নিজস্ব প্রতিবেদক
ঢাকার যানজট নিরসনে এবার পকেট পার্কিং
রাজধানীর যানজট নিরসনে নতুন ৪৩টি পার্কিং পয়েন্ট তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। এসব পার্কিং পয়েন্ট তৈরি হলে যানজট অনেকটাই কমে আসবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ও ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
ডিএমপির ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীর সড়কে অপরিকল্পিত পার্কিংয়ের কারণে যানজট ও জনদুর্ভোগ নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে। নগরীর অন্তত ৮০ শতাংশ ভবনে নেই কোনো গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা। এসব ভবনের তালিকায় সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব বহুতল ভবনে পার্কিংয়ের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় ওইসব এলাকায় যানজট লেগেই থাকে। সড়কের অর্ধেকই থাকে পার্কিং করা গাড়ির দখলে। আর বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত ভবনে পার্কিং ব্যবস্থা নেই বললেই চলে।
গুলিস্তান এলাকার উদাহরণ দিয়ে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, জিরো পয়েন্ট থেকে বংশাল যেতে সড়কের দুই পাশেই রয়েছে বড় বড় বাণিজ্যিক ভবন। এখানে শত শত টাইলস ও হার্ডওয়্যারের দোকান আছে। তারা গাড়িগুলো সড়কের ওপরই দাঁড় করিয়ে রাখে। এতে রাস্তার অর্ধেক অংশ অব্যবহৃত থাকে। তা ছাড়া বাণিজ্যিক ভবনগুলোর স্বীকৃত পার্কিং স্পেসেও গড়ে তোলা হয়েছে দোকান, ব্যবসাসহ নানা স্থাপনা। আবাসিক ভবনগুলোতেও ফ্লোর স্পেস অনুযায়ী পার্কিংয়ের জায়গা রাখা হচ্ছে না। ফলে রাস্তার ওপর অপরিকল্পিতভাবে গাড়ি পার্কিং করায় নগরজুড়ে বাড়ছে যানজট। যানজট দূর করতে নতুন করে পার্কিংয়ের জায়গা নির্দিষ্ট করা হচ্ছে।
গত সপ্তাহে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে (ডিএসসিসি) একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় রাজধানীর যানজট নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। এ ছাড়া রাজধানীতে যেসব বড় উন্নয়ন প্রজেক্ট চলছে, সেসব এলাকার সড়ক ও পথচারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেও বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে।
ডিএসসিসি ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা মহানগরীতে যে পরিমাণ সড়ক থাকার কথা, তা নেই। তাই যানজট লেগেই থাকে। এ ছাড়া গাড়ি পার্কিং ব্যবস্থা নেই। তাই ফ্লাইওভারের নিচের পরিত্যক্ত জায়গা, প্রশস্ত সড়ক এবং বিভিন্ন এলাকার পরিত্যক্ত জায়গাকে আমরা পার্কিং হিসেবে ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ নিয়ে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগসহ অন্যান্য সেবাদান প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পার্কিংয়ের কিছু জায়গা করা হয়েছে। তবে এটি আরো পরিকল্পিতভাবে করা হবে।’ কেবল মতিঝিল, দিলকুশা, গুলিস্তান এলাকাই নয়, সচিবালয়ের পাশের এলাকা, ধানমন্ডি, কারওয়ান বাজার, তেজগাঁও, বনানী, গুলশান, উত্তরাসহ গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার চিত্রও একই রকম। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শপিং মল, রেস্তোরাঁ, শিক্ষাঙ্গনের সামনের সড়কগুলো থাকছে ব্যক্তিগত গাড়ির দখলে। মামলা ও জরিমানা করেও অবৈধ পার্কিং বন্ধ করতে পারছে না পুলিশ। তাই পুলিশ পার্কিংয়ের জায়গা খুঁজছে। অন্তত ৪৩ থেকে ৪৫টি ছোট পার্কিং স্পট করা হবে। যেখানে অল্প সময়ের জন্য হলেও গাড়ি দাঁড়াতে পারবে।
ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের এই কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা মহানগরীতে প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ লাখ গাড়ি চলাচল করে। এ ছাড়া রয়েছে রিকশা, হিউম্যান হলার, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, মালবাহী ভ্যান ও ঘোড়ার গাড়ি। রকমারি যানবাহন চলাচল করায় রাজধানীর যানজট তীব্র হয়। তাই পার্কিং নীতিমালা করলেও তা বাস্তবায়ন করা যায় না। তবে মেট্রোরেল প্রকল্প ও ফ্লাইওভার প্রকল্পগুলো ঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলে এই সংকট কমে আসবে।
ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের (দক্ষিণ) যুগ্ম কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, আমরা কিছু পার্কিংয়ের জায়গা ইতোমধ্যে করেছি। আরো করার পরিকল্পনা আছে। এগুলোকে আমরা পকেট পার্কিং বলে থাকি। সিটি করপোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে এসব পার্কিং জায়গা করা হচ্ছে। ফ্লাইওভারের নিচে পরিত্যক্ত জায়গা, প্রশস্ত সড়কের পাশের জায়গা, বিভিন্ন এলাকার পরিত্যক্ত জায়গায় এসব পার্কিং করা হবে।
"