রাজশাহী ব্যুরো

  ১৩ আগস্ট, ২০২০

সাধারণ ক্রেতার নাগালের বাইরে রাজশাহীর আম

আর মাত্র দুই দিন পর ছয়টি ঋতুর মধ্যে প্রথম দুটির বিদায় ঘণ্টা বাজবে। এভাবে গ্রীষ্মের পর বিদায় নিচ্ছে বর্ষাও। একই সঙ্গে শেষ হচ্ছে আমের মৌসুমও। তারপর এক এক করে রাজশাহীর বাজার থেকে বিদায় নেবে সুস্বাদু সব জাতেরই আম। আর শেষ মুহূর্তে দরদামে ব্যবধান এসেছে এখানকার আমের দামে। তাই বলা চলে, এখন সাধারণ ক্রেতার হাতের নাগালের বাইরে চলে গেছে রাজশাহীর আম। স্বাদের আমে দামের আগুন লাগা এই আম ঈদের আগেও প্রতি মণ ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। এখন সেই আম বিক্রি হচ্ছে ১০ হাজার টাকায়!

মাঝেমধ্যে আত্মীয়-স্বজনকে পাঠানোর জন্য যারা আমের আড়তে যাচ্ছেন, দাম শুনে তাদের চোখ কপালে উঠছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বর্ষার শেষে সরবরাহ ফুরিয়ে আসায় বাজারে আমের সরবরাহ কম। তাই দামও বেশি। আর মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে বাজার থেকে এক এক করে বিদায় নেবে সব জাতের আম। এজন্য উপায়হীন হয়ে বাড়তি দাম নিচ্ছেন। জানা গেছে, ১৫ আগস্টের পর থেকে বাজারে কেবল থাকবে আশ্বিনা জাতের আম। তবে স্বাদে টক ও আঁশ বেশি থাকায় সাধারণত এই আম সেভাবে খেতে চায় না মানুষ। সারা বছরের জন্য আচার, মোরব্বা ও জুস তৈরির কাজে বেশি ব্যবহার হয় এই আশ্বিনা আম। তাই শেষ মুহূর্তে হু হু করে বাড়ছে রাজশাহীর সুস্বাদু সব আমের দাম।

মহানগরীর কোনো বাজারেই দামের তারতম্য নেই! মহানগরীর শিরোইল বাসস্ট্যান্ড, শিরোইল কাঁচাবাজার, শালবাগান, নওদাপাড়া, সাহেববাজার, লক্ষ্মীপুর বাজার ও কোর্টচত্বর-অবস্থানভেদে সব জায়গায় একই দাম। যারা কম দামের আশায় এ-বাজার ও-বাজার বেড়াচ্ছেন দিন শেষে তাদের যাতায়াত খরচটা বরং হিসোবের খাতায় যোগ হচ্ছে। শেষ শ্রাবণে রাজশাহীর বাজারে এখন কেবল চার জাতের আম মিলছে। এর মধ্যে রয়েছে- মিষ্টি ও রসালো ফজলি আম (মহারাজ), বারি-৪, আম্রপালি ও আশ্বিনা জাতের আম। তবে দাম বেজায় চড়া হওয়ায় শেষ সময়ে আমের পাইকারি ও খুচরা বাজারেও ব্যবধান কমে এসেছে। মহানগরের সাহেববাজার এলাকার ফল ব্যবসায়ী জসি এন্টারপ্রাইজের তৌফিক ইমাম কোয়েল বলেন, আর মাত্র এক থেকে দুই সপ্তাহ পর এসব আম পাওয়া যাবে না। তার পর থেকে কেবল থাকবে আশ্বিনা জাতের আম। আর কিছু পরিমাণ ফজলি পাওয়া যাবে। তবে ওই ফজলি (মহারাজ) আমগুলো পাশের জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আনা হবে। কারণ রাজশাহীর অনেক পরে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাগান থেকে আম নামানো হয়। তাই রাজশাহীর আম শেষ হয়ে গেলেও চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম পাওয়া যায়। ওই জেলার আম দেরিতে উঠে এবং দেরিতে শেষ হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জ আম আড়তদার সমিতির সভাপতি টিপু সুলতান বলেন, রাজশাহীর বাজারের চেয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে দাম কিছুটা কম। বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ, শিবগঞ্জ ও কানসাটসহ এলাকার হাটে ফজলি আম ১০ হাজার টাকা মণ। আর বারি-৪ আম ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা এবং আশ্বিনা জাতের আম ২ হাজার ৫০০ থেকে ৪ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে। এখনো ফজলি আম গাছে আছে। তবে আগামী সপ্তাহ থেকে এই আমের দাম আরো বাড়বে।

এদিকে রাজশাহী মহানগরের শালবাগান এলাকার খন্দকার ফল ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী মনিরুজ্জামান মিনার বলেন, আম শেষ হয়ে যাচ্ছে। এজন্য আড়তগুলোতে সরবারহও কমে যাচ্ছে। তাই আমের দামও বাড়ছে। আর এখন পাইকারি ও খুচরা বাজারে আমের দামের কোনো হেরফের হচ্ছে না। আড়তের আম যেই দামে বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারেও সেই দামেই আম বিক্রি হচ্ছে। পার্থক্য হচ্ছে আড়তে গেলে কাঁচা আম বেশি পাওয়া যাচ্ছে আর খুচরা বাজারে মিলছে পাকা আম। কাঁচা আম ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে সুবিধা হয়। এই আমগুলো পরিবহনে পচে না। আর পাকা আম পাঠাতে গেলে কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়িতেই পচে যায়।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক শামছুল হক জানান, জেলায় ১৭ হাজার ৬৮৬ হেক্টর জমিতে আমবাগান রয়েছে। আর এবার আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ২ লাখ ১০ হাজার টন। এছাড়া অপরিপক্ব আম নামানো ঠেকাতে এবারো সময় বেঁধে দিয়েছিল রাজশাহী জেলা প্রশাসন। সে অনুযায়ী গত ১৫ মে থেকে গুটি আম, ২০ মে থেকে গোপালভোগ, ২৫ মে থেকে রানীপছন্দ ও লক্ষণভোগ বা লখনা এবং ২৮ মে থেকে হিমসাগর বা খিরসাপাত, ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া, ১৫ জুন থেকে আ¤্রপালি, ১৫ জুন থেকে বিভিন্ন জাতের ফজলি আম নামানোর সময় শুরু হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close