চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

বাপ-দাদার পেশা ধরে রেখেছেন তারা

ফজরের আজান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুম ভাঙে তাদের। তড়িঘড়ি প্রস্তুত হয়ে চলে আসেন রেলওয়ে স্টেশনে। সময় চলে যায়- এক ঘণ্টা, দুই ঘণ্টা এমনকি সারা দিন। হাতে আসে সামান্য টাকা। কোনো দিন এক টাকাও না। তবুও তারা এই পেশায় বছরের পর বছর। কারণ বাপ-দাদার পেশা যে ছাড়তে পারছেন না। তারা রেলওয়ের স্টেশনের কুলি-মজুর। বর্তমানে এই পেশা অনেকটা বিলুপ্তির পথে। চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে ১০ বছর আগেও শত শত কুলি-মজুর মালামাল টানতেন যাত্রীদের। কিন্তু এখন তাদের সংখ্যা একেবারে হাতেগোনা।

২৭ বছর ধরে কাজ করা বেলাল উদ্দিন নামে এক মজুর জানালেন, স্টেশনে কাজ করেন তিনিসহ ২৩ জন। কেন এই পরিস্থিতি? নিশ্বাস ছেড়ে তিনি বললেন, এই পেশায় এখন ভাত জোটে না, আয় নেই। ফজরের আজানের পর এসেছি। চাঁদপুর থেকে আসা মেঘনা এক্সপ্রেসের যাত্রীর ব্যাগ গাড়িতে তুলে দিয়ে ১০০ টাকা আয় হয়েছে। এখন দুপুর ১২টা। আয় ওই ১০০ টাকাই।

১৯৯২ সাল থেকে কাজ করা বেলাল উদ্দিনের তিন মেয়ে এক ছেলে। বাড়ি নোয়াখালী সদরে। তিনি বলেন, ঈদসহ বিশেষ দিনগুলোতে আয় একটু বেশি হয়। এছাড়া কুলিগিরির ফাঁকে অন্যান্য কাজও করি। বাপ-দাদার পেশাতো সহজে ছাড়তেও পারি না। তাই এই পেশায় রয়ে গেছি। রেলওয়ে স্টেশনের মুখে এক যাত্রী তার মালামাল নেওয়ার জন্য একজনকে ডাক দিলেন। সঙ্গে সঙ্গে হাজির তিন-চারজন। এবার ওই যাত্রী তাদের সঙ্গে দর কষাকষি করলেন। সবচেয়ে কম ১০০ টাকায় ওই যাত্রীর মালামাল টানতে রাজি হলেন মো. মামুন নামে এক কুলি।

মালামাল তুলে নেওয়ার পর মামুন বলেন, সকাল থেকে ৫ ঘণ্টা অপেক্ষার পর এ-ই প্রথম কাস্টমার পেলাম। কোনো দিন ৩০০ আর কোনোদিন এক টাকাও আয় হয় না। তবে ঈদে দিনে ১ হাজার টাকাও আয় হয়।

তিনি বলেন, বাসা ভাড়ায় থাকতে হয় না। রেলওয়ে স্টেশনে থাকতে পারি। এখানেই গোসলসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজ সারতে পারি। এ জন্য বাড়তি খরচ লাগে না।

রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার আবুল কালাম আজাদ বলেন, তাদের মধ্যে শৃঙ্খলা আছে। যাত্রীদের পক্ষ থেকেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। এখানে যারা কাজ করেন, সবাই সবাইকে চেনেন। এছাড়া স্টেশনে কাজ করার আগে আমাদের থেকে অনুমতি নিতে হয়। নির্দিষ্ট ড্রেসও আছে তাদের।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close