলীয় হুইপ ইকবালুল রহিম।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আগামী বছরের ১৭ মার্চ পর্যন্ত রাজধানী ছাড়াও জেলা ও উপজেলা ডিজিটাল স্ক্রিনে প্রদর্শনীর আয়োজন থাকছে। সেখানে স্থাপন করে নতুন নতুন কনটেন্ট সরবরাহ ও প্রচার করা হবে। সারা দেশে এক হাজার ডিজিটাল ডিসপ্লে স্থাপন করে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ওপর কনটেন্ট প্রচার করা হচ্ছে। রাজধানী থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অডিও ভিজ্যুয়াল প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার পাশাপাশি আওয়ামী লীগসহ অন্য রাজনৈতিক ও সমাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

রাজধানীর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ অন্য বিমানবন্দরের ভেতরে-বাইরে সাজসজ্জা যাত্রীদের চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে। শাহজালালে সর্বকালের সেরা ব্র্যান্ডিং ও সাজসজ্জার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরের বাইরের অংশ থেকে শুরু করে প্রতিটি বোর্ডিং ব্রিজে লাগানো হয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি এবং তার জীবনচিত্র। প্রোজেক্টর বা ডিজিটাল স্ক্রিন স্থাপন করে সেগুলোতে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হচ্ছে। বাংলাদেশ সম্পর্কে বিদেশিদের আকৃষ্ট করতে দেশের দর্শনীয় স্থানগুলোর বর্ণনা তুলে ধরা হয়েছে বিলবোর্ডে। পুরো বিমানবন্দরে বর্ণিল আলোকসজ্জা করা হয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীর ব্যাংকপাড়া মতিঝিলেও রয়েছে বর্ণিল আয়োজন। সুউচ্চ ভবনগুলোতে আলোকসজ্জা ছাড়াও নানা সাজসজ্জা করা হয়েছে। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ও জীবনচিত্র সেখানে ফুটে উঠেছে।

এদিকে, রাজধানী জুড়ে কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। মোড়ে মোড়ে সতর্ক অবস্থায় দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরকে ঘিরে নিরাপত্ত একটু বেশি। সেখানে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিশিষ্টজনরা শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। শ্রদ্ধা নিবেদন ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর জন্মক্ষণে আতশবাজি প্রদর্শনী ও ফানুস উত্তোলনের কর্মসূচি রয়েছে। ধানমন্ডি ছাড়াও রাজধানীর রবীন্দ্র সরোবর, হাতিরঝিল, ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, টিএসটি ও জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় আতশবাতি প্রদর্শনী হবে।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, বড় ধরনের জনসমাগম পরিহার করে উৎসবমুখর পরিবেশে মুজিববর্ষ উদ্যাপন করতে হবে। সেজন্য যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এই উৎসবের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে পারলেই এই উৎসব তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close