নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২৬ ডিসেম্বর, ২০১৯

বিআরইবি মুজিববর্ষেই নিশ্চিত করবে ‘ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ কর্মসূচি

‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ-ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’- এই মহতী উদ্যোগ বাস্তবায়নে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বাপবিবো) এখন সফলতার দ্বারপ্রান্তে। বিদ্যুৎ দেশের সার্বিক উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি। বাপবিবোর আওতাধীন ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই চালিকাশক্তি হিসেবে ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ হয়ে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎসেবা প্রদান করছেন। এতে গ্রাহক ভোগান্তি অনেকাংশেই হ্রাস পেয়েছে।

বর্তমান সরকারের আমলে বাপবিবোর সফলতা আকাশচুম্বী। বিগত ৫ বছরের বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের উদ্যোগে এডিবি বাস্তবায়নের হার ছিল প্রায় শতভাগ। বাংলাদেশের ৩ কোটি ৫৩ লাখ গ্রাহকের মধ্যে কেবলমাত্র বাপবিবোর্ডের সংযোগ হচ্ছে ২ কোটি ৭৫ লাখ। ‘মুজিব বর্ষে’ বাপবিবোর ভৌগোলিক এলাকার শতভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা ভোগ করবে। ফলশ্রুতিতে আমাদের মহান নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ার কাজ সম্পন্ন হওয়ার দিকে এগিয়ে যাবে এবং বর্তমান সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার ‘আমার গ্রাম আমার শহর’ বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত হবে। এ মুহূর্তে বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের ৯৪ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে এবং লোডশেডিং বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে।

বাংলাদেশের ৭৪ হাজার ৩৬০টি গ্রাম (৮৮ শতাংশ) এবং ৩৬১টি উপজেলা (৭৮ শতাংশ) এরই মধ্যে শতভাগ বিদ্যুতায়িত হয়েছে, যার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শতভাগ বিদ্যুতায়িত ২১১টি উপজেলা আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেছেন। অবশিষ্ট গ্রাম/উপজেলাগুলোর ৭০ থেকে ৯৫ শতাংশ বিদ্যুতায়িত হয়েছে, যা ২০২০ সালের মধ্যে শতভাগ সম্পন্ন হবে। ৪ লাখ ৭২ হাজার কিলোমিটার বিতরণ লাইন এবং ১২ হাজার ৪৮৫ এমভিএ ক্ষমতাসম্পন্ন ১ হাজার তিনটি উপকেন্দ্র সংবলিত সুবিশাল পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমের মাধ্যমে এ প্রতিষ্ঠান প্রতিনিয়ত ৭ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। বর্তমানে সিস্টেম লস মাত্র ১০ দশমিক ৯১ শতাংশ, যা ২০০৮ সালে ছিল ১৮ শতাংশ । এ স্বল্প সময়ের মধ্যে সিস্টেম লস প্রায় ৭ দশমিক ৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। প্রায় সাড়ে ৩ লাখ সেচ সংযোগের মাধ্যমে দেশের প্রায় ৫৫ দশমিক ৫৬ লাখ হেক্টর জমি সেচের আওতায় এসেছে এবং দেশে খাদ্য উৎপাদন ব্যাপক পরিমাণে বৃদ্ধির সুযোগ তৈরি হয়েছে। প্রায় ১৯ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ ৮৭ হাজার ৬১৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানের কারণে কম্পিউটার, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ও অন্যান্য আধুনিক উপকরণ ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে গ্রামাঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার গুণগতমান বৃদ্ধি পাচ্ছে। ৩ লাখ ৪০ হাজার মসজিদ, মন্দির ও গির্জাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করায় ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান পালন সুন্দর ও সহজতর হচ্ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি বিশেষত সৌরশক্তির ব্যবহার প্রসারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড বাংলাদেশে পথিকৃৎ। ১৯৯৩ সালে একটি প্রকল্পের আওতায় ১৫ হাজার ২৫০টি সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনের মাধ্যমে বাপবিবো সর্বপ্রথম বাংলাদেশে সোলার হোম সিস্টেম স্থাপনের সূচনা করে। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পর ছিটমহলগুলোতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অত্যন্ত দ্রুততম সময়ে ৩০৮ কিলোমিটার লাইন নির্মাণ করে বাপবিবোর উদ্যোগে ১১ হাজার ৮৮২টি পরিবারকে ২০১৫ সালের ১৫ অক্টোবর বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে এসব এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে।

প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ‘আশ্রয়ণ’ প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীন, গৃহহীন অসহায় জনগণকে পুনর্বাসিত করার জন্য ৯১৯টি প্রকল্প-গ্রামে ১৯ হাজার ৪৭৮টি পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। সম্প্রতি সরকার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের ঘোষণা দিয়েছে। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলের সিংহভাগই পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ভৌগোলিক এলাকায় অবস্থিত। তৎপ্রেক্ষিতে এসব অর্থনৈতিক জোনে নিরবচ্ছিন্ন এবং গুণগত মানসম্পন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে বৈদ্যুতিক অবকাঠামো নির্মাণ এবং বিদ্যমান অবকাঠামো উন্নয়নের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে বাপবিবো গ্রাহক সেবায় অনলাইন বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদান, অনলাইনে বিল গ্রহণ, অনলাইনে মালামাল ব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন কর্মকান্ড চালু করেছে। গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সুবিধা সম্প্রসারিত হওয়ায় সেখানে বসবাসরত জনগণের তথ্য ও সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৪ হাজার ৫৫৪টি ইউনিয়ন পরিষদে ডিজিটাল ইনফরমেশন সেন্টার (ডিআইসি) স্থাপন করা হয়েছে। ফলে গ্রামের জনগণের তথ্য ও সেবা প্রাপ্তি সহজ হয়েছে এবং বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ২০২০ সালের মধ্যে আরইবি এবং ৮০টি সমিতিতে ‘পেপারলেস অফিস’ বাস্তবায়ন কাজ চলমান আছে। ‘শেখ হাসিনার উদ্যোগ- ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ এই কালজয়ী কর্মদ্যোগকে ধারণ করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাপবিবোর উদ্যোগে ‘পল্লী বিদ্যুতের উঠান বৈঠক’ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের স্বপ্নদ্রষ্টা প্রধানমন্ত্রীর উদ্ভাবনী উদ্যোগ ‘ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ’ পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকারকে সামনে রেখে বাপবিবো নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিদ্যুৎ বিভাগের উদ্যোগে বাপবিবোকে ‘জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কার’ প্রদান এবং ‘আলোর ফেরিওয়ালা’ উদ্ভাবনী উদ্যোগের জন্য ‘ইনোভেশন শোকেসিং-২০১৯ পুরস্কার’ প্রদান করা হয়। সরকারের ভিশন-২০২১ অনুযায়ী গ্রামীণ জনগণের ঘরে ঘরে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ ও সেবা প্রদানের জন্য বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে ২০১৮ সালে ‘দ্রুত বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা সম্প্রসারণে অবদানের স্বীকৃতি প্রদান’ ও ২০১৬ সালে বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন ‘সেরা সরকারি বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে মনোনীত করে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক পুরস্কারসহ সনদ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ২০১৫ সালে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ‘সর্বোচ্চ মূসক প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে রাজস্ব বোর্ড কর্তৃক পুরস্কারপ্রাপ্ত হয়েছে। বর্তমান সরকারের দূরদৃষ্টি, সুযোগ্য নেতৃত্ব, জনগণের প্রতি অঙ্গীকার, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের টিমওয়ার্ক এবং সর্বোপরি সবার ঐকান্তিক সহযোগিতায় এ সাফল্য অর্জিত হয়েছে।

বাপবিবো’র আওতধীন ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) উদ্যোগে এরই মধ্যে ১ লাখ ৬৩ হাজার ১৫৮টি ক্ষুদ্র শিল্প, ১২ হাজার ৪১০টি মাঝারি শিল্প এবং ৩৪২টি বৃহৎ শিল্প অর্থাৎ মোট ১ লাখ ৭৫ হাজার ৯১০টি শিল্প প্রতিষ্ঠানে সংযোগ প্রদান করা হয়েছে। গ্রামাঞ্চলে বর্তমানে ইজিবাইকের মাধ্যমে জনগণের যাতায়াত সহজতর হয়েছে। তাছাড়া পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রেও ইজিবাইক ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। ইজিবাইকের ব্যাটারি চার্জিংয়ের জন্য ১৪টি সোলার চার্জিং স্টেশন এবং ১ হাজার ৬৭১টি গ্রিড চার্জিং স্টেশন স্থাপন করা হয়েছে। বাপবিবোর তত্ত্বাবধানে ২১টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে এ পর্যন্ত ১৩৩টি নেট মিটারিং স্থাপিত হয়েছে। বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি এরই মধ্যেই পল্লী বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমে যথাযথ ব্যবস্থাপনা, গুণগত সেবা, স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close