চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯

পূর্বাঞ্চল রেলে ইঞ্জিন সংকট : কমছে আয়

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ট্রেনে পণ্য বোঝাই করার পর ইঞ্জিন সংকটের কারণে যাত্রা বাতিল করতে হচ্ছে। চার দিনে আটবার পণ্যবাহী ট্রেনের যাত্রা বাতিল করতে হয়েছে। ফলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাহিদা মোতাবেক পণ্য সরবরাহ দিতে না পারায় রেলওয়ের মাসে আয় কমছে প্রায় ২ কোটি টাকা। এ তথ্য রেলওয়ের পরিবহন ও বাণিজ্যিক বিভাগের।

রেলওয়ের পরিবহন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ থেকে ৮ ডিসেম্বর বিভিন্ন পণ্য বোঝাই করার পর ইঞ্জিন সংকটের কারণে আটবার যাত্রা বাতিল করা হয়। এর মধ্যে ৪ ডিসেম্বর ১৪০টি গাড়ির মধ্যে কন্টেইনার বোঝাই ছিল ২৮০টি, ৬০টি গাড়ির মধ্যে ট্যাংক বোঝাই ছিল ১২০টি, ৩৯টি গাড়ির মধ্যে ফার্টিলাইজার বোঝাই ছিল ৬০ এবং সদর রসুলপুরে ১৬টি গাড়ির মধ্যে বিকেসি বোঝাই ছিল ৩২টি। ইঞ্জিন না থাকায় ৯৬১ নম্বরধারী ট্রেনটি সাড়ে ১১টার পরিবর্তে রাত ১টা ৩৫ মিনিটে ছাড়ে। এ ছাড়া সদর রসুলপুর বিকেসি স্পেশাল এবং ৯৫১ ট্যাংকবাহী স্পেশাল ট্রেনটি বাতিল করা হয়। ৫ ডিসেম্বর ১০০ গাড়ির মধ্যে কন্টেইনার বোঝাই ছিল ২০০টি, ২৮টি গাড়ির মধ্যে ট্যাংক বোঝাই ছিল ৫৬টি, ১৬ গাড়ির মধ্যে বিকেসি বোঝাই ছিল ৩২টি, ৩০টি গাড়ির মধ্যে ফার্টিলাইজার ৬০টি বোঝাই থাকার পরও ইঞ্জিন না পাওয়ায় সদর রসুলপুর বিকেসি পার্বতীপুর ফার্টিলাইজার স্পেশাল ট্রেনটি বাতিল করা হয়। ৬ ডিসেম্বর ৮০টি গাড়ির মধ্যে কন্টেইনার বোঝাই করা হয় ১০০টি, ৩২টি গাড়ির মধ্যে ফার্টিলাইজার বোঝাই ছিল ৬৪টি, ৩৫টি গাড়ির মধ্যে ট্যাংক বোঝাই ছিল ৭০টি, ১৬টি গাড়ির মধ্যে বিকেসি ৩২টি বোঝাইয়ের জন্য ৯৮১ নম্বর ট্যাংক স্পেশাল ট্রেনটি যাত্রার কথা ছিল সাড়ে ১০টায়, ৮০৫ নম্বর কন্টেইনার ট্রেনটি সাড়ে ১১টায় ও রসুলপুর বিকেসি স্পেশাল ট্রেনটি রাত ১টায় যাত্রার কথা থাকলেও ইঞ্জিন না থাকায় যাত্রা বাতিল করা হয়। ৮ ডিসেম্বর ৮৭টি গাড়ির মধ্যে কন্টেইনার বোঝাই ছিল ১৭৪টি, ৪৭টি গাড়ির মধ্যে ট্যাংক বোঝাই ছিল ৯৪টি, ১০টি গাড়ির মধ্যে ফুড গ্রেইন বোঝাই করা হয় ২০টি, ১০ গাড়ির মধ্যে ফার্টিলাইজার বোঝাই করা হয় ২০টি, ১৬ গাড়ির মধ্যে বিকেসি বোঝাই ছিল ৩২টি। কিন্তু ইঞ্জিন সংকটের কারণে ৮০৩ নম্বর ট্রেনটির যাত্রা বাতিল করা হয়।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের এক পরিবহন কর্মকর্তা বলেন, ইঞ্জিন সংকটের কারণে পণ্যবাহী ট্রেন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। অথচ রেলওয়েতে পণ্যবাহী ট্রেন থেকে সবচেয়ে বেশি আয় হয়। রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার বলা হলেও এখনো ইঞ্জিন সমস্যা সমাধানে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

তিনি বলেন, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে পণ্য পরিবহনে ২ হাজার সিরিজের ইঞ্জিন ব্যবহৃত হচ্ছে, যা পাকিস্তান আমলের শুরুর দিকে যুক্ত হয়েছিল। এখনো সেই পুরোনো ইঞ্জিন দিয়ে চলছে পণ্য পরিবহন। ফলে ইঞ্জিন সংকটের কারণে গ্রাহককে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ দিতে না পারায় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে প্রতি মাসে আয় কমেছে প্রায় ২ কোটি টাকা। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মিজানুর রহমান বলেন, কোরিয়া থেকে আগামী জুন মাসে ৪০টি ইঞ্জিন আসছে। এর মধ্যে ১০টি পূর্বাঞ্চলে যুক্ত হবে। এসব ইঞ্জিন এলে এ সংকট কেটে যাবে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, একটি ইঞ্জিনের ইকোনমিক লাইফ বা কার্যক্ষমতা থাকে ২০ বছর। পূর্বাঞ্চলে যে ছয়টি ২ হাজার সিরিজের ইঞ্জিন আছে সেগুলোর মেয়াদ চলে গেছে সেই ১৯৭১-৭৩ সালের দিকে। কিন্তু এরপরও ৪৮ বছর ধরে চলছে এসব ইঞ্জিন। ফলে যেখানে ঘণ্টায় ৪৫ কিলোমিটার চলার কথা, সেখানে এসব ইঞ্জিন দিয়ে চলছে মাত্র ২০ কিলোমিটার। চলন্ত অবস্থায় প্রায়ই বিকল হয়ে পড়ছে ইঞ্জিনগুলো। একটু চললেই ইঞ্জিন গরম হয়ে যায়। ইঞ্জিন সংকটের কথা স্বীকার করে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, আগামী ছয় মাস পর এ ইঞ্জিন সংকট থাকবে না। নতুন ইঞ্জিন যুক্ত হলে রেলওয়ের রাজস্ব আরো বাড়বে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close