আবদুল আলীম, নারায়ণগঞ্জ

  ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

না.গঞ্জে আবাসিকে চুন কারখানা, বাড়ছে শ্বাসকষ্ট

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে আবাসিক এলাকায় গড়ে উঠেছে অবৈধ চুন কারখানা। এসব কারখানা থেকে নির্গত হচ্ছে বিষাক্ত ধোঁয়া। চুন কারখানার নির্গত গ্যাসের কারণে স্থানীয়দের শ্বাস কষ্ট বেড়েছে। নিঃশ্বাস নেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়েছে তাদের। এরই মধ্যে এলাকাবাসীর মধ্যে শ্বাসকষ্টজনিত রোগ বাড়তে শুরু করেছে।

সিদ্ধিরগঞ্জের হিরাঝিলের ব্যবসায়ী রিপন মেসার্স রনি লাইমস কারখানার পাশেই বসবাস করে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। তিনি বলেন, চুন কারখানার মালিকরা এলাকার প্রভাবশালী। সাধারণ মানুষ তাদের বিরুদ্ধে কোনো কিছু বলতে সাহস পায় না। চুন প্রস্তুতকারী মেসার্স রনি লাইমস ও মেসার্স সুরমা লাইমস তিন দশক ধরে গ্যাসের আগুন ব্যবহার করে পাথর পুড়িয়ে চুন উৎপাদন করে আসছে। আবাসিক এলাকায় এসব কারখানা স্থাপন অবৈধ হলেও নিজেদের প্রভাব খাটিয়ে দিনের পর দিন কারখানা চালিয়ে আসছেন তারা।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডে মোট ৯টি চুন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কারখানার আশপাশের বাসিন্দাদের সবাই চুন কারখানার আগুনের উত্তাপ, গন্ধ আর কালো ধোঁয়ার দূষণে নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

সরেজমিন দেখা গেছে, হিরাঝিল আবাসিক এলাকায় অবস্থিত রনি লাইমসে একটি ভাট্টিতে চুন পোড়ানো হচ্ছে। দাউ দাউ করে গ্যাসের আগুন জ্বলছে। কালো ধোঁয়ায় আশপাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে গেছে। রনি লাইমসের সীমানা ঘেঁষে রয়েছে মেসার্স সুরমা লাইমস। ওই দুই কারখানার আনুমানিক ১০০ মিটারের মধ্যে মেসার্স মদিনা লাইমস নামে আরেকটি কারখানায় চুন তৈরি করা হচ্ছে।

এই তিন কারখানার মধ্যে সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ওমর ফারুকের কার্যালয়। রনি লাইমসের ভেতরে ৬৪ ফুট জায়গা ডিএনডি নিষ্কাশন খালের বলে চিহ্ন দিয়ে গেছে সেনাবাহিনী ও জেলা প্রশাসনের জরিপকারী দল। এ নিয়ে ডিএনডি ও রনি লাইমসের মধ্যে উচ্চ আদালতে মামলা চলছে।

রনি লাইমস, সুরমা লাইমস ও মদিনা লাইমসের চার পাশেই আবাসিক বহুতল ও টিনশেড ভবন। রনি ও সুরমা লাইমসের সীমানা ঘেঁষে দক্ষিণ পাশের চারতলা বাড়ির মালিক বাশার মিয়া। তিনি বলেন, ১৯৮৮ সালে আমাদের বাড়িটি টিনশেড ছিল। আমার বাবা বাড়িটি টিনশেড করার দুই থেকে তিন বছর আগে সেখানে সুরমা লাইমস ছিল। ১৯৯০ সালের দিকে গড়ে ওঠে রনি লাইমস। তখন থেকেই আমরা ভুগছি। এখানে যদি কেউ বসবাস না করে, তাকে বোঝানো যাবে না পরিস্থিতি কী? গ্যাসের আগুন যখন দাউ দাউ করে জ্বলে, তখন গন্ধ আর তাপে ঘরে থাকা কষ্ট হয়ে যায়। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়।

ওই তিন কারখানার ৩০০ থেকে ৪০০ মিটার দূরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সীমানা ঘেঁষে পশ্চিম পাশে মেসার্স ফয়সাল লাইমস। চুন প্রস্তুতের জন্য আনা পাথরগুলো ট্রাকে করে এনে প্রথমে মহাসড়কের ওপর রাখা হয়। পাথরগুলো ট্রাক থেকে নামানোর সময় মাঝেমধ্যে মহাসড়কে যান চলাচলেও প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। ফয়সাল লাইমসের অদূরে একটি চারতলা ভবনে মাদরাসা, একটি চারতলা আবাসিক ভবন, কয়েকটি টিনশেড বাড়ি আর কাছেই এক ভবনে কমিউনিটি সেন্টার ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ড এলাকার ডিএনডি সেচ খালের পাড়ে সিআইখোলা ও মক্কীনগর এলাকায় রয়েছে জাজিরা লাইমস, ঢাকা লাইমস, যমুনা লাইমস ও আরাফাত লাইমস। সিআইখোলা এলাকার বাসিন্দা জহির বলেন, চুন কারখানাগুলো গড়ে উঠেছিল ১৯৮৫ সাল থেকে ১৯৯২ সালের মধ্যে। তখন বসতি কম ছিল।

এ বিষয়ে ঢাকা ও যমুনা লাইমসের মালিক খোরশেদ আলম বলেন, চুন প্রতিষ্ঠানগুলো আগে থেকেই এখানে আছে। নতুন করে কোনো প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেনি। পরিবেশ অধিদফতর আমাদের ছয় মাসের সময় বেঁধে দিয়েছে কারখানাগুলো সড়িয়ে নিতে কিন্তু সরকার আমাদের জন্য জায়গা নির্দিষ্ট করে না দিলে আমরা কোথায় প্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেব, প্রশ্ন করেন তিনি।

নারায়ণগঞ্জ পরিবেশ অধিদফতরের উপপরিচালক সাঈদ আনোয়ার বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মালিকরা কারখানা সরিয়ে না নিলে তাদের লাইসেন্স নবায়ন করা হবে না এবং গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন বলেন, আবাসিক এলাকায় এসব প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠা কাম্য নয়। কারখানা মালিকদের ছয় মাসের সময় দেওয়া হয়েছে এর মধ্যে তারা কারখানা অন্যত্র সরিয়ে না নিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close