নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৭ মার্চ, ২০২০

‘আর দাবায়ে রাখতে পারবানা’

বিশাল আকাশের মতো চওড়া কপাল, শিশুর মতো সরল মুখাবয়ব, মোটা কালো ফ্রেমের চশমার আড়ালে গভীর দুচোখে থই থই ভালোবাসার প্লাবন, সাদা ধবধবে পাজামা-পাঞ্জাবিতে অবিচল দাঁড়িয়ে তর্জনী তুলে ভুখা-নাঙ্গা, বঞ্চিত, শোষিত মানুষগুলোর বুকে আত্মবিশ্বাস জাগিয়েছিলেন মানুষটি, বলেছিলেন, ‘আমাদের কেউ দাবায়া রাখতে পারবা না।’ তিনি শুদ্ধ চর্চিত বাংলা ভাষায় বলেননি, তিনি অতি সাধারণ সহজবোধ্য ভাষায় উচ্চারণ করতেন প্রতিটি কথা। তার প্রতিটি উচ্চারণই শ্রেষ্ঠ কবিতা হয়ে উঠত। যে কবিতা অতি প্রাকৃত নয়, এ কবিতা জীবনের, জীবনযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া গণমানুষের। তার সত্তাজুড়ে ছিল বাংলার সাধারণ মানুষের হৃদয়ের আকুতি, বাঁধভাঙা মুক্তির আকাক্সক্ষার কাব্য। তিনি পিছু হটেননি, দাঁড়িয়েছেন, লড়েছেন, জয় করেছেন। আর মীরজাফরের বংশধর কুলাঙ্গাররা রাতের আঁধারে স্বাধীন বাংলার আকাশটাকে পিতার রক্তে রক্তাক্ত করে দিয়েছে। নেকড়ের দল সদ্য জন্ম নেওয়া বাংলাদেশের বুকে এঁকে দিয়েছে চিরকালের ক্ষত চিহ্ন। তিনি বাঙালির বুকের ধন, বঙ্গবন্ধু।

বিশ্বাসঘাতক খন্দকার মোশতাক আর তার দল ভেবেছিল, মৃত্যুতেই পরিসমাপ্তি ঘটবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের। না, তিনি আরো শক্তিশালী হয়ে মিশে গেছেন ১৭ কোটি বাঙালির হৃদয়ে। বইয়ের পাতাজুড়ে, খবরের কাগজে, বক্তব্যে, সেমিনারে, মিছিলে, সেøাগানে তিনি বারবার সামনে দাঁড়িয়েছেন, বলেছেন বাংলা আর বাঙালির কথা। বঙ্গবন্ধু ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন, খেটে খাওয়া মজুর, প্রান্তিক মানুষগুলোই আসল মানুষ। তার চারপাশে ঘুরঘুর করা মৌলবিদের, চাটুকারদের, ঘুষখোরদের চিনতে পেরেছিলেন তিনি। উদাত্ত কণ্ঠে উচ্চারণ করেছিলেন এ কয়টি চরণ, ‘মুখে হাসি বুকে বল, তেজে ভরা মন মানুষ হইতে হইবে মানুষ যখন...’। হুশিয়ার করে বলেছিলেন, ‘এই বাংলার মাটি থেকে দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, মুনাফাখোরদের নির্মূল করতে হবে’, তিনি মনেপ্রাণে আগাছামুক্ত করতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশকে।

বঙ্গবন্ধু ছিলেন পুরোপুরি বাঙালি। বাঙালির আশা-আকাক্সক্ষা, ত্যাগ-তিতিক্ষা, বঞ্চনা-গঞ্জনা প্রতিনিয়তই তাকে ভাবিয়ে তুলত। তার আচার-আচরণ, ভাবভঙ্গি, চিন্তা-চেতনায় ফুটে উঠত বাঙালির সুখ-শান্তি ও মুক্তির দর্শন। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশের সাত কোটি মানুষের মনের ভাব-ভাষা ছিল তার নখদর্পণে। ৭ মার্চের ভাষণের প্রতিটি কথা, প্রতিটি উচ্চারণে প্রতিধ্বনিত হয়েছিল মেহনতি শ্রমিক, কৃষক ও দেশপ্রেমী সুধীসমাজের মনের ভাব। শত শত বছর ধরে যে স্বাধীনতার স্বপ্ন বুনেছে বাঙালি; সংগ্রাম করছে, রক্ত দিয়েছে এবং তার ফলে স্বাধীনতার যে প্রত্যাশাটি উন্মুখ হয়ে উঠেছে, তাকে ভাষা দিয়েছেন রাজনীতির মহান এই কবি। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, ভয়-ত্রাস এবং আশা ও সম্ভাবনায় উদ্বেল সাত কোটি মানুষকে এক কঠিন সংকটময় মুহূর্তে এই জাদুকরী ভাষণে রাজনৈতিক চেতনার একটি উত্তুঙ্গ স্তরে এনেছেন এবং স্বাধীনতার জন্য মরণপণ অঙ্গীকারদীপ্ত মুক্তি সেনানিতে রূপান্তরিত করেছেন।

সেই ধারাবাহিকতায় তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। ‘অদম্য বাংলাদেশ, সময় এবার এগিয়ে যাবার’ এই সেøাগানে বাংলাদেশের অভাবনীয় অর্জনকে বহির্বিশ্বে তুলে ধরছে সরকার। গত ১০ বছরে উন্নয়নের রোল মডেল চিহ্নিত হয়ে এরই মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্বের নজর কেড়েছে। এখন আর কেউ বঙ্গবন্ধুর বাঙালিকে দাবিয়ে রাখার সাহস দেখায় না।

এখন ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলজুড়ে ডিজিটাল উন্নয়নের ছোঁয়া। লক্ষ্য রূপকল্প-২০৪১। এরই মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছানোর স্বপ্ন দুয়ারে। আর এখানে বাতিঘর বঙ্গবন্ধুই। মুজিববর্ষে দেশ-বিদেশে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর বছরব্যাপী বর্ণাঢ্য কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে একদিকে সারা বিশ্বে যেমন বীর বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরা হবে, অন্যদিকে সরকারের ভুল-ত্রুটি শুধরে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এগিয়ে যাওয়ার শপথ নেবে জাতি। যে বঙ্গবন্ধুকে দাবিয়ে রাখতে তাকে পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সপরিবারে (বিদেশে থাকায় বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা) হত্যা করা হয়Ñ সেই বঙ্গবন্ধুই আজ বিশ্বের আদর্শ। তাকে অনুসরণ করেন বিশ্বনেতারা। তারই বক্তব্য (৭ মার্চের ভাষণ) এখন আন্তর্জাতিক সম্পদ; বিশ্বপ্রামাণ্য ঐতিহ্য।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close