চট্টগ্রাম ব্যুরো

  ০৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

নানা জটিলতায় ৩২৫০ কোটি টাকার প্রকল্প

বিমানবন্দর পর্যন্ত ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ গতি পাচ্ছে না

চট্টগ্রামে লালখানবাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’ ফ্লাইওভার নির্মাণ নানা কারণে দীর্ঘ সূত্রতায় আটকে আছে। ৩ হাজার ২৫০ কোটি টাকার ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ বৃহৎ প্রকল্পটি চট্টগ্রামের উন্নয়নের স্বার্থে সরকার গ্রহণ করেছে। দ্রুতগতিতে ফ্লাইওভার নির্মাণ না হওয়ার কারণে বিমানবন্দর পর্যন্ত মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। যানজটে আটকা পড়ে অনেক বিমান যাত্রী সঠিক সময়ে বিমান ধরতে পারে না। একদিকে বন্দর, অন্যদিকে চট্টগ্রাম ইপিজেডের কারণে এ সড়কে প্রায় সারা দিনই যানজট লেগে থাকে। নগরবাসী দ্রুত এ জট থেকে মুক্তি চায়।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, প্রকল্পটির বারিক বিল্ডিং থেকে সল্টগোলা পর্যন্ত তিন কিলোমিটার অংশের অ্যালাইনমেন্টটির ব্যাপারে সুরাহা হয়েছে। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের (চবক) উচ্চতরপর্যায়ের প্রকৌশলীদের দফায় দফায় বৈঠকের পর এর একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করা হয়েছে। প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট উভয় সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।

চট্টগ্রাম দেশের প্রধান বন্দরকেন্দ্রিক নগরী ও বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে বিবেচিত। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে ইতিমধ্যে প্রতিষ্ঠিত শিল্পাঞ্চল ও নির্মীয়মাণ ইকোনমিক জোনের এ নগরী দেশের প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকা-ের কেন্দ্রবিন্দু। কোনো ধরনের যানজট ছাড়াই যাতে বিনিয়োগকারী দেশি-বিদেশি শিল্পোদ্যোক্তারা চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সোজা মূল শহরে ৩০ মিনিটে পৌঁছাতে পারে, চট্টগ্রামের উন্নয়নে গৃহীত বড় বড় প্রকল্পের মধ্যে সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ অন্যতম ‘এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’ প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য। চট্টগ্রামে তথা দেশের সর্ববৃহৎ সাড়ে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এক্সপ্রেসওয়ের কাজকে মূল নকশা অনুযায়ী বর্তমানে ৪টি অংশে ভাগ করে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের অ্যালাইনমেন্টের মধ্যে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিউবো) ৩৩/১১/০.৪ কেভি পোল, লাইন উপকেন্দ্র ও রোড ক্রসিং লাইন না সরানোর কারণে ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের বিভিন্ন অংশে পাইলিং ও ফাউন্ডেশনের কাজ করা যাচ্ছে না। এর ফলে কাজের গতি মন্থর হতে চলেছে। এ ক্ষেত্রে সিডিএর পক্ষ থেকে বিউবোকে তালিকাভুক্ত ঠিকাদার নিয়োগ করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সুপারভিশনে সম্পন্ন করার জন্য পত্র দেওয়া হলেও এ ব্যাপারে উভয় সংস্থা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি। ফলে প্রকল্পটিতে ধীরগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মূল শহর থেকে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর অভিমুখে এটিই বর্তমানে একমাত্র সড়ক। চলমান এ প্রকল্পের কাজ চলার সময় রাস্তায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়, এ জন্য কাজেও ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এলাকার বিপরীত অংশে বর্তমানে সিপিইজেডের সঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোডের সংযোগটির কাজ চলছে। তবে এটি সম্পন্ন হলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ করার সময় সল্টগোলা হতে সিমেন্ট ক্রসিং অংশে যানজট অনেকাংশে কমে যাবে বলে তারা আশা করছেন। সর্বশেষ জানা যায়, সল্টগোলা ক্রসিং থেকে সিমেন্ট ক্রসিং পর্যন্ত সাড়ে তিন কিলোমিটার অংশের সাব-সয়েল ইনভেস্টিগেশনের কনফার্মিং টেস্ট সম্পন্ন হয়েছে। ওই এলাকায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ডিটেইল্ড ডিজাইন সম্পন্ন হয়েছে বলে প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে। সিমেন্ট ক্রসিং থেকে সি-বিচ পর্যন্ত সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার অংশে এ পর্যন্ত ৩২০টি পাইল, ২০টি পাইল ক্যাপ ও ২০টি পিয়ারের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। ওই এলাকার নিরাপত্তা ফেন্সিংয়ের বাইরে প্রয়োজনীয় দুই লেন রাস্তা রাখার জন্য প্রায় সাড়ে ৫ কিলোমিটার কার্পেটিংসহ রাস্তা প্রশস্তকরণ সমাপ্ত হয়েছে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, বারিক বিল্ডিং থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পর্যন্ত তিন কিলোমিটার ফ্লাইওভারের অ্যালাইনমেন্টটি চট্টগ্রাম বন্দরের পাশ দিয়ে যাওয়ায় এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্যের (প্রকৌশল) তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালককে অন্তর্ভুক্ত করে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের প্রধান প্রকৌশলীকে আহ্বায়ক করে ৯ সদস্যের এ কমিটি কাজ শুরু করে। গত ১০ এপ্রিল কমিটির সভায় অ্যালাইনমেন্টটি পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক মতামত দেওয়ার জন্য উভয় সংস্থার সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ড্রয়িং ডিজাইন লে-আউটের বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক মতামত দেওয়ার নিমিত্তে সিডিএ, বন্দর কর্তৃপক্ষ, পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ডিজাইনার ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির মতামত অনুযায়ী ওই ৩ কিলোমিটার অংশের কাজ শুরুর বিষয়টি বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন বলে জানা গেছে।

এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর যেহেতু দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর, সে জন্য এই অংশের তিন কিলোমিটার অ্যালাইনমেন্টটি আমরা ভালো করে দেখেশুনে কাজে হাত দেব।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রকল্পটির পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘বারিক বিল্ডিং থেকে সল্টগোলা অংশের অ্যালাইনমেন্টের বিভিন্ন খুঁটিনাটি আমরা পরীক্ষা করে দেখছি। এটি দ্রুত শেষ করতে পারব আশা করছি।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close