বিশেষ প্রতিবেদক, রাজশাহী

  ০৬ ডিসেম্বর, ২০১৯

রাজশাহীর ৯০ শতাংশ দোকানে তামাকের অবৈধ বিজ্ঞাপন

রাজশাহী নগরীতে প্রদর্শিত তামাকের বিজ্ঞাপন অপসারণে তামাক কোম্পানিগুলোর পরিবেশক/স্বত্বাধিকারী বরাবর চলতি বছরের ১৭ সেপ্টেম্বর নোটিস জারি করেছিল জেলা প্রশাসন। কিন্তু রাজশাহী মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে ২ হাজার ৭৩৬টি তামাকপণ্যের ৯০ শতাংশ দোকানে তামাকের বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর আইনবহির্ভূত অবৈধ বিজ্ঞাপন, প্রণোদনা ও পণ্য প্রদর্শিত হচ্ছে। দাতাসংস্থা ‘ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস-সিটিএফকে’ এর সহযোগিতায় রাজশাহীর উন্নয়ন ও মানবাধিকার সংস্থা ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট-এসিডির রাজশাহী মহানগরীতে পরিচালিত ‘তামাকজাত পণ্যের বিজ্ঞাপন, প্রচার, প্রণোদনা ও পৃষ্ঠপোষকতা’ শীর্ষক এক জরিপের প্রতিবেদন উপস্থাপনবিষয়ক এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। গত বুধবার নগরীর একটি রেস্তোরাঁর আয়োজিত সম্মেলন কক্ষে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন লঙ্ঘনের এমন ভয়াবহ চিত্র ওঠে আসে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মহানগরীর ২ হাজার ৭৩৬টি তামাকপণ্যের বিক্রয়কেন্দ্রের (point of sales) মধ্যে দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে ৪২৪টিতে পরিচালিত জরিপের মাধ্যমে এ প্রতিবেদন ওঠে এসেছে।

এসিডির নির্বাহী পরিচালক সালীমা সারোয়ারের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন রাজশাহী জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রিফাতুল ইসলাম। এসিডির মিডিয়া ম্যানেজার আমজাদ হোসেন শিমুলের উপস্থাপনায় এ সময় বিশেষ অতিথি ছিলেন ‘অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স-আত্মা’র রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়ক শরীফ সুমন ও রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি কাজী শাহেদ। এ সময় অন্যদের মধ্যে এসিডির ডিরেক্টর (ফিন্যান্স) পংকজ কর্মকার, প্রোগ্রাম অফিসার কৃষ্ণা রানী বিশ্বাস, আনোয়ার হোসেন, প্রতিদিনের সংবাদের বিশেষ প্রতিবেদক এস এইচ এম তরিকুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে ‘তামাকজাত পণ্যের বিজ্ঞাপন, প্রচার, প্রণোদনা’ শীর্ষক জরিপের প্রতিবেদন পাওয়ার পয়েন্টে উপস্থাপন করেন এসিডির অ্যাডভোকেসি অফিসার মো. শরিফুল ইসলাম শামীম।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রিফাতুল ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে রাজশাহীতে মাঝেমধ্যেই মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়। তামাক কোম্পানির অবৈধ বিজ্ঞাপন বন্ধসহ তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নে আরো বেশি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। রাজশাহী সিটিকে ধূমপানমুক্ত শহর হিসেবে গড়ে তুলতে এ সময় সাংবাদিকদের বেশি বেশি সংবাদ পরিবেশনের অনুরোধ জানান তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে এসিডির নির্বাহী পরিচালক সালীমা সারোয়ার বলেন, প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে ধূমপানমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন। অথচ তামাক কোম্পানিগুলো তামাক আইন লঙ্ঘন করে মৃত্যুর বিপণন করছে। তামাক কোম্পানিগুলো যাতে রাজশাহীতে তাদের অবৈধ বিজ্ঞাপন ও প্রচার-প্রচারণা চালাতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আমি জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানাচ্ছি। রাজশাহীকে ধূমপানমুক্ত সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে হলে প্রথমে রাজশাহীর পদ্মাপাড়ের বিনোদনকেন্দ্রসহ অন্যান্য বিনোদনকেন্দ্রগুলো, হাসপাতাল চত্ব¡র, রেলওয়ে স্টেশন ভবন, বিমানবন্দরকে আগে ধূমপানমুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২ হাজার ৭৩৬টি তামাকপণ্যের বিক্রয়কেন্দ্রের মধ্যে ১ হাজার ৭১১ (৬২.৫৩ শতাংশ) টি বিক্রয়কেন্দ্রের কোনো লাইসেন্স নেই। নির্বাচিত তামাকপণ্যের দোকানগুলোর মধ্যে তামাক কোম্পানিগুলোর অবৈধ পোস্টার, স্টিকার, সাইনবোর্ড, ব্যানার রয়েছে ৪৯ দশমিক ৮০ শতাংশ, ডামি প্যাকেট, খালি প্যাকেট ৫২ দশমিক ০১ শতাংশ, তামাকপণ্য বিক্রয়ের বক্স, শোকেজ ১৬ দশমিক ১৭ শতাংশ, কোনো কাঠামোর ওপর ব্র্যান্ডের ছাপ দেওয়া রয়েছে ১২ দশমিক ৩ শতাংশ, ফ্লাইয়ার, লিফলেট ও পেমপ্লেট রয়েছে ২ দশমিক ৪০ শতাংশ।

বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে তামাকপণ্য প্রদর্শিত হচ্ছে (যা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী নিষিদ্ধ)- স্তরে স্তরে সাজানো তামাকপণ্য (বিক্রয়কেন্দ্রের যেকোনো স্থানে) রয়েছে ৫৫ দশমিক ৯০ শতাংশ দোকানে; ৩৬ দশমিক ১০ কতাংশ দোকানে তামাকপণ্যের ট্রে, টেবিল বা অন্যান্য উন্মুক্ত স্থানে প্রদর্শন; পাওয়ার ওয়াল (লেনদেন কাউন্টারের দেয়ালের পেছনে প্রদর্শিত সারিবদ্ধ তামাকপণ্য) পাওয়া গেছে ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ দোকানে এবং ৪ শতাংশ দোকানে তামাকপণ্যের ঝুলন্ত প্রদর্শন (ছাদ থেকে ঝুলন্ত প্যাকেট) দেখা গেছে বলে জরিপের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া সামগ্রিকভাবে মহানগরীতে তামাকের বিক্রয়কেন্দ্রে আইন লঙ্ঘনের চিত্র দেখা গেছে- আইনবহির্ভূত পণ্য প্রদর্শন ৭০ শতাংশ দোকানে; বিজ্ঞাপন/প্রণোদনা ৭৭ শতাংশ দোকানে এবং ৯০ শতাংশ দোকানে বিজ্ঞাপন, প্রণোদনা, পণ্য প্রদর্শন করতে দেখা গেছে।

উল্লেখ্য, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (সংশোধিত ২০১৩)-এর ধারা ৫ মতে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান প্রিন্ট বা ইলেকট্রনিক মিডিয়া, বই, লিফলেট, পোস্টার, ছাপানো কাগজে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন, প্রচারণা ও পৃষ্ঠপোষকতা করতে পারবেন না।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close