নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

  ০৫ জুলাই, ২০২০

কিট সংকটে নারায়ণগঞ্জে করোনা পরীক্ষা ব্যাহত

লকডাউন তুলে নিলেও কিছু কিছু এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা করেছে সরকার। তার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা অন্যতম। দেশে প্রথম যে করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়, তা এই নারায়ণগঞ্জেই। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়। প্রথম যে তিনজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়, তার মধ্যে দুজনই ছিলেন নারায়ণগঞ্জের বাসিন্দা।

এ নিয়ে জেলাব্যাপী আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লেও সচেতনতা বৃদ্ধি পায়নি এখানকার মানুষের মধ্যে। ফলে দিনে দিনে বাড়তে থাকে আক্রান্তের সংখ্যা। অনেকেই মনে করেন, নারায়ণগঞ্জ থেকেই দেশের অন্যান্য জেলাতে করোনা ছড়িয়ে পড়ছে। এ জেলা থেকে যারাই বিভিন্ন জায়গায় যাচ্ছেন, তাদের পড়তে হয়েছে নানা ভোগান্তিতে।

করোনার এমন ভয়াবহতায় পুরো নারায়ণগঞ্জই কার্যত স্থবির হয়ে পড়ে। ভুতুড়ে রূপ ধারণ করতে থাকে কর্মচঞ্চল এই জেলা। করোনার আতঙ্ক তাড়া করতে থাকে সর্বত্র। এতে করে স্বাভাবিক চলাফেরায় ছন্দ হারিয়ে ঘরবন্দি হতে শুরু করেন সাধারণ মানুষ। সংক্রমণ রোধে স্কুল-কলেজ, গণপরিবহনসহ অফিস-আদালত বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। পরে জেলাব্যাপী লকডাউন ঘোষণা করলে কার্যত অচলাবস্থা শুরু হয় নারায়ণগঞ্জে।

বর্তমানে জেলার অচলাবস্থা কাটতে শুরু করেছে। বলা চলে করোনার ভীতি কাটিয়ে মানুষ এখন স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। ব্যাংক, অফিস, বিপণিবিতান, গণপরিবহনসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সীমিত আকারে খুলে দেওয়ার পরই এখানকার জনজীবন স্বাভাবিক হতে শুরু করে। তবে, এখনো বন্ধ রয়েছে স্কুল-কলেজ। এদিকে করোনার রেড জোনখ্যাত এই নারায়ণগঞ্জে সাম্প্রতিক সময়ে আক্রান্তের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। সর্বশেষ তিন জুলাই পুরো নারায়ণগঞ্জে ৪৭ জন আক্রান্ত রেকর্ড করেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এ ছাড়া এর আগের চার দিন যথাক্রমে ২ জুলাই ৪৯, ১ জুলাই ২১, ৩০ জুন ৫৭ এবং ২৯ জুন ৭০ জন আক্রান্ত চিহ্নিত করা হয়েছিল। এই পাঁচ দিনে জেলাজুড়ে ১ হাজার ৭৮৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। অর্থাৎ এই পাঁচ দিনে আক্রান্তের গড় হার ১৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এর আগে ৩০ দিন আগে ৩০ মে-৩ জুন পর্যন্ত আক্রান্তের গড় শতাংশ ছিল ২০ দশমিক ৯০। এতে করে ধারণা করা হচ্ছে বর্তমানে সংক্রমণ কমছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ আহাম্মেদ বলেন, আগের তুলনায় এখন আক্রান্তের সংখ্যা অনেক কমেছে। সামনে আরো কমবে। আমরা উন্নতি করতে শুরু করেছি। সামনের দিকে এই পরিস্থিতি আরো উন্নতি হবে।

তবে এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেছেন সমাজের সুশীল শ্রেণিসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। তাদের অনেকেই বলেছেন, এখানে করোনার পর্যাপ্ত পরীক্ষা হচ্ছে না। নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে প্রয়োজনের তুলনায় কম। ফলে, অল্প পরীক্ষা, আক্রান্তও কম। তবে, যে পরিমাণ নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে, এর সঙ্গে যদি আক্রান্তের গড় হিসাবে দেখা হয়, তবে দেখা যাবে প্রতি ১০০ জনের ২৫ জনই আক্রান্ত আর সেই খবর চলমান করোনা পরীক্ষার ফলাফলই বলে দিচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, আসলে বাস্তবতা হচ্ছে আমরা সেভাবে উন্নতি করিনি। নারায়ণগঞ্জে যেভাবে মানুষ চলাফেরা করছেন, এতে একটুও সচেতনতা নেই। এখানে সরকার কী করবে আর প্রশাসন কী করবে মানুষ যদি সচেতন না হন। তিনি বলেন, পরীক্ষা কম হচ্ছে, তাই আক্রান্তের সংখ্যা কম দেখা যাচ্ছে। যে পরিমাণ পরীক্ষা করা দরকার, সে পরিমাণ পরীক্ষা হচ্ছে না। এখানে কিছুটা সংকট রয়েছে। কিটের সংকট আছে। রিপোর্ট দেরিতে দেওয়া হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ করোনা-দুর্যোগ ও উত্তরণ কমিটির আহ্বায়ক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বলেন, এখানে আক্রান্তের সংখ্যা কমে আসছে এটা মনে করার কারণ নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, এখানে এখনো চূড়ান্ত পর্যায় যায়নি। ফলে এটা কমে যাবে মনে করার কারণ নেই। পরীক্ষা সঠিকভাবে হচ্ছে না বলেই এই সংখ্যাটা কম হচ্ছে বলেই মনে করি। এখন তো টেস্ট আরো কম হবে কারণ পরীক্ষার জন্য ফি ধার্য করেছে। ফলে এখন পরীক্ষা আরো কম হবে এবং আক্রান্তও কম দেখা যাবে। তিনি আরো বলেন। সরকারের মন্ত্রীরা বলে আসছিলেন, ইউরোপ-আমেরিকা সংক্রমণ বাড়ছেম সে তুলনায় এখানে কম। এখানে করোনা আসবে না। মূলত তাদের সফলতা দেখানোর জন্যই পরীক্ষা কম করে আক্রান্ত কম দেখানো হচ্ছে।

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট সাখাওয়াৎ হোসেন খান বলেন, আক্রান্তের সংখ্যা কমেনি। বরং পরীক্ষার সংখ্যা এখানে কম হওয়াতে আক্রান্ত কম দেখা যাচ্ছে। নারায়ণগঞ্জ ঝুঁকিপূর্ণ একটা জোন হিসেবে এখানে যে পরিমাণের পরীক্ষা করা দরকার, সে পরিমাণের পরীক্ষা এখানে হচ্ছে না। পর্যাপ্ত পরিমাণের পরীক্ষা করা হলে আক্রান্তের সঠিক পরিসংখ্যানটা ফুটে উঠত। কিন্তু এখানে সেটা হচ্ছে না। এ ছাড়া পরীক্ষা করতে গিয়ে অনেকেই হয়রানির শিকার হচ্ছেন। সময়মতো রিপোর্ট পাচ্ছে না। এসব কারণে অনেকে পরীক্ষা করানো থেকেও সরে আসছেন বলে আমি মনে করি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close