রাজশাহী ব্যুরো

  ০১ জুলাই, ২০২০

করোনাভাইরাস ঠেকাতে তামাকে কর বৃদ্ধির দাবি

প্রস্তাবিত ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট সংশোধন করে উচ্চহারে তামাকের কর ও দাম বাড়ানোর প্রস্তাবনায় অর্থমন্ত্রীর কাছে বাজেট প্রতিক্রিয়াস্বরূপ চিঠি দিয়েছেন রাজশাহী সদরের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা ও রাজশাহীর পবা-মোহনপুরের সংসদ সদস্য মো. আয়েন উদ্দিনসহ দেশের কয়েকজন সংসদ সদস্য। চিঠিতে তারা করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর প্রতিক্রিয়া জানান এবং বাজেট পুনর্বিবেচনায় এনে যথাযথ সংশোধনের জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। এ তথ্য নিশ্চিত করে অ্যাসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট-এসিডির মিডিয়া ম্যানেজার আমজাদ হোসেন শিমুল সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানান।

এসিডির ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, করোনা মহামারির এ সময়ে জনস্বাস্থ্য রক্ষা ও সরকারের রাজস্ব আয়বৃদ্ধির লক্ষ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে তামাকজাত দ্রব্যের ওপর করবৃদ্ধির মাধ্যমে রাজস্ব আয়বৃদ্ধির প্রস্তাবনা পেশ করা হয়েছিল। যেখানে তামাকদ্রব্যে সুনির্দিষ্ট শুল্ক আরোপ ও সিগারেটের মূল্যস্তর চারটি থেকে কমিয়ে দুটিতে নামিয়ে আনার সুপারিশ করা হয়। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে সিগারেটের নিম্নস্তরের ১০ শলাকার প্যাকেটের দাম ২ টাকা (৫.৪ শতাংশ) ও সম্পূরক শুল্ক মাত্র ২ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে। আর উচ্চস্তর ও প্রিমিয়াম স্তরে প্রতি ১০ শলাকার প্যাকেটে গত বছরের তুলনায় যথাক্রমে ৪.৩ শতাংশ ও ৪.০৬ শতাংশ দাম বাড়ানো হলেও শুল্ক বাড়ানো হয়নি।

মধ্যম স্তরে দাম ও শুল্ক কোনোটারই পরিবর্তন আসেনি। ফলে মাথাপিছু আয় ও মূল্যস্ফীতির তুলনায় মূল্যবৃদ্ধি না পাওয়ায় সিগারেট/তামাকজাত দ্রব্যের প্রকৃত মূল্য হ্রাস পাবে। তা ছাড়া নিম্নস্তরে খুবই সামান্য শুল্ক বাড়ায় তা রাজস্ব আয়ে কিছুটা ভূমিকা রাখলেও, অন্য স্তরে শুল্ক না বাড়ায় তাতে তামাক কোম্পানিগুলো লাভবান হবে। এমতাবস্থায় বাজেট প্রতিক্রিয়া পত্রের মাধ্যমে সংসদ সদস্যরা কিছু প্রস্তাবনা অর্থমন্ত্রীর কাছে পেশ করেন এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষায় প্রস্তাবনাগুলো বাস্তবায়নে অনুরোধ জানান।

প্রস্তাবনাগুলো হচ্ছেÑ সিগারেটের মূল্যস্তর চারটি থেকে দুটি নির্ধারণ করা। একীভূত নতুন নিম্নস্তরের ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ন্যূনতম ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে ৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ১০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; একীভূত নতুন প্রিমিয়াম স্তরের ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ন্যূনতম ১২৫ টাকা নির্ধারণ করে ৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ১৯ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ৪০ টাকা নির্ধারণ করে ৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ৬.৮৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ৩২ টাকা নির্ধারণ করে ৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ৫.৪৮ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা; সব তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যের ওপর ৩ শতাংশ কোভিড-১৯ সারচার্জ আরোপ করা। ই-সিগারেটের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা।

এ ছাড়া প্রতিক্রিয়ায় সংসদ সদস্যরা আরো বলেন, সার্বিকভাবে প্রস্তাবিত তামাক কর ও মূল্যবৃদ্ধির পদক্ষেপ অতিরিক্ত রাজস্ব আহরণ, অকালমৃত্যুরোধ এবং করোনা-সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাসে কোনো ভূমিকা রাখবে না, যা অত্যন্ত হতাশাজনক। প্রস্তাবিত বাজেটে তামাক খাত থেকে সরকারের রাজস্ব আয় খুব বেশি বাড়বে না; বরং শুল্ক না বাড়িয়ে দাম বাড়ানোর ফলে তামাক কোম্পানিগুলো বিনা ব্যয়ে আরো বেশি মুনাফা করার সুযোগ পাবে। অন্যদিকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়ন না করলে সরকার অতিরিক্ত ১১ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের সুযোগ হারাবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ধূমপায়ীদের করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক গুণ বেশি। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দিন দিন অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে। এখনই উপযুক্ত সময় সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণে শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণ করার, বিশেষত জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার তামাকজাত দ্রব্য বিক্রয় সীমিত করা, তামাকের করবৃদ্ধির মাধ্যমে এসব দ্রব্যের দাম বাড়ানো ও তামাকজাত দ্রব্য ক্রয়ক্ষমতার বাইরে নিয়ে যাওয়া। তাহলে এই মহামারিতে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষিত থাকবে এবং উল্লিখিত প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন করা হলে প্রায় ২০ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ী ধূমপান ছেড়ে দিতে উৎসাহিত হবে এবং সরকারের অতিরিক্ত রাজস্ব আয় অর্জিত হবে ১১ হাজার কোটি টাকা। সরকার এই অতিরিক্ত রাজস্ব তামাক ব্যবহারের ক্ষতি হ্রাস এবং করোনাভাইরাস-সংক্রান্ত সংকট মোকাবিলায় ব্যবহার করতে পারবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close