হাসান ইমন

  ২৯ মার্চ, ২০১৭

স্থায়ী কার্যালয় নেই ৫০ কাউন্সিলরের

রাজধানী ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের (উত্তর ও দক্ষিণ) ৫০ ওয়ার্ডে নেই কাউন্সিলরদের স্থায়ী কার্যালয়। অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে তারা ব্যায়ামাগার, কমিনিউটি সেন্টার, শিশুপার্ক, স্বাস্থ্য ক্লিনিক, প্রাথমিক বিদ্যালয় ও নিজের বাড়িকে ব্যবহার করছেন। আবার কেউ কেউ ভাড়া বাড়িতেও কার্যক্রম চালাচ্ছেন। ফলে ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের কাউন্সিলরের ইচ্ছামাফিক স্থানে তৈরি ব্যক্তিগত কার্যালয়ে গিয়ে সেবা গ্রহণ করতে হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয় স্থানীয় নাগরিকদের। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা এ অবস্থার জন্য জমি সংকটকে দায়ী করছেন। তবে ২০১৫ সালে দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন হওয়ার পর উত্তর সিটি মেয়র আশ্বাস দিলেও এখনো গড়ে ওঠেনি ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের কার্যালয়। এর আগে অবিভক্ত ঢাকার মেয়রও কাউন্সিলরদের জন্য স্থায়ী কার্যালয় নির্মাণে কোনো উদ্যোগ নেননি।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কমিউনিটি সেন্টারে ৫০, মার্কেটে ৫, স্বাস্থ্য ক্লিনিকে ১, স্কুলে ১, শরীরচর্চা কেন্দ্রে ৫ ও নিজস্ব কার্যালয়ে ৫টি ওয়ার্ড কার্যালয় রয়েছে। অথচ এসব প্রতিষ্ঠান নাগরিকদের বিশেষ সেবা দেওয়ার জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩, ৯, ১৪, ১৫, ১৯, ২৭, ৩৭, ৫২, ৫৩, ৫৪, ৫৫, ৫৬ ও ৫৭ ওয়ার্ডে কোনো কার্যালয় নেই। এসব ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের অফিস করতে হয় ভাড়া বাড়িতে। যারা নিজ বাড়ি কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছেন তাদের বিরুদ্ধেও রয়েছে নানা অভিযোগ। জনসাধারণ নানা সমস্যা নিয়ে গেলেও কাউন্সিলরকে অফিসে পাওয়া যায় না। থাকেন বাসায়, সময় কাটান পরিবারের সঙ্গে। কেউ কার্যালয়ে গেলে সচিবরা কাগজপত্র ওপরে পাঠিয়ে দেন। আবার কাউন্সিলর পরিবর্তনের সঙ্গে কার্যালয় ও পরিবর্তন হয়। নিয়মিত যাতায়াত করা মানুষরা বিভ্রান্তিতে পড়েন। ডিএসসিসির ১৩নং ওয়ার্ড পল্টন কমিউনিটি সেন্টারে। একটি ওয়ার্ড কার্যালয় থাকলেও কাউন্সিলর কম সময়ই থাকেন। তিনি শান্তিনগরে তার বাড়ির নিচতলা কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করেন। ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরও তার বাড়ির নিচতলার একটি কক্ষ কার্যালয় বানিয়েছেন। ৪৪ ও ৪৫নং ওয়ার্ডবাসীকে সেবা নিতে আসতে হয় ৪৬নং ওয়ার্ডের জহির রায়হান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে। ২৩নং ওয়ার্ডে নবাবগঞ্জ পার্ক ব্যায়ামাগার, ২৬নং ওয়ার্ডে লালবাগ শরীরচর্চা কেন্দ্র ও ৩৪নং ওয়ার্ডে নাজিরাবাজার শরীরচর্চা কেন্দ্রেই বসে অফিস করতে হচ্ছে কাউন্সিলরকে।

শিশুদের শিক্ষার জন্য নির্মিত প্রাথমিক বিদ্যালয়েও রয়েছে সংস্থাটির ওয়ার্ড কার্যালয়। এটি সংস্থার ৫১নং ওয়ার্ডের আবু হাজী প্রাইমারি স্কুল। ৫৩ নম্বর ওয়ার্ডবাসীকে সেবা পেতে আসতে হয় জুরাইনের সূর্যের হাসি ক্লিনিকে স্থাপিত কাউন্সিলর কার্যালয়ে।

ডিএনসিসির ২৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরও কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছেন তার বাড়িকে। তিনি দীর্ঘদিন কাউন্সিলর থাকলেও কার্যালয় কয়েকবার পরিবর্তন করেছেন। ৩৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কার্যালয় বানিয়েছেন পার্ককে। ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বাড়িই হচ্ছে তার কার্যালয়।

জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সচিব খান মো. রেজাউল করিম বলেন, কাউন্সিলরদের স্থায়ী কার্যালয় নির্মাণের বিষয়টি চিন্তায় আছে। কয়েকটি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কয়েকটার কাজ চলছে। এগুলোতেই কাউন্সিলর কার্যালয় হবে। তাদের জন্য আলাদা ভবন গড়ে তোলা সম্ভব নয়। কারণ ডিএসসিসি এলাকায় জায়গার খুব সংকট।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। সংস্থাটির ৩৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৬টিতেই নেই নিজস্ব কার্যালয়। এগুলো হচ্ছে-৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ৯, ১০, ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ২১, ২২, ২৩, ২৫, ২৬, ২৭, ২৮, ৩০, ৩২, ৩৩ ও ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড। ফলে নিজস্ব বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কিংবা ভাড়া বাড়িতেই কাউন্সিলর কার্যালয় ব্যবহার করছেন।

নিজস্ব কার্যালয় নেই দক্ষিণের ১৯টি ও উত্তরের ১২টি সংরক্ষিত মহিলা ওয়ার্ড কাউন্সিলরের। ফলে তাদেরও অফিস নিয়ে একই পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির ৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আশরাফুজ্জামান ফরিদ বলেন, স্থায়ী কার্যালয়ের জন্য আবেদন করেছি। জমি দেখার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ওয়ার্ড কাউন্সিলর বলেন, সিটি করপোরেশন কার্যালয় ভাড়া হিসেবে যে টাকা দেয় তা আমাদের হয় না। তার চেয়ে দ্বিগুণ ভাড়ায় অফিস নিতে হয়। অতিরিক্ত টাকা আমাদের পকেট থেকে দিতে হয়।

এ বিষয়ে জানতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হককে বারবার ফোনে চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তবে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেসবাহুল ইসলাম বলেন, জমি সংকটে স্থায়ী কার্যালয় নির্মাণ করা হয়নি। কাউন্সিলরদের জমি খুঁজতে বলা হয়েছে। পেলে স্থায়ী কার্যালয় গড়ে তোলা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist