হাসান ইমন
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন
পাঠাগার আছে শুধুই নামে!
রোকনপুর পাঠাগার। পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজার-সংলগ্ন রোকনপুর কমিউনিটি সেন্টারের পঞ্চমতলায় এটির অবস্থান। তবে বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই এখানে কোনো পাঠাগার আছে। সিঁড়ি বেয়ে পঞ্চমতলায় কেউ দরকারি বইয়ের খোঁজে যাবেন, তো ঠকবেন। বই বলতে আছে স্বাধীনতাযুদ্ধের দলিলপত্র, পল্লিমা, শ্রমজীবী নারী, চাঁদে তোমার সেবাস, ফেলানী ও জান্নাতুল মাওয়া ইত্যাদি। এই হচ্ছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৭ পাঠাগারের একটির হাল। বাকিগুলোর অবস্থাও অভিন্ন। কোনোটিতে নেই বই, ভবনও জীর্ণ। নামেই পাঠাগার কোনোটি। রোকনপুর পাঠাগারের ভেতরে ঢুকতেই কথা হয় আবদুুল আলিমের সঙ্গে, যিনি এটির দেখভালের দায়িত্বে আছেন। কথা বলার পাশাপাশি চেয়ার ও টেবিল পরিষ্কার করছেন। পাঠাগারের অবস্থা জানতে চাইলে তিনি বলেন, সারা দিন একা বসে থাকি। কেউ আসে না। দুপুরে দুই একজন এসে পত্রিকা পড়ে চলে যায়। বই পড়ে নাÑএমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, বই থাকলে না পড়বে! তিনি ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, লাইব্রেরি যদি হয় পাঁচতলায় তাহলে কে আসবে! সারা দিন একা একা বসে থাকি, ভালো লাগে না। সিটি করপোরেশন আমাকে অন্য কোথাও বদলি করলে ভালো হতো।
পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জে অবস্থিত সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী নর্থব্রুক হল পাবলিক লাইব্রেরির অবস্থা সবচেয়ে করুন। বুড়িগঙ্গার তীরঘেঁষে ফরাশগঞ্জের টাউন হলের (বর্তমানে লালকুঠি নামে পরিচিত) পাশে ব্রিটিশ আমলে ১৮৮২ সালে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। সাহিত্যে নোবেল জয়ের পর কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে এখানেই সংবর্ধিত করেছিল ঢাকাবাসী। সংস্কারের অভাবে রবীন্দ্র স্মৃতিবিজড়িত সমৃদ্ধ সেই পাঠাগার ভবনটির এখন জীর্ণদশা। দেয়ালের পলেস্তরা খসে পড়েছে। ভবনের ছাদে দেখা দিয়েছে ফাটল। ইতোমধ্যে এটাকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হিসেবে ঘোষণা করেছে। তবে দুটি আলমারি ও তিনটি টেবিল ও চেয়ার নিয়ে মঈন উদ্দিন কমিনিউটি সেন্টারের তিনতলায় স্থান নিয়েছে এই পাঠাগারটি। পাঠক আসে কি না জানতে লাইব্রেরিয়ান বলেন, আসে কয়েকজন। পত্রিকা পড়ে চলে যায়। আলমারির ভেতরে কয়েকটা বই ছাড়া আর কিছুই নেই। হাজারীবাগে হাজী খলিল সরদার পাঠাগারের অবস্থা একই। আশপাশে কয়েকটি স্কুল-কলেজ থাকলেও এটি পাঠকশূন্য, বই আছে মাত্র ৫০০টি। লালবাগের মাওলানা মুফতি দ্বীন মোহাম্মদ ইসলামী পাঠাগারের পরিবেশ নোংরা।
"