জবি প্রতিনিধি

  ১৮ জুন, ২০২০

মহামারির সংকটে মেসভাড়া নিয়ে বিপাকে জবি শিক্ষার্থীরা

করোনাভাইরাস মহামারিতে চলমান অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে কয়েক মাসের জমে যাওয়া বকেয়া বাড়িভাড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন আবাসিক সুবিধাবিহীন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী। তাদের অনেকে জানান, মহামারির কারণে পরিবারের উপার্জন কমে যাওয়ায় থাকার খরচ সামলাতে পারছেন না তারা। তা ছাড়া অনেকেই প্রাইভেট টিউশনি করে চলতেন, যা মহামারির কারণে বন্ধ রয়েছে। বাড়ির মালিকদের অনেকেই গত তিন মাস ভাড়া আদায় না করলেও এখন একসঙ্গে কয়েক মাসের ভাড়া পরিশোধের পড়ায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

মেসভাড়া সংকট নিরসনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ইতোমধ্যে অনলাইনে গণস্বাক্ষর অভিযানও শুরু করেছে। ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের এক ছাত্র বলেন, ‘আমাদের কোনো আবাসিক সুবিধা নেই। বাড়িওয়ালারা আমাদের প্রতিদিন চাপ দিচ্ছেন ভাড়ার জন্য। আমাদের অনেক বন্ধু-বান্ধবকে বাড়িওয়ালাদের হাতে মারও খেয়েছে। আমরা চাচ্ছি, প্রশাসন আমাদের সম্পূরক অর্থ সহায়তার আওতায় নিয়ে আসুক, যাতে আমরা বাসাভাড়াটা এখন দিতে পারি।

মহামারির কারণে পরিবারিক উপার্জন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী। তিনি নিজেও টিউশনি হারিয়েছেন। তার তিন মাসের মেসভাড়া বকেয়া পড়েছে। এর মধ্যে সীমিত আকারে অর্থনৈতিক কর্মকা- শুরু হওয়ায় ভাড়া পরিশোধের চাপ বাড়ছে। এই শিক্ষার্থী বলেন, যেহেতু লকডাউন খুলে দিছে, তাই মাসের ভাড়া মাসেই পরিশোধ করতে বলছে। আমার সমস্যা আছে, আমি এখন ভাড়া দিতে পারব না। তারপরও অনেক চাপ দিচ্ছে। এখন যদি আমাদের ভাড়াটা কিছুটা হলেও মওকুফ করা হতো, তাহলে ভালো হতো। আমরা তো এখন মেসে থাকি না, সেজন্য অন্যান্য চার্জ বাদ দিয়ে শুধু সিট ভাড়াটা নিতে পারে। প্রতিষ্ঠার এক যুগ পরও কোনো আবাসন ব্যবস্থা না হওয়ায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন মেসে ভাড়া থেকে পড়াশোনা চালাতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে উদ্যোগ দাবি করেছে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি প্রসেনজিৎ সরকার বলেন, তিন মাস ধরে শিক্ষার্থীদের বাসাভাড়া জমে আছে। এখন মালিকরা চাপ দিচ্ছে ভাড়ার জন্য। তাদের টিউশন নেই, কোনো কাজ নেই। সবার পরিবার তো সচ্ছল না, এখন এত টাকা একসঙ্গে তারা কীভাবে দেবে? ফলে তাদের মধ্যে চাপ তৈরি হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে আমরা দাবি জানিয়ে আসছি, মেসভাড়া হয় মওকুফ করতে হবে, নইলে সরকার বা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দায়িত্ব নিতে হবে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি কে এম মুত্তাকি বলেন, আমাদের বাসাভাড়া ১৭০০ থেকে ২৫০০ টাকার মতো পড়ে। সে ক্ষেত্রে প্রশাসন যদি মাসে প্রতি শিক্ষার্থীকে ১৫০০ টাকা করেও দেয়, তাহলে বাকিটা শিক্ষার্থীরা ম্যানেজ করে নিতে পারবে। এটা কেন করতে পারে তার পেছনেও আমাদের যুক্তি আছে। কারণ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় আমাদের শিক্ষার্থীদের পেছনে ব্যয় অনেক কম।

মেসভাড়া নিয়ে সংকটে পড়া শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ড. নূর মোহাম্মদের নেতৃত্বে কমিটি গঠন করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, বাড়িভাড়া-সংক্রান্ত সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে করণীয় ঠিক করতে কমিটিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যারা মেসে থাকে তাদের সমস্যা কীÑ সে বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলবেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের করণীয় কীÑ সেই সুপারিশ করবে এই এক সদস্যের কমিটি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close