বিশেষ প্রতিবেদক, রাজশাহী

  ২৫ মার্চ, ২০২০

বাংলাদেশি পাসপোর্টে ভারতীয় আসামি সৌদিতে

সেই হাফিজের পরিচয় শনাক্তে গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু

বাংলাদেশি নাগরিক বানিয়ে রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের মাধ্যমে ভারতের চিহ্নিত আসামি হাফিজ আহমেদকে পাসপোর্ট দেওয়ার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার সূত্র ধরে গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু হয়েছে। এই হাফিজ আহমেদ জঙ্গি নাকি শীর্ষ চোরাকারবারি তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরব পাড়ি জমানো ভারতের এই চিহ্নিত আসামির পরিচয় শনাক্ত করতে কতদিন সময় লাগবে তা এখনো পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ করোনাভাইরাসের প্রভাবে ভারতে প্রবেশাধিকারে নিষেধাজ্ঞা পড়ে যাওয়ায় কিছুটা বিলম্ব হতে পারে বলেও জানা গেছে।

জানা গেছে, পুলিশের প্রতিবেদন গোপন করে ভারতীয় নাগরিক হাফিজ আহমেদকে পাসপোর্ট দেওয়ার ঘটনায় গত ১২ মার্চ রাজশাহীর আদালতে মামলাটি করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ। মামলা নং-৪, তারিখ- ১২/০৩/২০। এ মামলায় রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসের তৎকালীন সহকারী পরিচালক আবজাউল হোসেনসহ আটজনকে আসামি করা হয়েছে।

মামলার অন্য আসামিরা হলেন পাসপোর্ট গ্রহণকারী ভারতের সেই নাগরিক হাফেজ আহমেদ, রাজশাহী পাসপোর্ট অফিসের এমএলএসএস রঞ্জুলাল, অফিস সহায়ক হুমায়ন কবির, উচ্চমান সহকারী দেলোয়ার হোসেন, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর আলমাস উদ্দিন, ইব্রাহিম হোসেন ও মুদ্রাক্ষরিক আবদুল ওয়াদুদ।

সেই হাফিজ আহমেদ ভারতের নাগরিক হয়েও বাংলাদেশের পাসপোর্ট কীভাবে হাতে পেল তা নিয়ে অনুসন্ধান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যে পাসপোর্ট ব্যবহার করে সৌদি আরব চলে গেছেন হাফিজ আহমেদ। গোয়েন্দা সংস্থার ধারণা, এই হাফিজ আহমেদ জঙ্গি অথবা শীর্ষ চোরাচালানি কিংবা মাদক ব্যবসায়ী।

এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ বলেন, ভারতীয় নাগরিককে পাসপোর্ট দেওয়া বড় ধরনের অপরাধ। হাফিজ আহমেদের বিরুদ্ধে ভারতে দুই-তিনটি মামলা আছে। তবে ওই মামলাগুলো নাশকতা নাকি মাদকসংশ্লিষ্ট, তা আমরা এখনো নিশ্চিত নই। তবে এগুলোর যেকোনো একটি হবে বিভিন্ন সংস্থার কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে এমনটিই এখন পর্যন্ত প্রায় নিশ্চিত। প্রাপ্ত তথ্যগুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।

মামলা সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ৬ জুন আসামি হাফিজ আহমেদ ভারতীয় নাগরিক হওয়া সত্ত্বেও মহানগরীর ছোট বনগ্রাম সপুরা এলাকার বাসিন্দা পরিচয়ে রাজশাহী পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্টের জন্য প্রি-এনরোলমেন্ট (আবেদন) সম্পন্ন করেন। এরপর মামলার দুই নম্বর আসামি রঞ্জুলাল সরকার ওই আবেদনটি অবৈধভাবে নিজ হেফাজতে রাখেন। পাসপোর্টের বিভিন্ন কার্যক্রম সম্পন্ন করে ওই বছরের ১২ জুলাই পুলিশ প্রতিবেদনের জন্য ৪৩টি আবেদনপত্রের সঙ্গে হাফিজ আহমেদেরও প্রয়োজনীয় তথ্য পাঠানো হয় রাজশাহী মহানগর পুলিশের বিশেষ শাখায়। এরপর ৩১ জুলাই পুলিশের পক্ষ থেকে হাফিজ আহমেদকে ভারতীয় নাগরিক বলে প্রতিবেদন পাঠানো হয় পাসপোর্ট অফিসে। কিন্তু এ তথ্য গোপন করেন পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

ফলে ওই বছরের ১৬ আগস্ট পাসপোর্টটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনুমোদনের জন্য মডিউলে চলে যায়। এরপর একই বছরের ৩০ আগস্ট পাসপোর্টটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়। অনুমোদনের পর ওই বছরের ৭ সেপ্টেম্বর পাসপোর্টটি গ্রহণ করেন হাফিজ আহমেদ। পাসপোর্ট পেয়ে তিনি বাংলাদেশ বিমানের বিজি ০০৩৫ ফ্লাইটযোগে ২০১৮ সালের ২৪ জানুয়ারি সৌদি আরবের উদ্দেশে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। এরপর তার আর খোঁজ পাওয়া যায়নি। পরে পাসপোর্টের আবেদনসহ অন্যসব কাগজপত্র রাজশাহী বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিস থেকে গায়েব করে দেওয়া হয়।

এরপর ভারতীয় একটি সংস্থার কাছ থেকে তথ্য পেয়ে বাংলাদেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থা হাফিজ আহমেদের বিষয়টি নিয়ে তৎপর হলে এমন জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পড়ে। এরপর পাসপোর্ট অফিসের কর্মচারী রঞ্জুলালকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তুলে নিয়ে কয়েক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেরিয়ে আসে এমন বড় অনিয়মের ঘটনা। এ ঘটনায় রাজশাহীর আদালতে একটি মামলা করে দুদক।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close