মো. লিটন খান, কেরানীগঞ্জ (ঢাকা)

  ২৩ জানুয়ারি, ২০২০

অগ্নিঝুঁকিতে কেরানীগঞ্জের ২ লাখ শ্রমিক

রাজধানীর কেরানীগঞ্জে বিভিন্ন ধরনের ৩ হাজারের বেশি কারখানা রয়েছে এর মধ্যে বেশির ভাগই পোশাক সংশ্লিষ্ট। এছাড়া পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্য বিক্রির জন্য এ এলাকায় দোকান রয়েছে আরো প্রায় ৫ হাজার। এসব কারখানা ও দোকানে প্রায় ২ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। তবে অগ্নিকান্ডের মতো বড় কোনো দুর্ঘটনা ঠেকাতে এখানে নেই তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা। তারই সাম্প্রতিকতম নমুনা গত ৫ জানুয়ারি কদমতলী কেমিক্যাল গোডাউনে বিস্ফোরণ ও ১২ ডিসেম্বর প্রাইম পেট প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে ২৪ জনের মৃত্যু।

এসব কারখানার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, তৈরি পোশাক শিল্পে বহির্বিশ্বে ব্যাপক পরিচিত বাংলাদেশ। বুড়িগঙ্গা তীরের শুভাঢ্যা ও আগানগর ইউনিয়নের চরকালীগঞ্জ, খেজুরবাগ, কালীগঞ্জ, আগানগর, নাগরমহল ও ইস্পাহানি এলাকায় গড়ে উঠেছে প্রচুর পোশাক কারখানা। দেশে তৈরি পোশাকের প্রায় ৭০ ভাগ চাহিদা মেটায় এসব কারখানা। তবে এ গার্মেন্টস পল্লীর যাতায়াত ব্যবস্থা খুবই খারাপ। ফলে এখানে বড় ধরনের অগ্নিকান্ড ঘটলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা স্থানীয়দের। যাতায়াত ব্যবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে ফায়ার সার্ভিসকেও আগুন নেভাতে বেগ পেতে হবে।

এ বিষয়ে কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রামানন্দ সরকার বলেন, পোশাক কারখানার জন্য ব্যবহৃত যেসব ভবন বিল্ডিং কোড মেনে তৈরি করা হয়নি সেগুলো পুনরায় সংস্কার করলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।

এ ব্যাপারে কেরানীগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন সঙ্গে আমি একাধিকবার কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস পল্লী পরিদর্শন করেছি। তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ নির্দেশনা দিয়েছেন, যেসব ভবন নির্দেশনা মানবে না, তাদের সব ধরনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে।

গার্মেন্টস পল্লীর কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রায় ৫০ বছর আগে গড়ে ওঠা এ গার্মেন্টস পল্লী ধীরে ধীরে বিস্তৃত হলেও এখানে কোনো রকম অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখা হয়নি। তবে নতুন যেসব মার্কেট হচ্ছে সেগুলো নিয়মকানুন মেনে হচ্ছে বলে জানান তারা। কেরানীগঞ্জ পোশাক পল্লীর অগ্নিদুর্ঘটনা এড়াতে জনসচেতনতা বৃদ্ধি ছাড়া কোনো পথ নেই বলে অভিমত তাদের।

স্থানীয় বাসিন্দা আলম হাজি বলেন, কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস পল্লী আমাদের জন্য একটি গর্বের বিষয়। কিন্তু এ পল্লি গড়ে ওঠার সময় বেশির ভাগ ভবন ও কারখানায় অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখা হয়নি। এমনকি শুরুর দিকে যেসব ভবন করা হয়, সেগুলোর বিল্ডিং কোডও মানেনি। কালীগঞ্জ এলাকার আর এক বাসিন্দা ফরিদ বলেন আমাদের বাড়িঘর এখানেই। ২০ বছর আগেও গার্মেন্টস পল্লীর পরিধি এত বড় ছিল না। গত কয়েক বছরে এটি বড় আকারে বিস্তার লাভ করলেও, সেই অনুযায়ী রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করা হয়নি। এ অবস্থায় এলাকায় আগুন লাগলে আমরা ঘর ছেড়ে পালানোরও সুযোগ পাবো না।

কেরানীগঞ্জ গার্মেন্টস ও দোকান মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ শেখ কাওসার প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, প্রায় ৫০ বছর আগে এই গার্মেন্টস পল্লী গড়ে উঠেছে। শুরুর দিকে এত কারখানা ছিল না। ধীরে ধীরে বেড়েছে। আমরা ছোট বেলায় দেখেছি মাঝে মাঝেই এখানে আগুন লাগত। শুরুর দিকে কোনো অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা না রাখায় এখন সচেতনতা বৃদ্ধি করা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই। আমরা সব কারখানায় লিফলেট বিতরণ করছি। প্রতিটি দোকান ও কারখানায় অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close