বিশেষ প্রতিবেদক, রাজশাহী

  ২০ নভেম্বর, ২০১৯

নতুন সড়ক পরিবহন আইন

সেবাপ্রত্যাশীর ভিড়ে হিমশিম রাজশাহী বিআরটিএ

নতুন সড়ক পরিবহন আইন কার্যকর হওয়ার পর বাংলাদেশ রোর্ড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) রাজশাহীর দফতরে উপচে পড়া ভিড় দেখা দিয়েছে। ড্রাইভিং লাইসেন্স, যানবাহনের রেজিস্ট্রেশনসহ বিভিন্ন কাজে এসে ফিটনেসপ্রত্যাশীরা হুমড়ি খেয়ে পড়েছেন। আর এই চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ। সেবা নিতে এসে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন সেবাপ্রার্থীরা। বিআরটিএ অফিস ঘিরে থাকা দুই শতাধিক দালালেরও শুরু হয়েছে রমরমা ব্যবসা। সুযোগ বুঝে তারাও কাজের ফি বাড়িয়েছেন কয়েক গুণ।

সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী বিআরটিএ কর্তৃপক্ষের কাছে আগের থেকে প্রায় ১০ গুণ বেশি আবেদন জমা পড়ছে। আগে প্রতিদিন সর্বোচ্চ ৩০০টি আবেদন পড়লেও এখন তা বেড়ে ৩ হাজারের মতো পড়ছে। ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া কিংবা যানবাহনের কাগজপত্র নবায়ন করতে হঠাৎই বেড়েছে আবেদনের হিড়িক। সড়ক পরিবহনের নতুন আইন কার্যকরে প্রশাসনের বাড়তি নজরদারির কারণে দীর্ঘদিন পর আলস্য ভেঙে এসেছেন এসব সেবাপ্রত্যাশী।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো বিআরটিএতেই ড্রাইভিং লাইসেন্সপ্রত্যাশীদের ভিড় সবচেয়ে বেশি। দফতরের প্রতিটি কাউন্টারেই লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন হাজারো সেবাপ্রত্যাশী। রাজশাহীর বিআরটিএ দফতরে যেন পা ফেলার জায়গা নেই। তবে অনেকেই লম্বা লাইনে দাঁড়ানোর ভোগান্তি থেকে বাঁচতে দালালদের শরণাপন্ন হচ্ছেন।

বিআরটিএ রাজশাহী কার্যালয়ে লাইসেন্স করতে পুঠিয়া উপজেলার আসা দক্ষিণ কোরিয়া প্রবাসী হাবিব প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘দুই মাসের ছুটিতে এসেছি। এসে দেখি আমার ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। আবার জানলাম, নতুন আইনে জরিমানার পরিমাণ বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই জরিমানা দেওয়ার চেয়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করাই ভালো। কিন্তু এখানে এসে দেখছি, দালালদের সহায়তা ছাড়া কোনো কাজই নিয়মমাফিকভাবে করা সম্ভব নয়। আর দালালরাও এই নতুন আইন কার্যকরের সুযোগে পাঁচ হাজার টাকা নিয়ে নিল। আমিও ভোগান্তির কবল থেকে বাঁচতে দিতে বাধ্য হলাম।’

মালিকানা হস্তান্তর করতে আসা নাটোরের বাগাতিপাড়া এলাকার মোস্তাফিজ বললেন, ‘নতুন আইন কার্যকরের কারণে সড়কের ঝামেলা এড়াতে ভিড় বেড়েছে বিআরটিএ অফিসে। সময়ও লাগছে অনেক। আর এই সুযোগে বিআরটিএ অফিসের দালালরা যেন মগের মুল্লুক পেয়েছেন। অধিক টাকা ছাড়া কেউ কোনো কথা-ই বলছেন না। সড়কে যেমন সার্জেন্টরা কঠোর ভূমিকা পালন করছেন তেমনি বিআরটিএ অফিসেও দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর হয়ে অভিযান পরিচালনা করা দরকার।’

সার্বিক বিষয়ে রাজশাহী বিআরটিএ দফতরের সহকারী পরিচালক এস এম কামরুল হাসান গত রোববার বিকালে প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, নতুন সড়ক আইন কার্যকরের কারণে আগের থেকে প্রায় ১০ গুণ সেবাপ্রত্যাশীর সংখ্যা বেড়েছে, কিন্তু আমাদের লোকবল বাড়েনি। দীর্ঘদিন থেকে লোকবল সংকট রয়েছে। কিন্তু সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেই। আর এখন বাড়তি চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছি। দক্ষ জনবল নিয়োগের মাধ্যমেই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।

দালালদের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের ক্যাপাসিটি অনুযায়ী ৩০ সেবাপ্রত্যাশীর সেবা প্রতিদিন দেওয়া সম্ভব। যার বিপরীতে আবেদন পড়ছে প্রায় ৩ হাজারের মতো। আমাদের বর্তমান জনবল দিয়ে প্রতিদিন ৩০০ সেবাপ্রত্যাশীর সেবা দিয়ে আসছি। কিন্তু এখন এই জনবল দিয়ে ৩ হাজার ব্যক্তিকে কীভাবে সেবা দেব! যে কারণেই দালালরা এই সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছেন। আগে দক্ষ জনবল নিয়োগের জন্য আপনারা অবদান রাখেন, এরপর সফল হলে দালালমুক্ত দফতর উপহার পাবেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close