নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

  ১৬ জুলাই, ২০২০

করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা

নারায়ণগঞ্জে পশুর হাট অনলাইনে

প্রতি বছর এই সময়ে পশুর হাটে মুখরিত থাকে হাটসংলগ্ন এলাকা। কিন্তু এই বছর এখনো কোনো পশুরহাট বসেনি। করোনার এই অতিমারিতে সংক্রমণ ঠেকাতে আয়োজন করা হয়েছে অনলাইন হাট। এখান থেকে ক্রেতারা ভিড় এড়িয়ে সহজেই পছন্দ মতো পশু কিনতে পারেন।

এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জে অনলাইনে গরু বিক্রয় কার্যক্রম শুরু হয়েছে। চলতি মাসের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১৭০টি বড় আকৃতির গরু বিক্রি হয়েছে। গত ১২ দিনে ১০ থেকে ১৫টি গরুর খামার অনলাইনের মাধ্যমে গরু বিক্রি করছে। তিনভাবে অনলাইন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। একটি জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকে, আরেকটি ডিসি অফিস থেকে এবং অন্যটি পরিচালনা করছেন খামারিরা। গত ১২ দিনে এসব অনলাইন থেকে ৩ কোটি টাকার গরু বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বাসনা আখতার।

তিনি জানিয়েছেন, নারায়ণগঞ্জ জেলায় প্রতি বছর কোরবানির পশুর চাহিদা ১ লাখ। এবারো জেলার ৩ হাজার ১১টি খামারে ৭৫ হাজার গবাদি পশু মোটাতাজাকরণ করা হয়েছে সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে। এরই মধ্যে ১৫ হাজার ছাগল ও ৫ হাজার ভেড়া রয়েছে। অনলাইনে গরু বেচাকেনায় এগিয়ে আছে আর কে ডেইরি ফার্ম, গ্রিনবেল ডেইরি রেঞ্জ ও নাবিলা ডেইরি ফার্ম।

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক জমিস উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, অনলাইন কার্যক্রমকে উৎসাহিত করতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। হাটে বাজারে মানুষের ভিড় কমানোর জন্য এমনটা করা হচ্ছে। আমরা আশা করি, অনলাইনে কেনাবেচাটা বাড়বে। এটা ঢাকাতেও হচ্ছে। আমাদের এখানেও কার্যক্রম চলছে। এই বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের কোনো নির্দেশনা আসলে সেভাবেই কাজ করা হবে। অনলাইনে পশু কেনাবেচা করা নিরাপদ বিধায় মানুষ উৎসাহিত হচ্ছে। এবার করোনা মহামারির কারণে শহরে হাট না বসানোর জন্য সুপারিশ করা হয়েছে উচ্চপর্যায়ে। গতকাল রোববার নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় কোরবানির পশুর হাট নিয়ে কথা উঠেছে।

কোরবানির গরুর হাটের বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাসুম বলেছেন, আমদের নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে যেসব গরুর খামারিরা আছেন তারা বসে আছেন গরু বিক্রি করার জন্য। তাদের জন্য যদি গরুর হাট দিতেই হয় তাহলে শহর এলাকায় যাতে গরুর হাট না দেওয়া হয়। গরুর হাটকে নিয়ে রাজনৈতিক হানাহানি, টাকা পয়সার ভাগাভাগি অনেক ধরনের ঝামেলার ব্যাপার রয়েছে।

এদিকে শনিবার নারায়ণগঞ্জের কোরবানির পশুর হাট প্রসঙ্গে জেলা করোনা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক জমিস উদ্দিন বলেছেন, করোনা পরিস্থিতিেিত আমরা উন্নতি করেছি। এ অবস্থা ধরে রাখতে কাজ করছি। এবারের পশুর হাট কম হবে। খোলা এবং বড় স্থানে পশুর হাট বসবে। সিটি করপোরেশন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের কঠোর অবস্থানে যেতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই মানতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে হাট বন্ধ। অনলাইনে পশু বেচাকেনার বিষয়টি শুরু হয়েছে। অনেকেই অনলাইনে কাজ করছেন। অনলাইনের বিষয়টিকে এই মহামারির সময়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কমিটির অন্যরা মতামত দিয়েছেন। তবে মন্ত্রণালয় যা বলবে সেটাই হবে প্রধান বিষয়। মন্ত্রণালয় পশুর হাট না বসানোর কথা বললে বসবে না।

শনিবার সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির সভায় জেলায় দায়িত্ব প্রাপ্ত সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (বিপিএটিসি) রেক্টর রকিব হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, এবার জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা নারায়ণগঞ্জে হাট না বসানোর জন্য কেন্দ্রে প্রস্তাব রেখেছেন। নারায়ণগঞ্জে পশুর হাট না বসানোর প্রস্তাব করেছে কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি। গত শুক্রবার ১৪তম অনলাইন সভায় কমিটির পক্ষ থেকে এ প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়। এ প্রস্তাবনাকে উল্লেখ করে আসন্ন ঈদ উল আজহায় নারায়ণগঞ্জ সদর থানার গোগনগর ইউনিয়নে গরুর হাট না বসানোর অনুরোধ জানিয়েছে গোগনগর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি ইব্রাহিম মোল্লা।

প্রসঙ্গত, কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি গত শুক্রবার ১৪তম অনলাইন সভায় কমিটির পক্ষ থেকে নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় অবাধ জীবনযাত্রায় করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। ঈদুল আজহায় পশুর হাট বসার ক্ষেত্রে জাতীয় কারিগরি পরামর্শ কমিটির সুপারিশ করে যে, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রামে যেন পশুর হাট স্থাপন না করা হয়। এ ক্ষেত্রে অনলাইনে (ডিজিটাল পদ্ধতিতে) পশু কেনাবেচার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close