রিয়াজ মুন্না, চবি

  ০২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

চবি ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে

*নিরাপত্তা দফতরের প্রধান অসামরিক ব্যক্তি *কর্মীদের বেশির ভাগ বেসামরিক ও অদক্ষ

চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় ক্যাম্পাসের আয়তন বিশাল। ২১০০ একর। পাহাড় ও গাছগাছালি ঘেরা এই ক্যাম্পাসে সার্বিক নিরাপত্তা ভেঙে পড়েছে। এই বিশ^বিদ্যালয়ের নিরাপত্তা দফতরের আগের সেই দক্ষতা নেই। এই দফতরের দায়িত্বে আছেন এ বিষয়ে এক্কেবারেই যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণহীন এক কর্মকর্তা। যার কোনো সামরিক প্রশিক্ষণ ও নিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলার পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। তিনি কাজ চালাচ্ছেন নামকাওয়াস্তে। অপেশাদার নিরাপত্তা কর্মীদের দিয়ে। এ কারণে গোটা ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা এখন বড়ই হুমকিতে রয়েছে।

জানা গেছে, নয়নাভিরাম সবুজ পাহাড় ও প্রকৃতিঘেরা সুবিশাল ক্যাম্পাস চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের। এই উচ্চ বিদ্যাপীঠের সামগ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বপ্রথম প্রকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘নিরাপত্তা দফতর’। প্রতিষ্ঠালগ্নে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরাপত্তার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়ে আসছে বলে এই দফতরটি প্রতিষ্ঠা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শুরু থেকে দক্ষ প্রশিক্ষক দ্বারা পরিচালিত হলেও বর্তমানে নিরাপত্তা কর্মীদের খেয়ালিপনা, অযোগ্যতা ও প্রশিক্ষণের অভাবে প্রতিনিয়ত ব্যাহত হচ্ছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বাড়ছে নিরাপত্তাহীনতা।

সাম্প্রতি চুরি, ছিনতাই, বহিরাগত উৎপাত এবং ক্যাম্পাসের সম্পদ পাচারসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক নিরাপত্তা বিঘিœত হচ্ছে শুধুমাত্র নিরাপত্তা দফতরের কারণে। যার ফলে হুমকির মুখে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম। এতে ব্যাহত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা। জানা যায়, প্রতিষ্ঠার শুরুতে মাত্র একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও কিছু প্রহরীর মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে চবির নিরাপত্তা দফতরটি। সেনাবাহিনীর মেজর পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা মেজর গোলাম কিবরিয়ার অবসরের পর ভারপ্রাপ্ত দিয়েই চলছে এ নিরাপত্তা দফতরের কার্যক্রম। বর্তমানে ডেপুটি রেজিস্ট্রার পদমর্যাদার একজন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন এই দফতরটিতে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্ডিন্যান্সে নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক এবং বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের অবসরপ্রাপ্ত জওয়ানদের নিয়োগ দেয়ার বিধান থাকলেও কিছু সাধারণ মানের সৈনিক দিয়েই দফতরটি পরিচালনা করা হচ্ছে, যাদের প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার ঘাটতি রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, নিরাপত্তা দফতরের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. বজল পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরে কর্মরত থাকাকালে সার্টিফিকেট কেলেঙ্কারির দায়ে তাকে লঘুদন্ড দিয়ে নিরাপত্তা দফতরের দায়িত্বে বদলি করা হয়। অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী যেখানে নিরাপত্তা দফতরের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করার কথা একজন সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর পদমর্যাদার ব্যক্তির, সেখানে সার্টিফিকেট কেলেঙ্কারির দায়ে অপসারিত একজন ব্যক্তিকে কীভাবে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এ ছাড়া নিরাপত্তা দফতরের প্রহরীরা অধিকাংশই জোবরা গ্রামের অথবা নিকটস্থ এলাকার অধিবাসী। ফলে স্থানীয়রা যখন পাহাড়ে আগুন দেয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের গাছ কেটে নেয় অথবা অন্যান্য বনজ সম্পদ পাচার করে তখন স্বজনপ্রীতির কারণে এসব নিরাপত্তারক্ষী যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারে না। এতে প্রতিনিয়ত ব্যাহত হচ্ছে চবির নিরাপত্তা। হুমকির মুখে পড়ছে প্রশাসনিক কার্যক্রম। এমনকি অনেক নিরাপত্তাকর্মী মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলেও নানা সময়ে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মেজর গোলাম কিবরিয়া এ দফতরের দায়িত্বে থাকাকালীন অস্ত্রধারী প্রহরী ছিল ২০ জন। তাদের প্রতিদিন সকালে প্রশিক্ষণ প্রদানের পাশাপাশি সাধারণ প্রহরীদের নিয়মিত প্যারেড করাতেন। যার কারণে তখন নিরাপত্তা ছিল জোরদার। তখন প্রহরীরাই পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা সমাধান করতে তৎপর ও সক্ষম ছিল। বর্তমানে চাকরিরত নিরাপত্তা কর্মীদের অধিকাংশই বেসামরিক এবং অদক্ষ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close