নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২২ জুলাই, ২০১৭

নাগরিক বর্ষা উৎসব

প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় এগিয়ে আসার আহ্বান

আষাঢ় শেষে এখন শ্রাবণ মাস চলছে। দুয়েক দিন থেমে থেমেই চলছে টানা বৃষ্টি। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে ভাসছে লোকালয়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যাসহ পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটছে। এই দুর্যোগের কালে প্রকৃতি সুরক্ষার আহ্বান জানিয়েছে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। সাংস্কৃতিক এ সংগঠনটি গতকাল শুক্রবার রাজধানীতে উদ্যাপন করেছে বর্ষা উৎসব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় এই উৎসব থেকে অপরিকল্পিত উন্নয়ন পরিকল্পনা আর মানবসৃষ্ট দুর্যোগের দায় মেনে নিয়ে প্রাণ প্রকৃতি রক্ষায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয় নাগরিকদের প্রতি।

সাংস্কৃতিক পরিবেশনা চলাকালেই সীতাকু-ের জঙ্গল সলিমপুরে পাহাড়ধসে শিশুসহ পাঁচজনের মৃত্যুর খবর আসে। বর্ষা কথন পর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের কণ্ঠেও ছিল সেই শোকের প্রকাশ। প্রকৃতি সুরক্ষার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আশা করব, মানুষ প্রকৃতিকে ভালোবেসে প্রকৃতি সুরক্ষা, ঋতুবৈচিত্র্য রক্ষায় যা কিছু প্রয়োজনীয়, করণীয় সবকিছু করবে। প্রকৃতির ওপর অত্যাচার, নিপীড়ন বন্ধে তারা আরো সচেতন হবেন।

ঋতুবৈচিত্র্যের দেশ বাংলাদেশের নাগরিক মানুষও বর্ষা উৎসবে যোগ দিয়ে ‘বর্ষার মতো সজীব আর উদার’ হয়ে উঠবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

বর্ষা প্রতি বছর পলিমাটি নিয়ে এসে উর্বর করে মাটি। ধুয়ে দেয় সব ময়লা। বর্ষার মতো সজীব হয়ে ওঠে দেশবাসী মনের সব সংকীর্ণতা ঝেড়ে ফেলবেন, সংকট নিরসনে এগিয়ে এসে আরো উদার হবেন, এমনই আশা করি। নগরকেন্দ্রিক জীবনযাত্রায় শিশু-কিশোরদের প্রকৃতি-সংযোগ ঘটাতে বর্ষা উৎসবের মতো আয়োজনের গুরুত্বও নিজের বক্তৃতায় তুলে ধরেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।

অনুষ্ঠানে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, বর্ষা বাঙালির জীবনে এক আশীর্বাদ। আমাদের বোকামি আর অপরিকল্পিত উন্নয়নের কারণে বর্ষা হয়ে উঠে অভিশাপ। খালবিল ভরাট করছি, নদীগুলো ঠিকমতো ড্রেজিং হচ্ছে না, তলদেশ ভরাট হচ্ছে-বর্ষাকে আসলে যেভাবে গ্রহণ করা উচিত, আমরা তা করছি না। বর্ষাকে, প্রকৃতিকে মানুষের কাজে ব্যবহার করতে হবে।

অনুষ্ঠানের সভাপতি সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর সহসভাপতি অধ্যাপক নিগার চৌধুরী বলেন, বর্ষা উৎসবের মতো অসাম্প্রদায়িক উৎসবে যোগ দিয়ে উৎসবপ্রিয় বাঙালিরা সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হবেন, তারাই প্রতিহত করবেন সাম্প্রদায়িকতা।

অনুষ্ঠান শেষে শিশু-কিশোরদের মধ্যে বনজ, ফলদ ও ওষধি গাছের চারা বিতরণ করে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী।

উৎসবের সকালে শিল্পী বিজন চন্দ্র মিস্ত্রীর পরিবেশনায় রাগ সংগীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। এরপর রবীন্দ্রনাথের গানের সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে শিশুশিল্পীরা। আবৃত্তিশিল্পী মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল পরিবেশন করেন শামসুর রাহমানের ‘হঠাৎ বৃষ্টি এল’ কবিতাটি।

এরপর মঞ্চে আসে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর দলীয় পরিবেশনা ‘এসো শ্যামল সুন্দর’। তারপর রবীন্দ্রসংগীত ‘মন মোর মেঘের সঙ্গী’ গানের সঙ্গে পরিবেশিত হয় দলীয় নৃত্য। বহ্নিশিখার দল গেয়ে শোনায় নজরুলসংগীত ‘মেঘের ডম্বরু বাজে’। তারপর ‘পাতাঝরা বৃষ্টি বলো কেন এনেছো’ গানটির সঙ্গে দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নৃত্যমঞ্চ। নৃত্যাক্ষের দলীয় পরিবেশনা ছিল নজরুলের ‘রিমঝিম রিমঝিম ঝিম ঘন দেয়া বরষে’ গানের সঙ্গে।

একক সংগীতপর্বে আবু বকর সিদ্দিক শোনান উকিল মুন্সীর গান ‘আষাঢ় মাইস্যা ভাসা পানিরে’, মামুন জাহিদ খান শোনান আধুনিক গান ‘বরষা তুমি অমন ভাবে ঝরোনা, সঞ্জয় কবিরাজ শোনান নজরুলসংগীত ‘পরদেশী মেঘ’, আঞ্জুমান ফেরদৌস কাকলী শোনান ডি এল রায়ের ‘আমরা মলয় বাতাসে’। এরপর মহিউজ্জামান চৌধুরী ময়না, শ্যামা রহমান, মাহজাবীন রহমান শাওলী, মো. শমসের, নবনীতা জাইদ চৌধুরী অনন্যা, রতœা সরকার, শ্রাবণী গুহ রায়রা একক সংগীত পরিবেশন করেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist