reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ১৫ আগস্ট, ২০২০

সেদিন প্রতিবাদের ডাক দিলেই ঢাকা প্রতিরোধ হয়ে যেত

জাহাঙ্গীর কবির নানক

জাহাঙ্গীর কবির নানক আওয়ামী লীগের প্র্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা-১৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য। রাজনীতিতে পোড়-খাওয়া তৃণমূল থেকে উঠে আসা এই নেতা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ও ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকও। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে তিনি ছিলেন বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। ইতিহাসের এই কালো দিনে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। সেদিন ঢাকায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ড এবং তার পরের প্রতিরোধ কর্মকা- নিয়ে স্মৃতিচারণা করেছেন নানক। দৈনিক প্রতিদিনের সংবাদের স্টাফ রিপোর্টার জিয়াউদ্দিন রাজুর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় ৭৫-এর ১৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে কেন আওয়ামী প্রতিরোধ করতে ব্যর্থ হয়, তাও বলেছেন অকপটে। সাক্ষাৎকারে তিনি ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আক্ষেপ করে বলেন, সেদিন একজন নেতাও যদি প্রতিবাদের ডাক দিতেন, তাহলে ঢাকায় প্রতিরোধ হয়ে যেত। সাক্ষাৎকারের বিস্তারিত তুলে ধরা হলো-

৭৫-এ তো আপনি ছিলেন একজন ছাত্রনেতা। তখনকার সময় রাজনীতিটা কেমন ছিল?

জাহাঙ্গীর কবির নানক : ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে আমি বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। ঘটনাক্রমে ইতিহাসের সেই কালো দিনে আমি ঢাকায় অবস্থান করছিলাম। সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধুর আসার কথা ছিল। সেজন্য আমি ঢাকায় এসেছিলাম। তখন ঢাকায় এসে আমি সাধারণত আবদুর রব সেরনিয়াবাত সাহেবের বাসাতেই উঠতাম। সেবারও তাই করেছিলাম। পরে আমি ১৪ আগস্ট রাত ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যাই। বঙ্গবন্ধুর আগমন উপলক্ষে তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সাজানো হয়। সেখানেই কামাল ভাইয়ের সঙ্গে আমার শেষ কথা হয়। শেখ কামাল আমাকে আদর করে ডাকতেন নানকা। আমাকে দেখেই বললেন, কীরে নানকা, আমার বিভাগ কেমন সাজিয়েছিÑ তা দেখেছো। আমি বললাম, দেখিনি, এখনই দেখে নেব। পরে তিনি বললেন, সারা দিন অনেক পরিশ্রম হয়েছে। আমি বাসা থেকে ফ্রেশ হয়ে আসছি। এই বলেই তিনি ৩২ নম্বরের উদ্দেশে ক্যাম্পাস ছাড়েন। সেদিন যদি তিনি বাড়ি না ফিরতেন বা কোনো কারণে যদি আমরা তাকে রেখে দিতে পারতাম, তাহলে হয়তো ইতিহাসের বাঁকটা অন্যরকম হতো। বাসায় ফিরবেন বলায় কামাল ভাইকে আমি সালাম দিলাম, তিনি আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসার উদ্দেশে রওনা হন। আমি চলে গেলাম সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে, বন্ধু কাশেমের রুমে। সেখানেই রাতটা কাটাব বলে স্থির করেছি আগেই। রুমে গিয়ে মনে হলো, আর কতক্ষণইবা সময় আছে, ভোর হলেই তো ক্যাম্পাসে যেতে হবে। স্বাধীন দেশে, প্রাচ্যের অক্সফোর্ডে আসবেন জাতির পিতা। অন্যরকম শিহরন কাজ করছিল মনে। পুরো হল গমগম করছিল। আমরা সবাই হইচই করছিলাম। সময় যেন কাটছিল না। ধীরে ধীরে রাতের আঁধার কাটার সময় এলো। আর কিছুক্ষণ পরই আলো ছড়িয়ে পড়বে চারদিকে। আর এ সময়কালেই জাতির জীবনে নেমে এলো কালো অধ্যায়। শুরু হলো গুলাগুলির শব্দ, কামানের গোলার শব্দ। ধুম-ধুম আওয়াজ হচ্ছে। এতে হলের সবাই হতচকিত হয়ে পড়ে। সবাই খবর নিতে শুরু করে, আসলে কোথায় কী হয়েছে। এর মধ্যেই খবর ছড়িয়ে পড়ল, বঙ্গবন্ধুর বাড়ি আক্রমণ করা হয়েছে। আবার কেউ কেউ বেতার সম্প্রচার শোনার চেষ্টা করছিল। কিছুক্ষণ পর রেডিওতে শুনতে পেলামÑ ‘আমি মেজর ডালিম বলছি, শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে’। এগুলো শোনার পর আমি বন্ধু কাশেমকে নিয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে গেলাম। আমার টার্গেট ছিল আবদুর রব সেরনিয়াবাত সাহেবের বাসায় যাওয়া। আমরা ওখানে গিয়ে দেখি সব ধ্বংস হয়ে গেছে। হঠাৎ এই ধ্বংসযজ্ঞ দেখে শিউরে উঠলাম। সেখানে আমাদের দেখে বডিগার্ড হাবিলদার শামসু বলল, তাড়াতাড়ি সরে যান এখান থেকে। আমরা জ্ঞিজ্ঞেস করলাম ভেতরে কী অবস্থা? বলল, এখানে সব মেরে ফেলেছে। তিনি জানালেন, একে একে কাকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাযজ্ঞের খবর শুনে তাৎক্ষণিকভাবে মুষড়ে পড়লাম। আমরা সেখান থেকে তাড়াতাড়ি দৌড়ে আলুবাজার চলে গেলাম। তখন আমু ভাই (আমির হোসেন আমু) বরিশালের গভর্নর ছিলেন। তিনি গভর্নরের ট্রেনিং নিতে আলুবাজার খালার বাসায় থাকেন। আমু ভাই আমাদের দেখেই বললেন, কী খবর? তিনিও কামানের গোলার শব্দ শুনে বিভিন্ন ধরনের সংবাদ পাচ্ছিলেন। আমরা দোতালায় উঠে বললাম, বঙ্গবন্ধুর বাড়ি আক্রমণ করছে। তখনো আমরা মণি (শেখ ফজলুল হক মণি) ভাইয়ের সংবাদ পাইনি। এর মধ্যে আমু ভাই বললেন, মণি ভাইকেও মেরে ফেলেছে। এরপর আমু ভাইসহ আমরা বের হয়ে হেঁটে পলাশী মোড়ে এলাম, তখন আমু ভাই বললেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কী অবস্থা? কাউকে পাওয়া যাবে কি না? আমরা দেখলাম যে, আর্মি ঘেরাও করে ফেলছে। এরপর থেকে আমরা বিশ্বাসঘাতকতার নমুনা দেখলাম। আমি, আমু ভাই এক জায়গায় আত্মগোপনে থেকে সব জায়গায় যোগাযোগের চেষ্টা করলাম। একে একে আমাদের কাছে খবর আসতে শুরু করল। তখন একে একে দুঃসংবাদ আসছে, আমরা বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। তখন বিশ্বাসঘাতকতার সংবাদ আসছে, ভীরুতা ও কাপরুষতার নমুনা আমরা দেখেছি। তবে এগুলো দেখার পরও আমরা হাল ছেড়ে দিইনি।

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ছাত্রলীগ থেকে প্রতিরোধ হয়েছিল কি?

জাহাঙ্গীর কবির নানক : ১৫ আগস্টের পর খন্দকার মোশতাক সব সংসদ সদস্যকে ডাকেন। তখন আমরা একটি গোপন মিটিং করলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরোনো জগন্নাথ হলের অ্যাসেম্বলি হলে। সেখানে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম, এমপিদের চিঠি দেবÑ যেন তারা মোশতাকের ডাকে সাড়া দিয়ে বঙ্গভবনে না যান। সেই চিঠি নিয়ে আমরা ভাগ ভাগ হয়ে বিভিন্ন এমপির কাছে গেলাম, খুব গোপনে। এমপিদের সঙ্গে কথা বলার পর কারো কাছ থেকে পেলাম মোশতাকের ডাকে না যাওয়ার আশ্বাস, আবার কারো চোখে-মুখে দেখলাম দোদুল্যমান অবস্থা। দ্বিধাগ্রস্ত কিছু এমপিকে আমরা জানে মেরে ফেলার হুমকিও দিয়েছি। এরপর থেকে ছাত্রলীগের মাধ্যমে আমরা সংগঠিত হওয়া শুরু করলাম। আমার মনে আছে, ৭৫ সালের ২১ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা ২০-২৫ জন একটি ঝটিকা মিছিল বের করেছিলাম। মিছিলটি মধুর ক্যান্টিন থেকে বের হয়। মিছিলের জন্য স্পট ও সময় আগেই নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এটিই ছিল বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদে ছাত্রদের প্রথম মিছিল। ওই মিছিলে কোনো নেতৃত্ব ছিল না। মিছিলের আগে সিদ্ধান্ত ছিল আমরা একত্র হব। একত্র হয়ে মিছিল করব। এরপর আমরা লিফলেটও বিলি করেছি এবং আমরা ধীরে ধীরে সংগঠিত হতে থাকি।

আসলে খুব দুঃখজনক ও দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য- সেদিন বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদের ডাক দেওয়ার মতো কোনো নেতাকে দেখা যায়নি আওয়ামী লীগে। এই দুঃখবোধ আমাদের আজও কাঁদায়, হৃদয়ের রক্ষক্ষরণ এখনো সেই আগের মতোই হয়। কেন যে সেদিন একজন নেতাও প্রতিরোধের ডাক দিলেন না। রক্ষীবাহিনী কোনো নির্দেশনা পেল না। তবে আমি বিশ্বাস করি সেদিন বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করতে মানুষ প্রস্তুত ছিল কিন্তু প্রতিরোধের ডাক দেওয়ার নেতার অভাব ছিল। এরপর ষড়যন্ত্রকারীরা ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করে। অধিকাংশ মন্ত্রী মোশতাকের মন্ত্রিসভায় চলে গেল। সে সময় বঙ্গবন্ধু হত্যায় উল্লাস করেছিল একাত্তরের পরাজিত শক্তি। সাধারণ মানুষ কিন্তু সেদিন উল্লাস করেনি। মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তিই সেদিন উল্লাস করেছিল। উল্লাস কিন্তু সাধারণ মানুষ করেনি।

কেমন ছিল ৭৫-পরবর্তী সময়গুলো?

জাহাঙ্গীর কবির নানক : ১৯৭৬ সালের ১০ আগস্ট আমি গোপনে ঢাকা থেকে বরিশাল যাই। উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর প্রথম শাহাদতবার্ষিকীতে বরিশালে হরতাল করব। আমার মনে হয়, সারা বাংলাদেশে একটিমাত্র জেলা বরিশাল যেখানে আমি প্রথম হরতালের ডাক দিয়েছিলাম ১৯৭৬ সালের ১৫ আগস্ট। ১০ আগস্ট আমি বরিশাল পৌঁছে কাছের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে হরতালের পরিকল্পনা ও তা বাস্তবায়নের সব উদ্যোগ সম্পন্ন করি। হরতাল সফল করার জন্য আমি একটি গোপন মিটিং আহ্বান করি। বরিশালে আন্দোলন সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দু ব্রিটিশ আমল থেকেই থেকে বিএম কলেজকেন্দ্রিক। তাই সেখানেই সবাইকে জড়ো হওয়ার নির্দেশ দিই। রাতের আঁধারে বরিশাল বিএম কলেজের খেলার মাঠে সংগঠিত করলাম সবাইকে। আমরা মিটিংয়ে বসার পর সব কলেজ ঘেরাও করে ফেলে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের লেলিয়ে দেওয়া পুলিশ বাহিনী। আমাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হলো ঘটনাস্থল থেকে। ১২ আগস্টের সেই রাতটি ছিল শবেবরাতের রাত। থানায় নিয়েই আমাকে ফ্যানের সঙ্গে উল্টো করে ঝুলিয়ে চরম নির্যাতন করা হয়। যে রাতে মানুষ বসে আল্লাহর দরবারে মোনাজাত করছিলেন, সে সময় আমার ওপর নেমে আসে ভয়াবহ নির্যাতন। নির্যাতনের সময় আমার চিৎকারে সেদিন বরিশাল কোতোয়ালি থানার আসপাশের মানুষ শবেবরাতের নামাজ পড়তে পারেনি। পুলিশ নির্যাতন করে আমার কাছে অনেক কিছুই জানতে চেয়েছে কিন্তু কিছুই জানতে পারেনি। তারা নির্যাতনের সময় একটি কথাই বলেছে, হরতাল হতে পারবে না। হরতাল হলে তোমাকে মেরে ফেলব। সারা রাত নির্যাতনের পরদিন আমাকে জেলখানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। জেলখানায় আমরা আপন মানুষরাও আমাকে চিনতে পারেনি। নির্যাতনের ফলে আমার চেহারা পাল্টে গিয়েছিল। তবে সেদিন বরিশালে আংশিক হরতাল পালিত হয়েছিল। আমার গ্রেফতারের পর বরিশালের প্রথম ও দ্বিতীয় সারির ছাত্রলীগের নেতারা আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয়েছিল।

বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় শাহাদতবার্ষিকী কারাগারে বসেই আমাকে পালন করতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর তৃতীয় শাহাদতবার্ষিকী পুলিশের সঙ্গে চ্যালেঞ্জ নিয়েই পালন করেছি। সেদিনের ছাত্ররাজনীতিতে ভিন্ন একটি আত্মতৃপ্তি ছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম মঞ্জু খুনি মোশতাকের সঙ্গে চলে যায়। তখন বরিশালে আওয়ামী লীগ দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায়। একটি নুরুল ইসলাম মঞ্জু গ্রুপ, অন্যটি আমির হোসেন আমু গ্রুপ। আমরা আমু গ্রুপ করতাম।

আপনি বললেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আওয়ামী লীগে ওই হত্যার প্রতিরোধের ডাক দেওয়ার নেতার অভাব ছিল। সর্বাত্মক প্রতিরোধও হয়নি। কেন হয়নি?

জাহাঙ্গীর কবির নানক : আমি যেহেতু একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে মুজিব বাহিনীতে ছিলাম, তাই আমি সারা দেশে ঘুরে বেরিয়েছি। পরে মুজিব বাহিনীর অনেকেই রক্ষীবাহিনীতেও ছিলেন। অনেকের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তারাও বলেছে, তাদের বিভ্রান্ত করা হয়েছে। আওয়ামী রাজনৈতিক অঙ্গন কিংবা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি আওয়ামী লীগকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে তার মন্ত্রিসভার প্রায় মন্ত্রীই মোশতাকের মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ায় একটি বিভ্রান্তি ছিল। আর ছিল নেতাদের ভীরুতা-কাপুরুষতা। এই ভীরুতা-কাপুরুষতার কারণেই কোনো নেতা তার জীবনের ঝুঁকি নিতে পারেননি। বিশ্বাস করুন, সেদিন ঢাকা শহরকে আমি দেখেছি, যেকোনো একজন নেতা যদি প্রতিবাদের ডাক দিতেন, তাহলে ঢাকায় প্রতিরোধ হয়ে যেত। কারণ হত্যাকারীরা সংখ্যায় ছিল কম। সেই প্রতিরোধের যে ব্যর্থতাÑ দুঃখজনক হলেও সত্য, সেদিনের ব্যর্থতার দায় আজ পর্যন্ত কেউ নিলেন না। আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের লাখ লাখ নেতাকর্মী ছিলেন। যারা একটি ডাক দিলেই ঝাঁপিয়ে পড়তেন। কিন্তু একটি ডাক পাওয়া গেল না। এতগুলো সংসদ সদস্য তারাও ডাক দিলেন না। এদিকে জাতীয় চার নেতাকে গ্রেফতার করা হলো। তারা কিন্তু সাহসিকতা দেখিয়েছেন। তারা কিন্তু মন্ত্রিসভায় যাননি। সে সময় আমাকে আমির হোসেন আমু ভাই সংসদে পাঠিয়েছিলেন কয়েকজন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করতে। আমি তখন এক সংসদ সদস্য ও এক জেলার নেতার বাসায় গেলাম। এমপি হোস্টেলেও যাই। আমি গিয়ে দেখি যে, সেখানে অনেক মানুষ। আনন্দ-উৎসব চলছে। হাঁসের মাংস, ভুনা খিচুড়ি খাচ্ছে। এটা ছিল ৭৫ সালের ১৫ আগস্টের এক অথবা দুদিন পরেই। তিনি ছিলেন নুরুল ইসলাম মঞ্জু গ্রুপের নেতা।

ওই নেতা আমাকে বললেন, কী খবর? আমি বললাম, আসলাম একটু দেখা করতে, কথা আছে। আমাকে তিনি বসতে বললেন। আমার বলতে দ্বিধা নেই, আজকে যিনি বিএনপি নেতা, যিনি মুক্তিযুদ্ধের সময় দক্ষিণবঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তার নামে ওমর বাহিনী নামে একটি বাহিনী ছিল। তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা শাজাহান ওমর। তিনিও সেখানে ছিলেন। তার বোন আমার সহপাঠী ছিল। তিনি আমাকে দেখেই চোখে ইশারা দিলেন, বাইরে বের হওয়ার জন্য। আমি বাইরে বের হলাম, তিনিও বের হয়ে বললেন, কোথায় আসছো, মরতে ইচ্ছে করে? দেখো না কী উৎসব করছে। আজ বলতে দ্বিধা নেই, ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের প্রতিবাদ না হওয়ায় ছিল আমাদের চরম ব্যর্থতা।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close