মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ২০ জানুয়ারি, ২০২০

‘কর্ণফুলী নদী বাঁচলেই চট্টগ্রাম বন্দর বাঁচবে’

আগে নদীকে রক্ষা করতে হবে, নদী বাঁচলেই বন্দর বাঁচবে। যে নদীকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বন্দরের গড়ে ওঠা, সেই কর্ণফুলী নদীকেই শ্বাসরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের বিভিন্ন স্থাপনা ও কার্যক্রম পরিদর্শন করতে এসে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম গতকাল এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মক্ষমতা বাড়লে দেশের অর্থনীতিতেও এর বিরাট প্রভাব পড়বে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বন্দর ভবনের সম্মেলন কক্ষে গতকাল রোববার দুপুরে বন্দর ব্যবহারকারীদের সঙ্গে বন্দরের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে আসা ছয় সদস্যের সংসদীয় কমিটির মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। তার সঙ্গে ছিলেন, কমিটির সদস্য রণজিৎ কুমার রায়, মাহফুজুর রহমান মিতা, ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, এস এম শাহজাদা, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব আবদুছ ছাত্তার, উপসচিব বেগম মালেকা পারভীন, ড. দয়াল চাঁদ ম-ল, জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের উপপরিচালক আবদুল জব্বার ও সিনিয়র সহকারী সচিব এস এম আমিনুল ইসলাম। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল জুলফিকার আজিজ, সদস্য (প্রশাসন) মো. জাফর আলম, সদস্য (প্রকৌশল) ক্যাপ্টেন এম মহীদুল হাসান, হারবার মেরিন কমডোর শফিউল বারী, সদস্য অর্থ কামরুল আমীন, চিফ হাইড্রোগ্রাফার কমান্ডার এম আরিফুর রহমান ও সচিব মো. ওমর ফারুক।

কর্ণফুলীর দূষণ, এর নাব্যের ওপর হুমকিসহ অবৈধ বালু উত্তোলন বিষয়ে কমিটি কী ব্যবস্থা নিতে পারে, প্রতিদিনের সংবাদের এমন প্রশ্নের জবাবে সংসদীয় কমিটির সভাপতি মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বলেন, বন্দরের দুপাশের জায়গাগুলো কাউকে লিজ না দেওয়ার কথা থাকলেও সে ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা হচ্ছে না। নদীর দুপাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদসহ কর্ণফুলীর দূষণরোধে নদী কমিশনকেও বিষয়টি নিয়ে বলবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বে-টার্মিনালের পরিকল্পনা কুমিরা পর্যন্ত সম্প্রসারিত হতে হবে। এ এলাকায় যাতে আর কেউ স্থাপনা গড়তে না পারে, বন্দরের কার্গোর জন্য ডেডিকেটেড সড়ক ও রেলপথ থাকতে হবে। এটি সবচেয়ে জরুরি। তিনি উদারহরণস্বরূপ বলেন, জার্মানির হামবুর্গ পোর্টে দেখেছি ১৪টি দেশের জন্য ডেডিকেটেড রেললাইন। পদ্মা সেতু হয়ে গেলে জিডিপিতে দেড় শতাংশ প্রবৃদ্ধি বাড়বে। আগামী ৫০ বছরের ভবিষ্যৎ বন্দরের রূপরেখা সামনে নিয়ে এখন থেকেই এগোতে হবে।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চিন্তা-চেতনায় চট্টগ্রামের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি রয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল জুলফিকার আজিজ বলেন, কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৮ সালে যেখানে কনটেইনার ওঠানামা করেছিল ২৯ লাখ ৩ হাজার টিইইউস, সেটা ২০১৯ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ৩০ লাখ ৮৮ হাজার টিইউএসএ। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। কার্গো হ্যান্ডলিং বৃদ্ধি পেয়ে ১০ কোটি টনে দাঁড়িয়েছে। তিনি বলেন, বিশ্বে চট্টগ্রাম বন্দরের অবস্থান এখন ৬৪তম। আগে ২০০৯ সালে ছিল ৯৮তম। বর্তমানে ১৭টি জেটি বার্থ আছে, ছয়টি নির্মাণাধীন আছে। জেটি তৈরি হবে চাহিদার ওপর। তিনি ভবিষ্যতে কর্মকা- আরো কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুব আলম বলেন, বে-টার্মিনালসহ চট্টগ্রাম বন্দরের হাতে নেওয়া বিভিন্ন প্রকল্প সমাপ্ত করতে টাইম ফ্রেমের মধ্যেই সম্পন্ন করতে হবে। একুশ শতকের বন্দর কী হবে আমাদের এখন থেকেই টার্গেট ঠিক করতে হবে।

মেট্রোপলিটন চেম্বারের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ এম মাহবুব চৌধুরী বলেন, পোর্ট চার্জ বাড়িয়েছিল এক-এগারোর সময়। হাইয়েস্ট কস্ট এখনো দিচ্ছি। সাত দিনে চীন থেকে ভিয়েতনামের কারখানায় কাঁচামাল চলে যায়। আমাদের লিড টাইম অনেক বেশি।

বিজিএমইএর প্রথম সহসভাপতি এম এ সালাম বলেন, বন্দরের লিড টাইম, ব্যবসার কস্ট কমাতে হবে। আরএমজিতে নেগেটিভ গ্রোথে আছি। প্রতিযোগী দেশের মতো করতে হবে। খালি কনটেইনার পড়ে আছে। আমরা সহযোগিতা চাই ডেলিভারিতে। ৯৪ শতাংশ কনটেইনার যায় সড়কপথে। রেলে কনটেইনারের সিরিয়াল পেতে ১৫ দিন লাগে। প্রয়োজনে কনটেইনার পরিবহন বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া যায়।

সিএন্ড এফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু বলেন, বন্দরের লোকের চেয়ে অতিথি বেশি। আনসার বেশি। কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের জন্য টেন্ডার করে। আমরা মনে করি লেবার হ্যান্ডলিংয়েরও টেন্ডার করা উচিত।

শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আহসানুল হক চৌধুরী বলেন, কনটেইনার দ্রুত সরবরাহ নেওয়ার জন্য আমদানিকারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হবে। বন্দরের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম বলেন, দুই ঈদে ১৮ দিন খোলা রাখি, বন্দর পাহারা দিই। বন্দরকে প্লেনের মতো চিন্তা করতে হবে। তাই এক দিন আগে কনটেইনারের অ্যাসাইনমেন্ট নিতে হবে। আমরা অনলাইনে এটি নেব। রেফার কনটেইনারের বিদ্যুৎ চার্জ অযৌক্তিক, কিন্তু অডিট আপত্তি দেবে।

পরিচালক শাহেদ সরওয়ার বলেন, নিলাম প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে অ্যাকশন চাই। রেফার কনটেইনারে বছরের পর বছর ইলেকট্রিক বিল দিতে হচ্ছে। এতে বন্দর সম্পর্কে নেতিবাচক মেসেজ যাচ্ছে। স্পেশাল ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট চাই বন্দর এলাকায়। শ্রমিকদের ১০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে হবে।

বার্থ অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফজলে ইকরাম চৌধুরী বলেন, বন্দরের সাফল্যে বার্থ অপারেটরের ভূমিকা অপরিসীম। পিসিটিতে দেশি অপারেটরদের সুযোগ দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে পদ্মা সেতু হলে পিসিটিও দেশি অপারেটররা পরিচালনা করতে পারবেন। বার্থ অপারেটরদের আরো হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট দিলে বন্দরের সক্ষমতা বাড়বে।

বাফার পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, স্ক্যানিং সঠিকভাবে হচ্ছে না। স্ক্যানিং না হলে রফতানি কার্গো যুক্তরাষ্ট্রের পোর্টে জটিলতা তৈরি করবে। খুবই জরুরি ভিত্তিতে স্ক্যানিং মেশিন দিতে হবে। এলসিএল পণ্যের জন্য বন্দরের বাইরে শেডে আনার সুযোগ দিতে হবে। হেজার্ড কার্গোর কনটেইনার রাখার জন্য ডাম্পিং শেড দেওয়া যেতে পারে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close