এস এইচ এম তরিকুল, রাজশাহী

  ১৯ জানুয়ারি, ২০২০

৪০ কিমি ডুয়েলগেজে পাল্টে যাবে রাজশাহীর উন্নয়ন চিত্র

রেলপথে মাত্র ৪০ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ বসানো হলে পাল্টে যাবে রাজশাহীর উন্নয়ন চিত্র। রাজশাহীর মানুষ রেলপথে যুক্ত হতে পারবে সারা দেশের সঙ্গে। দেশ ও বিদেশের সঙ্গে সংযুক্ত হতে পারবে ব্যবসায়িক বা শিল্পায়নে। আর এটা বাস্তবায়নে দরকার রাজশাহী থেকে আবদুলপুর পর্যন্ত রেলপথে ডুয়েলগেজ বসানো।

রাজশাহী বাংলাদেশের প্রাচীন শহর। তদানীন্তন ব্রিটিশ শাসনামল থেকে রাজশাহী একটি বিভাগীয় শহর। সেই সময় থেকে এই শহরে গড়ে উঠে বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তাই বাংলাদেশের অন্যতম শিক্ষানগরী হিসেবে রাজশাহী খ্যাত। এই নগরীতে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা অনুষদের আওতায় প্রায় দুই লক্ষাধিক শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। তবে অনুন্নত যোগাযোগের কারণে এখানে কোন শিল্প-কলকারখানা গড়ে উঠেনি। তাই শিক্ষার বিভিন্ন স্তরের অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ইন্টার্নশিপ করতে প্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান পায় না, ফলে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর বিষয়েও সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। ফলে রাজশাহী থেকে সরাসরি ডুয়েলগেজ রেলপথের মাধ্যমে চট্টগ্রাম ও সিলেটের সঙ্গে রেল যোগাযোগ চালু করতে পারলে রাজশাহীতে পোশাক শিল্প, চা, বিখ্যাত চুনাপাথর ইত্যাদিসহ দ্রুত বিকাশ করা সম্ভব। আর দেশের ওইসব প্রান্তের সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত হতে প্রয়োজন মাত্র ৪০ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ বসানো।

এছাড়াও ডুয়েলগেজ রেলপথের মাধ্যমে এখান থেকে কনটেইনারের মাধ্যমে পণ্য পরিবহনের ব্যবস্থা করা হলে পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারাই রাজশাহীতে পোশাক কারখানা গড়ে তুলবেন, কারণ ঢাকার আশপাশে যেমন ময়মনসিংহের ভালুকা, গাজীপুরের কালিয়াকৈর এসব স্থান থেকে যানযট পেরিয়ে তৈরি পোশাক পণ্য কমলাপুর কনটেইনার ডিপোতে আসতে যে সময় লাগে তার চেয়ে কম সময়ে রাজশাহী থেকে পণ্য ঢাকা হয়ে চট্টগ্রাম পৌঁছে যেতে পারবে। তাই রাজশাহীর সঙ্গে রেলপথে সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামের সরাসরি যোগাযোগ করতে পারলে শিল্পের যেমন বিকেন্দ্রীকরণ হবে ঠিক তেমনি বেকারত্বের প্রকটতা হ্রাস পাবে। সেই সঙ্গে সারা দেশের অর্থের তারল্য প্রবাহ অর্থনীতির গতিময়তা সুষমভাবে প্রবাহিত হবে।

এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, রাজশাহী থেকে আবদুলপুর পর্যন্ত ডুয়েল গেজ না থাকায় রাজশাহী থেকে বগুড়া, রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁ, পঞ্চগড় শহরের সঙ্গে কোনো রেলযোগাযোগ নেই। যে কারণে আবদুলপুর থেকে রাজশাহী মাত্র ৪০ কিলোমিটার রেলপথে ডুয়েলগেজ বসানো হলে রাজশাহী থেকেও দুই ধরনের ট্রেন চলতে পারবে। সেক্ষেত্রে রাজশাহী থেকে সান্তাহার হয়ে বগুড়া, লালমনিরহাট, পাটগ্রাম পর্যন্ত আবার পার্বতীপুর থেকে একদিকে রংপুর অন্যদিকে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও হয়ে পঞ্চগড় সরাসরি ট্রেন যেতে পারবে।

এছাড়াও আবদুলপুর থেকে রাজশাহী পর্যন্ত ডুয়েল গেজ হলে রাজশাহী থেকে জামালপুর-ময়মনসিংহ হয়ে অথবা টঙ্গী হয়ে চট্টগ্রাম এবং সিলেট পর্যন্ত রাজশাহীর ট্রেন যোগাযোগ স্থাপিত হবে। পণ্য পরিবহনেও এই স্টেশন বড় ভূমিকা রাখবে।

কারণ হিসেবে দেখা গেছে, সিলেট থেকে কয়লা ও পাথর, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বিভিন্ন পণ্য, পাটগ্রাম-বুড়িমারী সীমান্ত থেকে কয়লা, পঞ্চগড় সীমান্ত থেকে ডোমার বালু ও পাথর এবং অন্যান্য পণ্য রাজশাহীতে সহজেই আসতে পারবে। এছাড়াও আবদুলপুর-রাজশাহী পর্যন্ত ডাবল লাইন হলে এসব বাড়তি ট্রেনের ক্রসিংয়ে কোনো সমস্যা থাকবে না এবং এতে করে ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ও থাকবে না।

এ বিষয়ে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি লিয়াকত আলী প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, রাজশাহীর উন্নয়নে বাধা কাটাতে এর আগে এমনই তথ্য সংশ্লিষ্ট দফতরে প্রদান করেছেন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদ। একই সঙ্গে সারা দেশের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন ও রেলযাত্রী সেবার মানোন্নয়নের জন্য দাবিও জানানো হয়েছে। যে দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গত ১৫ জানুয়ারি পশ্চিম রেলের ব্যবস্থাপকের সঙ্গে একটি মতবিনিময় সভা শেষে রেলওয়ে মহাপরিচালক বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হেেছ। স্মারকলিপির অনুলিপি রেলপথমন্ত্রী, রাজশাহী সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও সংশ্লিষ্ট দফতরেও পাঠানো হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close