নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

বিনোদনের জন্যও ওড়ানো যাবে ড্রোন

গবেষণা, জরিপ, স্থিরচিত্র ধারণ, চলচ্চিত্র নির্মাণ, উন্নয়ন প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের মতো কাজ ছাড়াও বিনোদনের জন্য ড্রোন ওড়ানোর সুযোগ করে দিতে যাচ্ছে সরকার।

বিমানবন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার (কেপিআই) তিন কিলোমিটারের বাইরে ৫০ ফুটের কম উচ্চতায় এবং সাড়ে তিন কিলোমিটারের বাইরে ১০০ ফুটের কম উচ্চতায় সাত কেজির কম ওজনের ড্রোন ওড়াতে অনুমতির প্রয়োজন হবে না।

অন্যসব ক্ষেত্রে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) অনুমতি নিয়ে ড্রোন ওড়াতে হবে। সাত কেজির বেশি ওজনের ড্রোন আমদানিতে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিতে হবে।

এসব নিয়ম রেখে ‘ড্রোন নিবন্ধন ও উড্ডয়ন নীতিমালার’ খসড়া তৈরি করে তার ওপর অংশীজনদের মতামতও নিয়েছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।

মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (সিভিল এভিয়েশন) জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, আগামী সপ্তাহে সভা করে খসড়াটি চূড়ান্ত করা হবে, এরপর তা মন্ত্রিসভায় পাঠাব। মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিলে মন্ত্রণালয় থেকে গেজেট জারি করা হবে।

খসড়ায় বলা হয়েছে, কৃষিকাজ, কৃষির উন্নয়ন, আবহাওয়ার তথ্য সংগ্রহ; পরিবেশ ও ফসলের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ, মশার ওষুধ ও কীটনাশক স্প্রে, সার্ভের জন্য চিত্র ধারণ, চলচ্চিত্র নির্মাণ, গবেষণা কার্যক্রম, নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের জন্য বিশ্বব্যাপী ড্রোন ব্যবহার করা হয়।

বাংলাদেশেও ব্যক্তিগত, সরকারি, বেসরকারি, সামরিক ও বেসামরিক পর্যায়ে ড্রোনের ব্যবহার ক্রমাগত বাড়ছে। এছাড়া রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষার কাজেও এর ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে।

ড্রোনের ব্যবহার বাড়লেও ব্যক্তিগত বা রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা ভঙ্গ এবং জনগণ ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতির মতো অনৈতিক, বেআইনি বা সন্ত্রাসী কার্যকলাপে এ প্রযুক্তির অপব্যবহাররোধে বর্তমানে বাংলাদেশে ড্রোন আমদানি, ব্যবহার ও উড্ডয়ন অত্যন্ত সীমিত এবং কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত।

বিনোদনের জন্য ড্রোন ওড়াতে পারবে যে কেউ। তবে অন্যসব ক্ষেত্রে ড্রোন অপারেট করতে বয়স হতে হবে অন্তত ১৮ বছর এবং শিক্ষাগত যোগ্যতা হতে হবে ন্যূনতম এসএসসি।

সরকারের আমদানি নীতিমালা এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নির্ধারিত পদ্ধতিতে ড্রোন আমদানি করতে হবে উল্লেখ করে খসড়ায় বলা হয়েছে, ‘ক’, ‘খ’, ‘গ’ শ্রেণির জন্য সাত কেজির (পেলোডসহ) বেশি ওজনের ড্রোনের ক্ষেত্রে আমদানির আগেই ড্রোনের বিস্তারিত স্পেসিফিকেশন ও সংখ্যা উল্লেখ করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনাপত্তিপত্র নিতে হবে।

ড্রোন ওড়ানোয় বিধিনিষেধ

খোলা জায়গায় যেকোনো ড্রোন ওড়ানের আগে ওই এলাকার পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো ‘ভিভিআইপি মুভমেন্ট’ আছে কিনা, তা নিজ দায়িত্বে জেনে নিতে হবে। ভিভিআইপি মুভমেন্টের তারিখের তিন ঘণ্টা আগে থেকে ভিভিআইপি ?মুভমেন্ট শেষ না হওয়া পর্যন্ত ড্রোন ওড়ানো যাবে না।

খোলা স্থানে সভা, সমাবেশ এবং জাতীয়, আন্তর্জাতিক খেলা বা ইভেন্ট চলাকালে পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে ওই ইভেন্টের জন্য অনুমোদিত ড্রোন ছাড়া অন্য কোনো ড্রোন ওড়নো যাবে না।

ড্রোন ওড়ানোর সময় অনুমোদনের কপি এবং যে মোবাইল সিমের মাধ্যমে ড্রোনটি নিবন্ধন করা হয়েছে সেটি ড্রোন অপারেটরকে সবসময় সঙ্গে রাখতে হবে। কর্তৃপক্ষ চাইলে তা দেখাতে হবে।

অবকাঠামো, গাছপালা, ফসল, জনগণ ও যানবাহনের অবস্থান বা চলাচল এবং বিমান চলাচলের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি বা এসবের জন্য হুমকি সৃষ্টি হয়Ñ এমনভাবে ড্রোন ওড়ানো যাবে না।

জনসমাগমের স্থান, যানবাহন চলাচলের স্থান, বাজার বা বাণিজ্যিক এলাকা, আবাসিক এলাকা বা ভবন এবং অফিস আদালত থেকে অন্তত ৩০ মিটার দূরে ওড়াতে হবে ড্রোন। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট থানা বা স্থানীয় প্রশাসন ও বেবিচকের অনুমতি নিয়ে ওইসব এলাকায় ড্রোন ওড়ানো যাবে।

বিমানবন্দর ছাড়া কেপিআই বা বিশেষ কেপিআইয়ের তিন কিলোমিটারের মধ্যে ড্রোন পরিচালনার জন্য কেপিআই বা বিশেষ কেপিআই সংক্রান্ত কমিটির অনুমোদন নিতে হবে। বিমানবন্দরেরের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে ড্রোন পরিচালনার জন্য বেবিচক ও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে।

বাংলাদেশে বিদেশি মিশনে কর্মরত ব্যক্তি বা কূটনৈতিক ড্রোন ওড়াতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে আবেদন করতে হবে।

রাষ্ট্রীয়, জননিরাপত্তা, ব্যক্তিগত বা রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা, উড্ডয়ন সুরক্ষাসহ যেকোনো ধরনের সম্পত্তির নিরাপত্তা ও সিভিল এভিয়েশনের স্বার্থে বেবিচক ড্রোনের নিবন্ধন বাতিল করতে পারবে।

নিবন্ধন ছাড়া বা নীতিমালা অনুসরণ না ড্রোন ওড়ালে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী সাজা দেওয়া হবে বলে নীতিমালার খসড়ায় বলা হয়েছে।

ড্রোন অপারেশনের কারণে জনসাধারণের জানমাল ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ যে কোনো ধরনের ক্ষতি অথবা গোপনীয়তা ভঙ্গের জন্য ড্রোন অপারেটর ও অপারেটরের নিয়োগকারীকে দায়ী করে প্রচলিত আইনে সাজা দেওয়া হবে।

অননুমোদিত ড্রোন উড্ডয়নকারী এই নীতিমালা অথবা বেবিচকের শর্ত ভঙ্গ করে উড্ডয়নের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, গোপনীয়তা, জননিরাপত্তা, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বা গোপনীয়তা এবং বিমান চলাচলের নিরাপত্তা ও সুরক্ষা ভঙ্গকারী অপারেটর দেশের প্রচলিত আইনে শাস্তিযোগ্য হবেন।

ড্রোন ওড়ানোর কারণে জনসাধারণ ও প্রাণীর জীবন; জনসাধারণের সম্পত্তি ও গোপনীয়তা এবং রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা ও সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতির অভিযোগে দায়ী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান প্রচলিত আইনে বিচারযোগ্য এবং দন্ডনীয় হবে এবং আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবে বলেও খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close