গাজীপুর প্রতিনিধি

  ০৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

ডেঙ্গু মোকাবিলায় গাসিক মেয়রের উদ্যোগ

গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্নস্থানে এডিস (ডেঙ্গু) মশার সংক্রামণ শুরু হলে তা থেকে পরিত্রাণের জন্য গাজীপুরের সিটি করপোরেশনের (গাসিক) মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম এডিস মশা ও এর লার্ভা নিধনের জন্য উদ্যোগ নেন। ব্যক্তিগত উদ্যোগে ও অর্থায়নে তিনি এডিস মশা ও লার্ভা নিধনে প্রথমে ২৫ টন ওষুধ আমদানি করেন। বর্তমানে তার কাছে ২০০ টন ওষুধ মজুদ রয়েছে। এসব ওষুধ তিনি বিনামূল্যে গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও জেলাগুলোতে বিতরণ করছেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, আমদানি করা এসব ওষুধ মেয়র জাহাঙ্গীর আলম তার গাজীপুর সিটি কপোরেশনের ছয়দানা নিজস্ব বাসভবনে মজুদ রেখেছেন। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়Ñ মেয়রের বাসভবন এখন যেন ডেঙ্গু নিধনের ওষুধের কারখানা। এখান থেকে তিনি দেশের বিভিন্নস্থান থেকে আসা লোকজন এবং প্রতিষ্ঠানকে বিনামূল্যে ওষুধ সরবরাহ করেন।

মেয়র জানান, বর্তমানে তার কাছে ২০০ টন ওষুধ মজুদ আছে। এ মজুদ ওষুধ দিয়ে সেপ্টেম্বর মাস সারা দেশে মশা ও লার্ভা নিধনে ব্যবহার করা যাবে।

এক সাক্ষাৎকারে মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমাদের দেশে বিশেষ করে ঢাকা ও এর আশপাশের সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় শহর ভিত্তিক মানুষের মধ্যে আতঙ্ক আছে এডিস (ডেঙ্গু) মশার কামড়ে মানুষের মৃত্যু হয়। অনেকে মৃত্যুবরণও করেছেন। অনেকে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। এসব বিষয় চিন্তা করে এবং দেশের মানুষের নিরাপত্তার কথা ভেবে এডিস (ডেঙ্গু) মশা ও এর লার্ভা নিধনের জন্য পোল্যান্ডের একটি ব্যান্ড (ওষুধ) সিঙ্গাপুরের সহযোগিতায় বাংলাদেশে এনেছি। প্রথমে ২৫ টন ও তারপর ৫০ টন, ১০০ টন। এখন আমার (তার) কাছে ডেঙ্গু মশা মারার মতো ও এর লার্ভা নিধনের জন্য ২০০ টন ওষুধ মজুদ আছে। প্রত্যেকে যাতে অফিসে ব্যবহার করতে পারে, সে জন্য স্প্রে নিয়েছি। পানিতে ব্যবহার করার আন্তর্জাতিক মানের ট্যাবলেট আনা হয়েছে। এ ট্যাবলেট দিয়ে পানিকে জিরো করা যায়। দেশের প্রতিটি সিটি করপোরেশন ও পৌরসভা আগামী এক মাস এই ওষুধ ব্যবহর করতে পারবে।

তিনি বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি আশপাশের নগরগুলোকে সহযোগিতা করতে চাই। যেকোনো লোক বা প্রতিষ্ঠান যোগাযোগ করলে আমার গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ডেঙ্গু মশা ও এর লার্ভা জিরো করার এ ওষুধ বিনা টাকায় দেওয়া হবে। এ ওষুধগুলো আনা হয়েছে ব্যক্তিগত উদ্যোগে। আল্লাহ আমাকে সামর্থ্য দিয়েছেন, আমি উছিলা হিসেবে মানুষকে সহযোগিতা করতে চাই। সবার সহযোগিতায় প্রত্যেকটি নাগরিক যেন নিরাপদে থাকে, এ জন্য উদ্যোগ নিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, এ ওষুধে ডেঙ্গুর মশা ও এর লার্ভা দুটিই জিরো হয়। এ ওষুধ পরিবশসম্মত। ইতিমধ্যে দেশের সাতটি সিটি করপোরেশনে, ১৪৫টি পৌরসভায় এবং ঢাকা মেডিকেলসহ ঢাকার কয়েটি স্থানে এ ওষুধ দেওয়া হয়েছে। আশপাশের জেলাগুলো থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তাদের ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। কারো ওষুধের প্রয়োজন থাকলে যোগাযোগ আহ্বান জানিয়ে বলেন, সবাইকে ওষুধ দিয়ে সহযোগিতা করতে চাই। এতে কোনো টাকা লাগবে না। আমরা আপনাদের সহযোগিতা করব। নাগরিক হিসেবে এবং জনপ্রতিনিধি হিসেবে অন্য সবাইকে সহযোগিতা করতে চাই। মানুষ মানুষের জন্য সে হিসেবে এ কাজটি করতে চাই।

তিনি বলেন, যতটুকু ওষুধ মজুদ আছে, তা দিয়ে সারা বাংলাদেশের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত চলবে। পরে যদি আরো ওষুধ লাগে তবে কোম্পানির সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা ওষুধ দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছে। কোম্পানির ডাক্তার আগামী কয়েক দিনের মধ্যে আসবেন। সেমিনারের মাধ্যমে আমাদের প্রতিটি নাগরিক যেন নিরাপদ থাকে, সে হিসেবে সচেতনতামূলকভাবে কাজগুলো শুরু করেছি। ভবিষ্যতে আরো যাতে আধুনিকভাবে করা যায়, সব মানুষ যেন বুঝে, সে জন্য এ কাজগুলো হাতে নেওয়া হয়েছে। এসব ওষুধে যারা বিশেষজ্ঞ, তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে এ ওষুধ আনা হয়েছে। এ ওষুধ মশার জন্য তৈরি করা হয়েছে। মাছ এবং ব্যাঙ সেগুলো যেন মৃত্যুবরণ না করে, গাছপালা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, পরিবেশের ওপর আঘাত না আসে। কারণ পরিবেশ রক্ষা করে আমাদের চলতে হবে। আমি মনে করি এ ওষুধ সবার জন্য নিরাপদ।

গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) প্রণয় ভূষণ দাস জানান, বর্তমানে গাজীপুরে ডেঙ্গুর প্রকোপ কিছুটা কমে এসেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ হাসপাতালে ৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। আগে প্রতিদিন ভর্তির এ সংখ্যা বেশি ছিল। গত ২৮ জুন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজন এ হাসপাতালে ভর্তি হন। এরপর থেকে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত এ হাসপতালে ৫১৫ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২০ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়েছে। বর্তমানে ৩৪ জন ভর্তি রয়েছেন। বাকিরা চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে আরএমও বলেন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে দুবার এ হাসপাতাল এলাকায় মশার ওষুধ স্প্রে করা হয়েছে। এ ছাড়া পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি প্রতিদিন হাসপাতালের উদ্যোগে ব্লিচিং পাউড়ার ছিটানো হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close