নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

  ০৯ আগস্ট, ২০২০

করোনাভাইরাস

নারায়ণগঞ্জে পিছিয়ে পড়েছে ১৪০০ কোটি টাকার ৩৬ প্রকল্প

করোনাভাইরাসের কারণে দেশে গত ২৬ মার্চ লকডাউন ঘোষণা করা হয়। ফলে থমকে যায় সব ধরণের কার্যক্রম। থেমে যায় সরকারের গ্রহণ করা বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজও। বর্তমানে লকডাউন কিছুটা শিথিল করায় ধীরে ধীরে গতি ফিরে আসছে সে সব কার্যক্রমে। নারায়ণগঞ্জে ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩৬টি প্রকল্পের কাজও পুনরায় শুরু হচ্ছে ধীরে ধীরে। বর্তমানে প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম শুরু হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা সমাপ্ত হবে না। এতে করে ব্যয় কিছুটা বাড়বে বলে জানান সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

করোনা পরিস্থিতির পূর্বে বিভিন্ন মেয়াদে ১ হাজার ৪৪৮ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৬টি প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করা হয়। এর মধ্যে ৮টি প্রকল্প গত জুনের মধ্যে ও ছয়টি প্রকল্প আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল যা গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে আরো জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জে বর্তমানে গণপূর্ত বিভাগের চলমান প্রকল্প রয়েছে ৩৬টি। প্রকল্পগুলো হচ্ছে, নারায়ণগঞ্জ জেলা সদরে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন নির্মাণ, নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন নির্মাণ, নারায়ণগঞ্জ কাঁচপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হাইওয়ে পুলিশের জন্য ৫০টি ফাঁড়ি নির্মাণ, বিভাগীয় ও জেলা শিল্পকলা একাডেমি নির্মাণ, আড়াইহাজারে কর্মজীবী নারীদের জন্য হোস্টেল, উপজেলা ও ভূমি ইউনিয়ন অফিস নির্মাণ, নারায়ণগঞ্জ আলীগঞ্জে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মাচারীদের জন্য ৮টি ১৫তলা ভবনে ৬৭২টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প, নারাযণগঞ্জে পুলিশ লাইনে ছয়তলা ভিত্তিসহ ছয়তলা বিশিষ্ট পুলিশ ব্যারাক ভবন নির্মাণ, নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ছয়তলা ভিত্তিবিশিষ্ট দ্বিতীয়তলা ভবন নির্মাণ, জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ থানা ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থতলা নির্মাণ, ফিজিক্যাল ফ্যাসিলিটিজ ডেভেলপমেন্টের (পিএফডি) আওতায় নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালকে ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে উন্নীতকরণ। এছাড়াও নারায়ণগঞ্জে নার্সিং ট্রেনিং ইনস্টিটিউট নির্মাণ, নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিস নির্মাণ, পুলিশ বিভাগের জন্য টাইপ প্ল্যানে ১০১টি জরাজীর্ণ থানা ভবন নির্মাণ (বন্দর থানায় একটি) মহিলা কারারক্ষীদের জন্য আবাসন নির্মাণ, নারায়ণগঞ্জের সদর থানা ভবনের চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠতলা নির্মাণ, উপজেলা পর্যায়ে ৪০টি প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি), নারায়ণগঞ্জ জেলার কালাপাহাড়িয়া তদন্তকেন্দ্র নির্মাণ (ছয়তলা ভিত্তিসহ দ্বিতীয়তলা পর্যন্ত)।

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানা ভবন নির্মাণ, নারায়ণগঞ্জে ৬ (ছয়) ডিওল অফিস ওয়ান পুনর্গঠন ও আধুনিকীকরণ, নারায়ণগঞ্জ জেলা রেজিস্ট্রার অফিসের কার্যক্রম, নারায়ণগঞ্জের খাগকান্দা, আড়াইহাজারসহ ১৯টি নদী পুলিশ অস্টপোস্ট কাম ব্যারাক দ্বিতীয়তলা ভবনের ১ (এক) ভৌত অবকাঠামো নির্মাণ, নারায়ণগঞ্জের কলাগাছিয়া, বন্দর উপজেলাসহ ১৯টি নদী পুলিশ অস্টপোস্ট কাম ব্যারাক দ্বিতীয়তলা বিল্ডিং ১ (এক) এর শারীরিক অবকাঠামো নির্মাণ, নারায়ণগঞ্জের সদর, বন্দর, সোনারগাঁ, আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র স্থাপন, বাংলাদেশের ৩৭টি জেলায় সার্কিট হাউসের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ শীর্ষক প্রকল্প, নারায়ণগঞ্জে সোনারগাঁ ফোক ও ক্রাফট জাদুঘর প্রতিষ্ঠা।

দেশের ১৪টি নদীবন্দরে প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার শক্তিশালীকরণ, নারায়ণগঞ্জে একটি প্রকল্প রয়েছে। তথ্যানুসারে, অধিকাংশ প্রকল্পই দীর্ঘসময় ধরে চলমান। চলতি বছরের জুনে আটটি ও ছয়টি প্রকল্প ডিসেম্বরে সমাপ্ত হওয়ার কথা ছিল। যেহেতু এসবের বেশির ভাগই মাঠপর্যায়ের কাজ, তাই করোনার কারণে শ্রমিকদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনায় এনে এবং সরকারের লকডাউন ঘোষণায় গত সাড়ে তিন মাস কার্যক্রম বন্ধ রাখা হয়। তবে বর্তমানে কার্যক্রম শুরু হলেও নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শেষ করা নিয়ে সংশয় রয়েছে। এর মধ্যে গত ১৪ জুলাই থেকে শুরু হয় বিভাগীয় ও জেলা শিল্পকলা একাডেমি নির্মাণ কার্যক্রম। এ বছরের জুনে কার্যক্রম শেষ হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে তিন মাস কার্যক্রম বন্ধ থাকার পর গত ১৫ দিন ধরে শুরু হয়েছে কার্যক্রম। অন্যদিকে ২০১৬ সালে শুরু হওয়া নারায়ণগঞ্জে আলীগঞ্জে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আটটি ১৫তলা ভবনের ৬৭২টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্পের কার্যক্রম এ বছরের জুনে সমাপ্ত হওয়ার কথা থাকলেও বর্তমানে ১ হাজার ২৫০ ফুট দুটি ভবনের ১৫তলা ভবনের ঢালাই কাজ চলছে। অন্যদিকে ১ হাজার বর্গফুট বিশিষ্ট দুটি ৮০০ বর্গফুট দুটি ভবনের ফিনিশিং কাজ চলছে। এছাড়া ৬৫০ বর্গফুট বিশিষ্ট দুটি ভবনের সার্ভিস পাইলিং ঢালাইয়ের প্রস্তুতি চলছে।

নারায়ণগঞ্জ গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন জানান, আমাদের বর্তমানে ৩৬টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ ছিল প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম। তবে বর্তমানে প্রতিটি প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তিনি আরো বলেন, করোনাভাইরাস নিঃসন্দেহে আমাদের অনেক পিছিয়ে দিয়েছে। এতে সময়ের সঙ্গে ব্যয়ের পরিমাণও বাড়তে পারে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close