নিজস্ব প্রতিবেদক
পরিচ্ছন্নতার অভিযানে ঝাডূ হাতে দুই নেপালি
পাহাড় ঘেরা অপার সৌন্দর্যের দেশ নেপাল। যেখানে টুকরো টুকরো প্রশান্তি ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে অবিরত। সবুজের মাঝে মানুষগুলো যেন এক টুকরো বিশুদ্ধ জীবনে বাস করে। সেদেশের মানুষ নিজেদের প্রকৃতিকে সবসময় আগলে রাখে। বিশুদ্ধতা আর প্রশান্তির ছোয়া তাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। তেমনি দুজন নেপালির নাম রাজমান ও শিলা।
নেপালের রাজধানী কাঠমা-ুর একটি গ্রামে বাস তাদের। একই মহল্লায় থাকেন বলে পরিচয়। শিলা কাজ করতেন একটি রেস্টুরেন্টে, আর রাজমানের পেশা চাকরি। দুজনের মন-মানসিকতা এবং চিন্তা একই বলে পরস্পর হয়েছেন ভালো কাজের সঙ্গী। দীর্ঘ আট বছর ধরে তারা নেপালে পরিষ্কার অভিযান চালিয়ে যাচ্ছেন। হাতে ঝাড়– আর কাঁধে ব্যাকপ্যাক। এক জায়গা পরিষ্কার করেই ছুটে চলেন অন্য জায়গায়।
এভাবে স্বেচ্ছায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মিশন চালিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। চার বছর আগে বাংলাদেশের কোনো একজন সাংবাদিকের সঙ্গে পরিচয় হয় তাদের। সেই সাংবাদিকের কাছেই বাংলাদেশের গল্প শোনেন, জানতে পারেন ঢাকার অবস্থা। এরপর তারা মনস্থির করে ফেলেন ঢাকায় আসার। পরিষ্কার অভিযানের ব্যানার হাতে রাজমান ও শিলা গতকাল সোমবার সকালে রাজধানীর পল্টন মোড় থেকে প্রেস ক্লাবে যাওয়ার পথে দেখা গেল, ঝাড়– হাতে একজন বয়স্ক পুরুষ আর একজন মহিলা রাস্তা ঝাড়– দিচ্ছেন। তাদের বাঙালি বলে মনে হলো না। কৌতূহলে কাছে গিয়ে পরিচয় জানতে চাইলে আধো ভাঙা ইংরেজি এবং হিন্দি ভাষায় নিজেদের নাম বললেনÑরাজমান ও শিলা।
ঢাকার রাস্তার ময়লা পরিষ্কার করতে তারা এসেছেন গত ৩০ নভেম্বর। কীভাবে আসলেন জানতে চাইলে বললেন, ‘প্লেনে করে।’ প্লেনের ভাড়া কীভাবে জোগাড় করলেন জানতে চাওয়া হলে শিলা জানান, পরিবারের মানুষ, আত্মীয়-স্বজনের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তারপর এসেছি। ভালো কাজের জন্য তারা (আত্মীয়-স্বজন) নিজে থেকেই আমাদের টাকা দিয়েছে। এই টাকা ফেরতও দিতে হবে না।
ঢাকায় আসার পর থেকেই রাজমান ও শিলা রাস্তা পরিষ্কার করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। পরিষ্কার অভিযান চালাতে ঢাকাকে বেছে নিলেন কেন? জানতে চাইলে রাজমান বলেন, ‘মানুষের কাছে শুনেছি ঢাকা অনেক নোংরা। এই শহরের দেখভাল ঠিক মতো হয় না। তাই আমরা নিজেরাই এসেছি। এর দুইটি কারণÑ আমাদের দেখে মানুষ নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে জানবে এবং নিজেই নিজের শহর পরিষ্কার রাখবে।
ঢাকায় এসে থাকার ও খাবারের কোনো চিন্তা নেই তাদের। যেখানে কাজ করতে করতে রাত হয়, সেখানেই তাঁবু করে থাকছেন তারা। আর খাচ্ছেন কখনো ফুটপাতে বসে, কখনো নতুন করে পাতানো কেনো বন্ধুর বাসায়। কয়েক দিন একটি মসজিদেও থেকেছেন। পথে কাজ করতে দেখে একবন্ধু তাদের খাবারের বন্দোবস্ত করেন। পরে তিনদিন পল্টন এলাকার একটি মসজিদে থাকার ব্যবস্থা করে দেন বলে জানান রাজমান ও শিলা। বাংলাদেশের খাবার সম্পর্কে জানতে চাইলে শিলা বলেন, খাবার খুবই চমৎকার। কয়েক দিন খুব মজা করে খেয়েছি। তারা দুজনই আগামী তিন মাস বাংলাদেশে থাকার কথা ব্যক্ত করেন। এই কয়েক মাসে রাস্তা যতটুকু পরিষ্কার করা যায়, তারা করবেন। প্রয়োজনে তারা ঢাকার বাইরেও যাবেন বলে জানান।
এই মহৎ কাজের ব্যাপ্তি এখানেই শেষ নয়। তারা জানান, নেপাল থেকে প্রথমেই এসেছেন বাংলাদেশে। এখান থেকে তারা যাবেন শ্রীলঙ্কায়। বাকিটা জীবন দেশ থেকে দেশ শুধু পরিষ্কার করে যেতে চান এই দুই নেপালি। তাদের নিজেদের একটি সংগঠন আছেÑ নাম ‘আই’। ‘আই’ মানে আমি। আর আমি নিজেই পারি নিজের দেশ পরিষ্কার করতে এই লক্ষ্য নিয়ে তাদের পথচলা, জানালেন রাজমান ও শিলা।
"